মায়ের আশ্রয় মেলেনি প্রতিষ্ঠিত আট সন্তানের ঘরে

প্রকাশ | ২৪ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০

ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি
ঢাকার ধামরাইয়ের কুশুরা ইউনিয়নের নরসিংহপুর গ্রামের মরিয়ম বেগমের বয়স এখন একশ'র কাছাকাছি। এ বৃদ্ধার রয়েছে ছয় ছেলে ও দুই মেয়ে। ছেলেরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যাংকারসহ যার যার অবস্থান থেকে সবাই সুপ্রতিষ্ঠিত। তারপরও বৃদ্ধ মায়ের স্থান হয়নি কোনো সন্তানের ঘরে। হাহাকার করতে হয় একমুঠো ভাতের জন্য। অসুস্থ অবস্থায় রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে দেখে উদ্ধার করেছেন এলাকাবাসী। আর আশ্রয় দিয়েছেন ওই গ্রামের আব্দুল লতিফ। এমন ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, বৃদ্ধ মরিয়ম বেগমের আট সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে আক্তার হোসেন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা। অন্য ছেলেদের মধ্যে আবদুলস্নাহ বাকী ব্যবসায়ী, সাখাওয়াত হোসেন সাকি গার্মেন্ট ব্যবসায়ী, ছোট ছেলে ডাক্তার হুমায়ূন কবির শিশু বিশেষজ্ঞ (বিসিএস), জাহাঙ্গীর হোসেন ব্যবসায়ী এবং আলমগীর হোসেন প্রবাসী। প্রবাসী আলমগীর হোসেন ছাড়া অন্য পাঁচ ছেলে তাদের পরিবার নিয়ে থাকেন ঢাকায়। দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। তাদের অবস্থাও মোটামুটি ভালো। কারও সংসারে অভাব অনটন নেই। শুধু বৃদ্ধা মাকে ভরণপোষণ করতে যেন তাদের অভাবের শেষ নেই। প্রত্যেকের ঘরেই আছে শান্তির সুবাতাস। কিন্তু মায়ের অন্তর জ্বালা-যন্ত্রণা আর অশান্তিতে ভরপুর। খেয়ে-না খেয়ে বিনা চিকিৎসায় দিনাতিপাত করছেন শতবর্ষী মরিয়ম বেগম। ক্ষুধার যন্ত্রণায় ছটফট করেন প্রতিনিয়ত। কোনো ছেলে কিংবা মেয়ের ঘরে আশ্রয় হয়নি শতবর্ষী মরিয়ম বেগমের। বৃহস্পতিবার সকালে নিজ বাড়ি থেকে একা একা বের হন মরিয়ম। বয়সের ভারে নু্যব্জ বৃদ্ধা বাড়ি থেকে বের হয়ে বঙ্গবাজারের পাশে রাস্তায় পড়ে গিয়ে হাতে আঘাত পান। পরে ছেলে-মেয়েরা খবর না রাখায় গ্রামবাসী তাকে রাস্তার পাশ থেকে উদ্ধার করে স্থানীয় আব্দুল লতিফের বাড়িতে নিয়ে যান। আব্দুল লতিফ তিন দিন ধরে ওই বৃদ্ধার সেবা ও চিকিৎসা করান। স্থানীয় আব্দুল লতিফ বলেন, 'রাস্তার পাশে পড়েছিলেন বৃদ্ধা মরিয়ম। গ্রামবাসী তাকে উদ্ধার করে আমার বাড়িতে নিয়ে আসেন। আমি তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি।' ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী বলেন, মা-বাবাকে ভরণপোষণ না করলে ছেলে সন্তানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।