বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি

জমে উঠেছে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা

স্বদেশ ডেস্ক
  ১১ মে ২০২১, ০০:০০

আর মাত্র দুই দিন পর মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। ঈদকে সামনে রেখে কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন মানুষ। বিক্রেতারাও ব্যস্ত তাদের বাহারি পণ্যের মাধ্যমে ক্রেতা আকর্ষণে। তবে মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর দোকান খোলা ও মার্কেটে স্বাস্থ্যবিধি মানতে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর সতর্কতা জারি করা হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই মানছেন না তা। নওগাঁর পত্নীতলা, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর ও দিরাই এবং পটুয়াখালীর দুমকির বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে এসে বিস্তারিত জানাচ্ছেন আমাদের প্রতিনিধিরা :

নওগাঁর পত্নীতলা থেকে বুলবুল চৌধুরী জানিয়েছেন, উপজেলায় পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শেষ মুহূর্তে জমে উঠছে ঈদ বাজার। করোনাভাইরাস রোধে নানা শর্তে মার্কেট খোলার অনুমতি দিলেও স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না কেউই। করোনাভীতি উপেক্ষা করে ক্রেতাদের ঢল নেমেছে মার্কেট ও বিপণি বিতানগুলোতে। অনেকেরই মুখে নেই মাস্ক। কারও কারও থুতনিতে বা কানে ঝুলছে। দূরপালস্নার যান চলাচল বন্ধ থাকলেও অভ্যন্তরীণ গাড়ির চাপ বেড়ে যাওয়া ও মানুষের অবাধ চলাফেরায় প্রতিদিনই স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে এই উপজেলায়। উপজেলা সদরের নজিপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার বিভিন্ন মার্কেট, মধইল বাজার এলাকার দোকানসহ অন্যান্য বাজার ঘুরে দেখা যায়, নানা বয়সি ক্রেতার ভিড়। পা ফেলার মতো জায়গাও নেই কোথাও। নারী-পুরুষের সঙ্গে রয়েছে শিশু-কিশোররাও। ক্রেতারা একে অন্যের গা ঘেঁষে কাপড়, কসমেটিকস, জুতাসহ বিভিন্ন পণ্য কেনাকাটা করছেন। অনেকেরই মুখে নেই মাস্ক। হাট-বাজারসহ রাস্তার ফুটপাতে বসা দোকানে নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষও কেনাকাটা করছেন।

ব্যবসায়ীরা জানান, এবার অনেক দেরি করে কেনাকাটা শুরু হয়েছে। গত বছরের ঈদে করোনার কারণে খুব একটা বেচাকেনা না হলেও এবারে কৃৃষকের ঘরে নতুন ধান ওঠায় কেনাকাটায় উৎসুক হয়ে উঠেছে সব শ্রেণির মানুষ।

নজিপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী সামসুল আলম জানান, ক্রেতার চাপে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। মার্কেটের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে না করোনাকাল যাচ্ছে। এভাবে ক্রেতা আসলে রেকর্ডসংখ্যক বিক্রি হবে, তাতে দীর্ঘদিন যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তাও কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। কাপড়ের দোকানে আসা গৃহবধূ শারমিন আক্তারকে সন্তান নিয়ে মার্কেটে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত বছর ঈদে কিছু কেনাকাটা করতে পারেননি। এবার না করলেই নয়। বাসায় কেউ না থাকায় বাধ্য হয়ে সন্তানকে সঙ্গে নিয়েই আসতে হয়েছে।

নজিপুর বাসস্ট্যান্ড বণিক কমিটির সভাপতি শহিদুল আলম বেন্টু বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বিধিনিষেধ মানতে তারা প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে পরামর্শ দিয়েছেন। ক্রেতাদেরও এ বিষয়ে অনুরোধ করছেন। ইউএনও মো. লিটন সরকার জানান, সরকারি বিধিনিষেধ মেনে মার্কেট খুলতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেউ তা অমান্য করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর থেকে জুয়েল আহমদ জনিয়েছেন, সুনামগঞ্জের প্রবাসী অধু্যষিত উপজেলা জগন্নাথপুরে এ বছর বোরো ফসল ভালো হওয়ায় জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা। সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে দোকান খোলা এবং ক্রেতাদের কেনাকাটা করতে বললেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। কেনাকাটার সময় অভিভাবকরা সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছেন শিশুদেরও। অথচ এই উপজেলায় রোববার পর্যন্ত একজনের মৃতু্যসহ ২২১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। রোববার উপজেলা সদরের বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। অনেকের মুখে মাস্কও ছিল না।

বিক্রেতারা বলছেন, লকডাউনের কারণে রোজার শুরুতে মার্কেট বন্ধ ছিল। মার্কেট খোলার অনুমতি পাওয়ার পর প্রথম দিকে বিক্রিও কম ছিল। কিন্তু এই কয়েকদিন পুরোদমে তারা পণ্য বিক্রি করতে পারছেন।

সুনামগঞ্জের দিরাই থেকে মুজাহিদুল ইসলাম সর্দার জানিয়েছেন, ঈদকে সামনে রেখে করোনার মধ্যেও ধুম কেনাকাটা চলছে সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে বেচাকেনার সরকারি নির্দেশনা থাকলেও তা উপেক্ষিত হচ্ছে। লকডাউনের মধ্যেই দোকান খোলার নির্দেশনায় প্রত্যেকটি দোকানেই দেখা গেছে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। এতে ব্যবসায়ীরা সন্তুষ্ট হলেও করোনার ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল। দিরাই পৌরসদরে দেখা যায়, প্রতিটি দোকানে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে বেচাকেনা। বিশেষ করে কাপড়, তৈরি পোশাক, জুতা ও প্রসাধনীর দোকানগুলোতে সবচেয়ে বেশি ভিড় চোখে পড়েছে। এসব দোকানে নারী ও শিশু ক্রেতার সংখ্যাই বেশি।

পটুয়াখালীর দুমকি থেকে আনিসুর রহমান মিন্টু জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি উপেক্ষা করেই পটুয়াখালীর দুমকিতে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে ঈদ বাজারের ব্যস্ততা। বিপণি বিতান, কসমেটিক্স ও পোশাকের দোকানে ঠাসাঠাসি করে পছন্দের পণ্য কিনছেন ক্রেতারা। সরকারি বিধিনিষেধের কোনো তোয়াক্কাই করছেন না কেউ।

জানা গেছে, ১৫ রমজান থেকেই দুমকির ঈদ বাজারে কেনাকাটায় নানা বয়সের নারী-পুরুষ ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এসব ক্রেতার মাঝে নেই কোনো করোনা আতঙ্ক। প্রশাসনের নজরদারি এড়াতে অধিকাংশ ক্রেতাই থুতনিতে মাস্ক রেখে ঘুরছেন দোকানে দোকানে। অধিকাংশ দোকানিরাও মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি।

রোববার উপজেলা শহরের পিরতলা বাজার ঘুরে দেখা যায়, স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই কেনাবেচা করছে উভয় পক্ষ।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ আবদুলস্নাহ সাদীদ বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানাতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যারা সরকারি নির্দেশনা অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে