চলনবিলে দেশি মাছের আকাল!

প্রকাশ | ১৮ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
দেশে উৎপাদিত দেশি মাছের সিংহভাগ চাহিদা মিটে সিরাজগঞ্জের চলনবিলের মাছ দিয়ে। অথচ এ অঞ্চলে দেশি মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপর মানুষের নানামুখী হস্তক্ষেপের কারণে কমতে শুরু করেছে দেশি মাছের সংখ্যা। ইতোমধ্যেই বেশকিছু প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়েছে। জানা গেছে, গত ৩০ বছরে চলনবিল অঞ্চলে মাছের উৎপাদন কমেছে ৬০ শতাংশ। অপরিকল্পিত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বঁাধ, পানির স্তর নেমে যাওয়া, বিল এলাকায় প্রাকৃতিক জলাভূমির পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করা, জমিতে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশকের ব্যবহার এবং ডিমওয়ালা মাছ ধরা উৎপাদন কমার অন্যতম কারণ। এ ছাড়া এ সময়ে বিলুপ্ত হয়েছে প্রায় ২৫ প্রজাতির দেশি মাছ। এর মধ্যে রয়েছে গাঙচিংড়ি, মাগুর, পাবদা, খরশাল, লেটুকি, বঁাশপাতা, পাতাশি, নান্দিনা, ভাঙ্গন, ঘোড়া, মহাশোল, তিলাশোল, ভ্যাদা, গজার, রেনুয়া, সরপুঁটি, রিঠা, বাছা, দেশি পাঙাশ, আইড়, ভেদা, বাটা, রাইখ ও কৈ মাছ। সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ ও উল্লাপাড়া উপজেলার অংশ বিশেষ, নাটোরের সদর, সিংড়া, গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম উপজেলা অংশবিশেষ, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার অংশবিশেষ, নওগার আত্রাই, রানীনগর এবং রাজশাহীর বাগমারা ও বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার কিছু অংশ নিয়ে বিস্তৃত এ চলনবিল। বিলের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ছোট-বড় ৩১টি নদ-নদী। খালের সংখ্যা ৩৭টি। বিল রয়েছে ১৭টি। বিল ও নদীতে মৎস্য বিভাগের অভয় আশ্রম ৩০টি। ওইসব নদী-খাল-বিল-অভয়াশ্রমের মৎস্য সংরক্ষণ আইন না মেনে নিষিদ্ধ ঘোষিত কারেন্ট জাল দিয়ে ছোট-বড় সব ধরনের মাছ ধরা হয়। ফলে একদিকে যেমন মা মাছ মানুষের খাদ্য হয়ে যায়, অপরদিকে ছোট মাছ-বড় হওয়ার সুযোগ পায় না। এ ছাড়া চলনবিল এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সেচ সুবিধার জন্য পানি উন্নয়ন বোডর্ খাল খনন, বাঁধ ও সুইচগেট নিমার্ণ করায় পানি প্রবাহের স্বাভাবিক গতি বিঘিœত হচ্ছে। এতে মাছের চলাচল, প্রজনন, ও বিচরণক্ষেত্র নষ্ট হচ্ছে।এসব কারণে চলনবিল অঞ্চলে দেশি মাছের উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে যাচ্ছে। বিষয়টি স্বীকার করে তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কমর্কতার্ জানান, এ অঞ্চলে ১১৩ রকমের মাছ পাওয়া যেত। ক্রমেই মাছের প্রজাতি বিলুপ্তি হচ্ছে। বতর্মানে এখানে ২৫/৩০ ধরনের মাছ উৎপাদন হচ্ছে। নানা কারণে মাছের উৎপাদন বাড়ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, উন্মুক্ত জলাশয়ে মৎস্য সংরক্ষণ-আহরণে স্থানীয় মৎস্যজীবী ও জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা, খনন করা এবং সরকারি জলাশয়ের ১০ শতাংশ অভয়াশ্রম হিসেবে ব্যবহার করলে মাছের উৎপাদন কয়েকগুণ বাড়বে বলে আশা করেন তিনি।