রাণীশংকৈলে মাল্টা বাগানে হরেক রকম ফসলের চাষ

প্রকাশ | ১৫ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

ম রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি
তিন বছর আগের কথা। হঠাৎ করেই নিজের এক একর জমিতে ২৮৪টি মাল্টার চারা রোপণ করেন কৃষক আমিরুল ইসলাম। তাঁর এ কান্ড দেখে গ্রামজুড়ে নানা আলোচনা। প্রতিবেশীরা বলতে থাকেন, 'ও পাগল হয়ে গেছে। ধরা খাবে, লোকসানে পড়বে, আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই জমিতে আর কিছুই হবে না।' কিন্তু গ্রামবাসীর এসব কথা গায়ে মাখেননি তিনি। কাজ করতে থাকেন আপন মনে। প্রথমে মাল্টার গাছ রোপণ করেছিলেন। এর পরে মাল্টা বাগানে ১১ মিশ্র ফসল ফলিয়ে বাজারজাত করে আলো আয় করেন এবং মাল্টা গাছ থেকেও ভালো আয়ের সম্ভাবনা দেখছেন। এই মিশ্র বাগানে ১১ সাথী ফসল করে ইতোমধ্যেই এলাকায় চমক লাগিয়ে দিয়েছেন। এখন তার বাগানে মাল্টার ফলন আসতে শুরু করেছে। শুধু কি মাল্টা? একই মিশ্র বাগানে ১১ ধরনের সাথী ফসল ফলিয়ে উপজেলা জুড়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এই মাল্টা চাষি। আমিরুল ইসলামের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার হোসেনগাঁও ইউনিয়নের ক্ষুদ্র বাঁশবাড়ী গ্রামে। তাঁর মাল্টা বাগানটাও সেখানে। সরেজমিন দেখা যায়, ওই গ্রামের প্রবেশপথেই স্থানীয় পাকা সড়ক ঘেঁষা মাল্টা বাগানে গমের চাষাবাদও হচ্ছে। সড়ক থেকে নেমেই এরপর ক্ষেতের ভেতরে যেতেই চোখে পড়ে গমের পাশাপাশি আলাদা করে আলুর চাষ। আর একটু এগোতেই দেখা যায়, লাউয়ের মাচা। তার পাশেই পটোল ও শিমের চাষাবাদ। আরও একটু সামনে এগোতেই মসলা জাতীয় ফসল পেঁয়াজ, রসুন ও হলুদের আবাদ। এছাড়া কাঁচা মরিচ, পুঁইশাক, লাপা শাক ও লেবুর আবাদও করা হচ্ছে ওই বাগানে। আমিরুল ইসলাম বলেন, 'শুরুটা ছিল তিন বছর আগে, রাণীশংকৈল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথের আগ্রহে এবং তাঁর সার্বিক সহযোগিতায় এক একর আবাদি জমিজুড়ে ২৮৪টি মাল্টার গাছ রোপণ করি। এরপর শুরু হয় পরিচর্যা। গাছের বয়স এক বছর হলে দেখি প্রতিটি মাল্টা গাছ থেকে আরেক গাছের মাঝখানে প্রায় ১০ বর্গফুট জায়গা ফাঁকা থাকছে। পরে চিন্তা করি, ছোট হাল দিয়ে চাষ দিলে এখানে আবাদ করা যাবে। প্রথমে আবাদ করলাম বোরো ও আমন ধান, পরের বছর আলু। তিনি বলেন, 'এ বছরে বোরো-আমনের পর জমিটাকে বিভিন্ন ভাবে ভাগ করলাম। প্রথম ভাগে রোপণ করলাম গম, দ্বিতীয় ভাগে আলু এবং তৃতীয় ভাগে লাউ, শিম, হলুদসহ বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি ও মসলা জাতীয় ফসল। মাল্টা চাষ করলেই যে অন্য ফসল অচাষযোগ্য, তা কিন্তু নয়। আপনি চেষ্টা করলেই পারবেন। এতে আপনার মাল্টা গাছেরই উপকার বেশি হবে। অন্যান্য ফসলে দেওয়া সারগুলো মাল্টাগাছও পাবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, মাল্টা গাছের শিকড় যেন কাটা না যায়।' এমন ব্যতিক্রমী আবাদ দেখে অবাক এলাকার সাধারণ মানুষসহ অন্য কৃষকরা। গ্রামের দোকানগুলোয়ও আলোচনা হচ্ছে তার এই ব্যতিক্রমী আবাদ নিয়ে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, 'সমগ্র উপজেলা মিলিয়ে মোট ১৬ হেক্টর জমিতে ৩০০ জন মাল্টা চাষি রয়েছেন। এদের মধ্যে ক্ষুদ্র বাঁশবাড়ী গ্রামের আমিরুল ইসলাম মাল্টার বাগানেই গম, আলুসহ বিভিন্ন শাক-সবজি চাষ করছেন। এতে আমরাও অবাক হয়েছি, তার চেষ্টা দেখে।' তিনি আরও বলেন, মাল্টা গাছের শিকড়ের দিকে খেয়াল রেখে মাল্টা বাগানে যে অন্য ফসলের আবাদ করা যাবে, তার বড় উদাহরণ হলো আমিরুলের মাল্টা বাগান।