শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
লঘুচাপের প্রভাব

টানা বৃষ্টিতে পস্নাবিত নিম্নাঞ্চল কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি

স্বদেশ ডেস্ক
  ৩১ জুলাই ২০২১, ০০:০০
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে ভারি বর্ষণ ও ঝড়ো হাওয়ায় লন্ডভন্ড বসতঘর -যাযাদি

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে শুক্রবার পর্যন্ত পাঁচ দিনের অতি বর্ষণ ও ঝড়ো বাতাসে নিম্নাঞ্চল পস্নাবিত হয়েছে। অতি বর্ষণে নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে আউশ ক্ষেত, আমন বীজতলা পানিতে ডুবে গেছে। ভেসে গেছে অসংখ্য পুকুর ও ঘেরের মাছ। উপকূলীয় জনজীবন থমকে গেছে। এদিকে, বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও বাড়ছে জনদুর্ভোগ। ফেনীর অধিকাংশ সড়কে জলাবদ্ধতায় জনজীবন বিপন্ন হয়ে গেছে। বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে ভারী বর্ষণ ও ঝড়ো হাওয়ায় ২১ ঘণ্টা বিদু্যৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে সেখানকার মানুষজন। সেখানে ৮ হাজার মৎস্য ঘের ভেসে গিয়ে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৬ কোটি টাকার। এদিকে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর নিম্নাঞ্চল ডুবে ফসল, পুকুর, ঘেরসহ ২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমির বীজতলার ক্ষতি হয়েছে। মৎস্য চাষিদের লোকসান হয়েছে প্রায় ৮ কোটি ২৭ লাখ টাকার। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

চবি : টানা তিনদিন ভারী বৃষ্টি বর্ষণের ফলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) পাহাড় ধসে পড়েছে। শুক্রবার ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাটাপাহাড় সড়কের পাশে অবস্থিত একটি পাহাড় ধসে পড়ে। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রবিউল হাসান ভূইয়া জানান, পাহাড় ধসের ফলে মোট ৫ বিদু্যতের খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার মধ্যে তিনটি পুরোপুটি ভেঙে গেছে এবং দুটি খুঁটি রাস্তার দিকে হেলে পড়েছে।

তিনি আরও জানান, পাহাড়ের ওপর থেকে অনেক মাটি ধসে একটি গাছ রাস্তার ওপর হেলে পড়েছে এবং মাটি ধসের ফলে রাস্তাটি পুরোপুরি বস্নক হয়ে গেছে। তাই রাস্তাটি আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। বিদু্যতের পিলারগুলো সরানোর কাজ চলছে। আজকের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে যেতে পারে বলে জানান তিনি।

বান্দরবান : বান্দরবানে তিন দিনের টানা বর্ষণের পর বৃহস্পতিবার রাত থেকে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ধীরে ধীরে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। নিম্নাঞ্চলের পানি সরে গিয়ে কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে পরিস্থিতি। এর ফলে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া লোকজন বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে।

এদিকে নদীর তীরবর্তী এলাকা ও নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়ি থেকে পানি নামতে শুরু করলেও দুর্ভোগ কমেনি বন্যাদুর্গতদের। পস্নাবিত এলাকার ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটে কাদা জমে থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বন্যাদুর্গতদের। এ ছাড়াও করোনা ও বন্যা পরিস্থিতিতে হাতে কাজ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় লোকজন। বান্দরবান জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, বান্দরবানে বৃষ্টি কমে যাওয়ায় বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে সবাই বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। এদিকে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে প্রশাসন ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

ফেনী : টানা বর্ষণে ফেনী শহরের সড়কগুলোতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। শহরের আবু বকর সড়ক, নাজির রোড, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীন সড়ক, মিজান পাড়া, শান্তি কোম্পানি রোড, খাজুরিয়া, আনোয়ার উল্যাহ সড়ক, হাসমত আলী সড়ক এবং একাডেমি সড়কের অবস্থা ভয়াবহ। শহরের পুরাতন পুলিশ কোয়ার্টারের রাস্তার পানিতে ভ্রাম্যমাণ ফল বিক্রেতার কাঁঠাল ভেসে যেতে দেখা গেছে। পৌর এলাকার বেশ কিছু বাসাবাড়ির আঙ্গিনায় হাঁটু জল জমে গেছে। পৌরসভার পরিচ্ছন্নকর্মীরা টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করে যাচ্ছে। পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজি জানান, ময়লা-আবর্জনার সঙ্গে পলিথিন ব্যাগ ফেলায় ড্রেনে পানি চলাচলে বাধা হয়ে এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। লোকজন কাজ করছে, দ্রম্নত পানি নেমে যাবে।

মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) : সাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে ৩ দিনের টানা ভারী বর্ষণ ও ঝড়ো হাওয়ায় বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে পলস্নী বিদু্যতের খুঁটি ভেঙে ২১ ঘণ্টা বিদু্যৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পানির নিচে নিমজ্জিত ৮ হাজার মৎস্য ঘের। এতে চাষিদের প্রায় ৬ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। লন্ডভন্ড গাছপালার পাশাপাশি বিধস্ত হয় অর্ধশতাধিক কাঁচাপাকা বাড়িঘর। ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে, বসতঘরে চাপা পড়ে আহত হয়েছেন দুইজন। ১৫০ হেক্টর আমন বীজতলা ক্ষতির সম্মুখীন।

উপজেলার বহরবুনিয়ার আজিজুল ইসলাম বলেন, টানা বৃষ্টিতে এলাকার বেশির ভাগ পুকুর-ঘের ডুবে গেছে। ইয়াসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারও ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। অন্তত ১০ হাজার মৎস্য ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর ফলে ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিনয় কুমার রায় বলেন, মৎস্য অধু্যষিত ইউনিয়নগুলোতে খোঁজ নিয়ে ক্ষতির নিরূপণ করা হচ্ছে। পিরোজপুর পলস্নী বিদু্যৎ সমিতির মোরেলগঞ্জ জোনালের ডিজিএম এবিএম মিজানুর রহমান বলেন, ৩৩ কেভি বিদু্যতের লাইন বিচ্ছিন্ন এলাকায় তারের উপর থেকে ভেঙে পড়া গাছ দ্রম্নত অপসারণ করা হচ্ছে।

ইউএনও জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভারী বর্ষণ ও ঝড়ো হাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় খোঁজ-খবর নিয়ে তালিকা করার জন্য ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) : পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের চর মোলস্না, চরমোন্তাজ ইউনিয়নের উত্তর চরমোন্তাজ, মধ্য চরমোন্তাজ, পূর্ব চরমোন্তাজ ও চরলক্ষ্ণী গ্রামসহ অন্তত ৮টি গ্রামে জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়ায় প্রায় তিন হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, 'সস্নুইসগেট যারা নিয়ন্ত্রণ করছেন তাদের বলা হয়েছে দ্রম্নত সস্নুইসগেটের কপাট খুলে পানি নামানোর জন্য।'

কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৫৯৪ হেক্টর জমিতে আমনের বীজতলা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার হেক্টর পানিতে নিমজ্জিত। আউশ আবাদ করা হয়েছে ৮৪০ হেক্টরে। নিমজ্জিত হয়ে আছে ৩০০ হেক্টর। সবজি ৪৫০ হেক্টরের মধ্যে ১৫০ হেক্টর তলিয়ে রয়েছে। মৎস্য বিভাগ জানায়, ৬৫০টি পুকুর এবং ১১৫টি ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। এতে মৎস্য চাষিদের প্রায় ৮ কোটি ২৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ইউএনও মাশফাকুর রহমান ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, 'প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষক ও মৎস্য চাষিদের। আরও কী ক্ষতি হয়েছে, চেয়ারম্যানদের কাছে সে তথ্য চাওয়া হয়েছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে