নাইক্ষ্যংছড়িতে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে আবারও পস্নাবন চকরিয়ায় ভেসে উঠছে ক্ষতচিহ্ন

প্রকাশ | ০২ আগস্ট ২০২১, ০০:০০

ম নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) প্রতিনিধি
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুমের তুমব্রম্ন গ্রাম টানা অতি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে আবারও পস্নাবিত হয়েছে। পানিবন্দি অসহায় মানুষ জীবন বাঁচাতে দিগবিদিক ছুটছে একমাত্র আশ্রয় কেন্দ্র ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদে। রোববার পানিবন্দি তুমব্রম্ন পশ্চিমকুল, হিন্দুপাড়া, বাজারপাড়া, কোনারপাড়া, মধ্যমপাড়া ও পানিতে ভাসমান তুমব্রম্ন বাজারে ৫০-৬০টি দোকানসহ মৎস্যচাষিদের পুকুর। দ্বিতীয়বার পানিবন্দি হওয়ায় প্রতিটি দোকানের মালিক বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তুমব্রম্ন বাজারের ব্যবসায়ী ইমাম হোসেন জানান, ১ম ও ২য় বার টানা বর্ষণে পানিতে ভেসে গেছে প্রায় ৩ লাখ টাকার বিভিন্ন মালামাল। এতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। মৎস্যচাষি তুমব্রম্ন বাজার পাড়ার হামিদুল হক বলেন, চলতি মৌসুমে বাজারের নিজ মালিকানাধীন অন্তত ৪০ শতক পুকুরে মাছের চাষ করেন। নানা প্রজাতির দেড় লাখ টাকার পোনা ছাড়েন। মৎস্য পুকুর পরিচর্যার শ্রমিক, মাছের খাবারসহ অনুষঙ্গিক খরচ মিলে অন্তত ২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। গত ২৭ জুলাই ও ৩১ জুলাই শুরু হওয়া টানা প্রবল বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের পানি নেমে মৎস্য পুকুর পস্নাবিত হয়ে সম্পূর্ণ মাছ ভেসে গেছে। এদিকে, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের অংশে অবস্থিত বাইশারী-আলীকদম সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গিয়ে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের অংশে অবস্থিত বাইশারী বাজার হয়ে আলীক্ষ্যং পর্যন্ত দীর্ঘ ৯ কি.মি. সড়কটি বান্দরবানের সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনের কিছু অংশ (৩ কি.মি.) কার্পেটিং করা হয়। এছাড়া বাকি অংশ ব্রিক সলিন করা হয়েছে। এরই মধ্যে অনেকগুলো কালভার্ট ছোটখাটো ও ব্রিজ ও নির্মাণ করা হয়। গত ২৬ জুলাই থেকে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। তাছাড়া সড়কের চাইল্যাতলি, মালটা বাগান, থুইল্যাঅং পাড়া, লম্বাবিল এলাকা পানিতে তলিয়ে গিয়ে বেহাল অবস্থায় পরিণত হয়েছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য আনোয়ার সাদেক জানান, এবারের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে রাস্তাটির অবস্থা খুব খারাপ হয়েছে। জনদুর্ভোগ এখন চরমে রয়েছে। তিনি দ্রম্নত রাস্তাটি মেরামত করে গাড়ি চলাচলের উপযোগী করার দাবি জানান। আমাদের চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কক্সবাজারের চকরিয়ায় টানা বৃষ্টি ও মাতামুহুলী নদীর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে গত পাঁচদিন পানিবন্দি ছিল লাখো মানুষ। শনিবার থেকে মাতামুহুরী নদীতে পানি কমে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় কমতে শুরু করেছে বানের পানি। পানি কমলেও নানা দুর্ভোগে পড়েছে বানভাসি মানুষ। বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র, রাস্তার ধারে আশ্রয় নেওয়া লোকজন বাড়িতে ফিরেছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর সড়কগুলো ভেঙে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নলকূপগুলো কয়েকদিন ধরে পানিতে ডুবে থাকায় পানি উঠছে না। এতে চরম বিশুদ্ধ পানি ও খাবার পানি সংকটে পড়েছে বন্যাকবলিত মানুষ।  শুধু মানুষ নয়, সঙ্গে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগিও রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে যে শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। সরেজমিন আরও দেখা গেছে, চকরিয়ার সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, হারবাং, ডুলাহাজারা, ফাঁসিয়াখালী, চিরিংগা, খুটাখালী ও পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে পানি নেমে গেছে। অধিকাংশ সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গেছে। ফলে এখনো যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। অনেক এলাকায় সড়ক ভেঙে যাওয়ায় বাঁশের সাঁকো বানিয়ে পারাপার করছে লোকজন। পাঁচদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর বন্যাদুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে ডায়রিয়া, আমাশয়, জ্বরসহ পানিবাহিত নানা রোগব্যাধি। চকরিয়া ইউএনও সৈয়দ শামসুল তাবরিজ বলেন, উপজেলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করে একটি তালিকা তৈরি করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।