বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

লকডাউনের প্রভাব :ভালো নেই স্বল্প আয়ের মানুষ

স্বদেশ ডেস্ক
  ২২ এপ্রিল ২০২১, ০০:০০

করোনার প্রথম ঢেউয়ের প্রভাব কাটতে না কাটতেই শুরু হয়েছে দ্বিতীয় ঢেউ। গত বছরের ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটির ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেই এখনও বিপর্যস্ত অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। ওই সময় দেশে দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ হয়েছিল। নিম্নআয়ের মানুষ যখন সেই ধাক্কা সামলে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন, তখনই শুরু হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব সামাল দিতে গত ৫ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহের বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। এর পরও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃতু্য বেড়ে যাওয়ায় গত ১৪ এপ্রিল থেকে সার্বিক কার্যাবলি ও চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। যাকে বলা হচ্ছে, সর্বাত্মক লকডাউন। এতে জরুরি পণ্য ও সেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত কার্যক্রমের বাইরে সবকিছু বন্ধ রাখা হয়। এই লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে। এতে দৈনিক আয়ের মানুষের ওপর নির্ভরশীল পরিবারগুলোর টিকে থাকার সংগ্রাম আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় নিম্নআয়ের অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে নতুন করে দুর্ভাবনায় পড়েছেন।

এ বিষয়ে আমাদের বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি দীপঙ্কর অপু জানিয়েছেন, লকডাউনে চরম আর্থিক সংকটে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তরা। লকডাউনের অজুহাতে বাজারে বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজির দাম। অন্যদিকে ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ থাকলেও ব্যাংক ও এনজিওর ঋণের কিস্তি আদায় চালু থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এসব মানুষ।

গত বছর সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে নিম্নআয়ের মানুষ কিছু সাহায্য-সহযোগিতা পেলেও এবার লকডাউনে কোনো কিছু এখন পর্যন্ত তাদের ভাগ্যে জোটেনি। তাই এ সব নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ ঘরবন্দি থেকে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।

এদিকে সরকার ঘোষিত সাত দিনের কঠোর লকডাউন শেষে আবার সাত দিনের শুরু হয়েছে। লকডাউনের কারণে স্থানীয় বাজারে দ্রব্যমূল্যেরও ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা গেছে।

বোয়ালমারী বাজারের সেলুন ব্যবসায়ী অসীম শীল বলেন, এনজিও থেকে লোন নিয়ে ব্যবসা করে পরিবার নিয়ে চলছেন। চলমান লকডাউনে গত কয়েকদিন ধরে দোকান-পাট বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় দোকান ভাড়া ও সংসার চালাতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

বুধবার বোয়ালমারী বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচাবাজারে আলু, উচ্ছে, ঢেঁড়স, শাক-সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের দামও লকডাউনের অজুহাতে বেড়ে গেছে।

আমাদের বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জহুরুল ইসলাম জানান, করোনার প্রাদুর্ভাবে ছুটি আর বিধিনিষেধ আরোপ করায় থমকে যাচ্ছে সিরাজগঞ্জের বেলকুচির তাঁত শিল্প সমৃদ্ধ স্বল্প আয়ের খেটে খাওয়া মানুষের জীবন প্রণালী। তারা এখন সংসারের ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন। তারমধ্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও চাহিদার তুলনায় নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহের ঘাটতি তো রয়েছেই।

মঙ্গলবার উপজেলার হাট-বাজার ঘুরে স্বল্প ও নিম্নআয়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে হতাশা আর অনিশ্চয়তার কথা। তাঁত শ্রমিক রাজ্জাক ও হান্নান জানান, লকডাউনে কাজ করতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন। আয় রোজগার এভাবে বন্ধ হয়ে গেলে পরিবারকে কি খাওয়াবেন এবং এনজিও ঋণের কিস্তি কিভাবে পরিশোধ করবেন সেই চিন্তায় কোনো কুলকিনারা পাচ্ছেন না।

কাঁচামাল ব্যবসায়ী আলম জানান, বাজারে আগে যেমন মানুষ আসত, করোনার জন্য আসছে না। শাক-সবজিও আড়তে আগের মতো আসছে না। সীমিত পরিসরে আসলেও দাম প্রায় দ্বিগুণ।

এদিকে, কিন্ডারগার্টেন স্কুল, কোচিং সেন্টার দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকায় এ সব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক কর্মচারীরা দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনিসুর রহমান জানান, সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো কিছু আসেনি, তবে ব্যক্তিগতভাবে কিছু সহযোগিতা করা হবে।

আমাদের ধর্মপাশা (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি মিঠু মিয়া জানিয়েছেন, রিকশাচালক, পরিবহণকর্মী, হকার, দিনমজুর, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, কামার, জেলে, দর্জি, বিভিন্ন ধরনের মিস্ত্রি, নির্মাণ শ্রমিকসহ দৈনন্দিন আয়ের ওপর নির্ভরশীল মানুষ কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন না। কাজ থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে ভ্যানচালক, ঠেলাগাড়িচালক, রংমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি, তালা-চাবির মিস্ত্রি, সাইকেল-ভ্যান, রিকশা ও মোটর গ্যারেজের কর্মীদেরও।

ধর্মপাশা উপজেলার বাদশাগঞ্জ বাজারে পান বিক্রেতা জন্টু মিয়া জানান, দেশে লকডাউন দেওয়ার প্রথম কিছু দিন দোকান বন্ধ ছিল। জমানো টাকা সে সময় খরচ হয়ে গেছে। এখন আবার কিছু সময়ের জন্য দোকান খোলা থাকলেও কোনো কাস্টমার নেই। তিনি বলেন, পান বিক্রি করে সংসার চলে। আয় বন্ধ থাকলে সংসার চালানো কষ্টকর।

গাছতলা বাজার ফ্লেক্সি লোডের ব্যবসায়ী রফিক মিয়া বলেন, লকডাউনের কারণে শহরে মানুষ কম বের হচ্ছে, তাই কাস্টমারও কম। ফুটপাতে বসা দোকানি জসিম বলেন, করোনার ভয়ে ব্যবসা না করলে না খেয়ে মরতে হবে। সরকার থেকেও সাহায্য দেওয়া হয় না। রিকশাচালক সজেদ নুর বলেন, শহরে মানুষ কম। যারা বের হন তারাও রিকশায় উঠতে চান না। রিকশার মালিককে কি দেবেন আর নিজে কি নেবেন। অনেক দিন পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হয়।

একই অবস্থা বিভিন্ন শ্রেণি পেশার নিম্নআয়ের মানুষদের। লকডাউনের কারণে আয় রোজগার বন্ধ থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে দুর্দিনে পড়েছেন। সরকারিভাবে সহায়তা প্রদানের দাবি তাদের।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে