আন্দালনের মুখে দাবি আদায় শাবি ছাত্রীদের

প্রকাশ | ১৫ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

ম শাবি প্রতিনিধি
শুক্রবার সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত ছাত্রীরা - ফোকাস বাংলা
আন্দোলনের মুখে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের সব দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি একথা বলেন। উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'শিক্ষার্থীদের সব দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এগুলো দ্রম্নত বাস্তবায়ন করা হবে। হল প্রভোস্ট করোনায় আক্রন্ত হয়ে ছুটিতে থাকায় সহকারী প্রভোস্ট জোবেদা কনক খানকে ভারপ্রাপ্ত প্রভোস্ট হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ছাত্রীরা যেন আমাদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পায় আমরা সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।' এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্টে জাফরিন আহমেদ লিজার পদত্যাগসহ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে উপাচার্য বরাবর তিন দফা দাবির লিখিত অভিযোগ দিয়েও সুষ্ঠু কোনো সমাধান না পেয়ে বিক্ষোভ করেন ওই হলের ছাত্রীরা। শুক্রবার সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন-১ এর উপাচার্যের কার্যালয়ে তিন দফা দাবির লিখিত পত্র জমা দেন ছাত্রীরা। দাবিগুলো হলো- দায়িত্বহীন প্রভোস্টকে পদত্যাগ করতে হবে, হলের সবধরনের অব্যবস্থাপনা নির্মূল করে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে এবং অবিলম্বে ছাত্রীবান্ধব ও দায়িত্বশীল প্রভোস্ট নিয়োগ দিতে হবে। লিখিত দাবির প্রেক্ষিতে দুপুর ১২টায় ছাত্রীদের একটি প্রতিনিধি দলকে ডেকে পাঠান উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন। ওই প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দীর্ঘ এক ঘণ্টা আলাপকালেও কোনো সুষ্ঠু সমাধান দিতে পারেননি তিনি। সমাধান না পাওয়ায় দুপুর ১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসিক ভবন -১ এর উপাচার্য কার্যালয় ঘেরাও করে ফের বিক্ষোভ করছেন শতাধিক আবাসিক ছাত্রী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিক্ষুব্ধ কয়েকজন ছাত্রী জানান, 'আমাদের মধ্যে কয়েকজন রাতে আন্দোলন করে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এখনো অনেকেই অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। আমাদের দাবির সুষ্ঠু সমাধান না পেলে আন্দোলন চালিয়ে যাব।' এদিকে সন্ধ্যার ৭টা পর্যন্ত দাবি আদায়ের জন্য আল্টিমেটাম দিয়েছেন ছাত্রীরা। হলের প্রভোস্ট অফিসে আগের তালা ভেঙে নতুন তালা ঝুলিয়েছে শিক্ষার্থীরা। প্রভোস্টসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অফিসে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছে শিক্ষার্থীরা। এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ১১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনের বাসভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন তারা। বিক্ষোভ চলাকালে রাত ২টার দিকে উপাচার্য বাসভবন থেকে বেরিয়ে আসেন এবং শিক্ষার্থীদের কাছে তাদের সমস্যার কথা শোনেন। ছাত্রীরা এ সময় হলের অব্যবস্থাপনা নিরসন, প্রভোস্টের পদত্যাগ ও ক্ষমা চাওয়াসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। এ সময় অন্যান্য হলের শিক্ষার্থীরাও সিরাজুন্নেসা হলের ছাত্রীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন। এরপর উপচার্য সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলে রাত আড়াইটার দিকে ছাত্রীরা হলে ফিরে যান। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের জানান, বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের পানি, সিট, ইন্টারনেট সংযোগ, খাবারসহ বেশ কিছু সমস্যা নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে হলের রিডিং রুমে ছাত্রীরা আলোচনা করেছিলেন। আলোচনা শেষে ছাত্রীরা হল প্রভোস্ট জাফরিন আহমেদকে ফোন করে এসব সমস্যার কথা জানান এবং অল্প সময়ের জন্য হলে আসার অনুরোধ করেন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অনেক অনুরোধের পরও প্রভোস্ট জাফরিন আহমেদ তাতে রাজি হননি; উল্টো তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন 'কেউ তো মরেনি। বের হলে বের হয়ে যাও, কোথায় যাবা? আমার এত ঠেকা পড়েনি।' শিক্ষার্থীরা বিষয়টি জরুরি উলেস্নখ করলে তিনি বলেন, 'কিসের জরুরি? কেউ তো আর মারা যায়নি।' এ ঘটনার পরপরই ছাত্রীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। প্রথমে রাত ৯টার দিকে হলের সামনে এবং পরে সাড়ে ১১টায় উপাচার্যের বাসভবনের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেন তারা। হল প্রভোস্টরা বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন এমন অভিযোগ করে ছাত্রীরা জানান, তাদের প্রায়ই শুনতে হয়, 'দয়া করে তোমাদের হলে থাকতে দিয়েছি, এটাই বেশি।' বিক্ষোভে এসব কথার প্রতিবাদ জানিয়ে বিভিন্ন ধরনের স্স্নোগানও দেয় শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রভোস্ট জাফরিন আহমেদ বলেন, 'এত রাতে হলে আসতে পারছি না। শিক্ষার্থীদের বলেছি তারা যেন হলে ফিরে যায়। আমরা সমস্যাগুলো নিয়ে তাদের সঙ্গে বসব'।