নোনা ট্যাংরার রেণু পোনা উৎপাদনে সাফল্য

প্রকাশ | ০৩ আগস্ট ২০২১, ০০:০০

মিলন রহমান, যশোর
যশোরে 'দক্ষিণের নোনা ট্যাংরা'র রেণু পোনা উৎপাদনে সাফল্য মিলেছে। কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে হ্যাচারিতে এই পোনা উৎপাদনের পর পুকুর, ঘেরে বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয়েছে। মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপকহারে এই মাছের চাষ অনেক লাভজনক। এর মাধ্যমে বিলুপ্তপ্রায় মাছটিকে যেমন টিকিয়ে রাখা সম্ভব, তেমনি আমিষের ঘাটতি পূরণেও এটি ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, দেশের দক্ষিণাঞ্চলে লোনা পানির বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবন ধারণ ও দেশের অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। উপকূলীয় অঞ্চলের এসব মাছের মধ্যে নোনা ট্যাংরা (গুংঃঁং মঁষরড়) অন্যতম একটি মাছ। অত্যন্ত সুস্বাদু হওয়ায় দেশের অভ্যন্তরে ও আন্তর্জাতিক বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এক সময় উপকূলীয় প্রাকৃতিক জলাশয়ে এই মাছ প্রচুর পাওয়া যেত। কিন্তু নির্বিচারে আহরণ ও পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে এর প্রাকৃতিক প্রাপ্যতা ক্রমশই হ্রাস পাচ্ছে। প্রাকৃতিকভাবে এই মাছের প্রাপ্যতা হ্রাস পাওয়ায় অভ্যন্তরীণ বাজারে এর মূল্য অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের খুলনার পাইকগাছাস্থ 'লোনা পানি কেন্দ্র'র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কেন্দ্র প্রধান ডক্টর মো. লতিফুল ইসলাম জানান, ২০১০ সালের দিকে এই কেন্দ্রে নোনা ট্যাংরা মাছের ব্রম্নড প্রতিপালন, কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদন কলাকৌশল উদ্ভাবনে সফলতা অর্জন করে। এই গবেষণায় জাতীয় পুরস্কারও অর্জিত হয়। যশোর জেলা মৎস্য হ্যাচারি মালিক সমিতির সভাপতি ও মা ফাতিমা ফিস হ্যাচারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফিরোজ খান জানান, ২০১৯ সালে তিনি নোনা ট্যাংরার কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা উৎপাদনের ট্রায়াল শুরু করেন। দুই বছর ট্রায়ালের পর সাফল্য আসায় এ বছর তিনি দেড় কোটি রেণু পোনা উৎপাদন করেছেন। পুকুর, ঘেরের মৎস্যচাষিরা এই পোনা নিয়ে চাষও করছেন। যশোরে একমাত্র তিনিই এই নোনা ট্যাংরার রেণু পোনা উৎপাদন করছেন উলেস্নখ করে ফিরোজ খান আরও জানান, নোনা ট্যাংরা এখন খুব সহজেই মিঠা পানিতে চাষ করা সম্ভব। একক চাষে পুকুরে বিঘাপ্রতি ৬০ হাজার ও মিশ্রচাষে বিঘাপ্রতি ৪০ হাজার পোনা চাষ করা যায়। ফিস ফিড দিয়ে মাত্র চার মাস পরই এই মাছ বাজারজাত করা যায়। গড়ে ২৫টিতে কেজি অনুপাতে বাজারমূল্য মেলে ১২-১৫ হাজার টাকা মণ। খুচরা বাজারে ৪০০-৫০০ টাকা কেজি। মৃতু্যর হার কম হওয়ায় এই মাছ চাষে যেমন সহজেই সাফল্য অর্জন সম্ভব; তেমনি দেশের বিপুল আমিষের চাহিদার একটি বড় অংশও এই মাছ দিয়ে পূরণ সম্ভব। যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান জানান, এই জেলার মৎস্য সেক্টরের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা সবসময়ই বিভিন্ন মাছের রেণু পোনা উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে থাকে। হ্যাচারিতে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে নোনা ট্যাংরার রেণু পোনা উৎপাদন খুবই ভালো পদক্ষেপ।