দেশ থেকে এখনো মানবতা হারিয়ে যায়নি। বিশেষ সময়ে সহমর্মিতা ও মানবতার উদাহরণ আজও আমাদের দেশে চলমান। দেশব্যাপী বহুল আলোচিত চকরিয়ার সড়ক দুর্ঘটনা ট্র্যাজেডিতে একই পরিবারের ৬ সহোদরের মৃতু্যর বিরল ঘটনায় সরকার প্রধানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন ও তাদের নেতাকর্মীরা অসহায় পরিবারের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন। সব দলের অনুসারীরা হাত বাড়িয়ে স্থাপন করেছেন 'মানবিক বাংলাদেশ'-এর উদাহরণ।
দেশজুড়ে আলোচিত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া পিকআপ চাপায় মর্মান্তিকভাবে নিহত ৬ ভাইয়ের পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩৫ লাখ টাকা নগদ সাহায্য প্রদান করেন। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খাঁন শোকাহত পরিবারকে দেখতে এসে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দিয়েছেন ৪ লাখ টাকা। কক্সবাজার জেলা ও চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন ৩ দফায় দিয়েছে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা, জেলা পুলিশ সুপার ১ লাখ টাকা, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্যপরিষদ দিয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, সৎসঙ্গ কেন্দ্র ২ লাখ টাকা, ইসকন ৫০ হাজার টাকা, চাল, ডাল ও তেলসহ ৭ বস্তা ত্রাণ সাহায্য দেয়। এ ছাড়া কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলমের স্ত্রী শিক্ষিকা সাহেদা জাফর দিয়েছেন ১ লাখ টাকা। এমনকি জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ প্রতি পরিবারকে ৫৭ হাজার টাকা করে মোট ৩ লাখ ৪২ হাজার টাকা প্রদান ছাড়াও আরও অনেক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মানুষ যে যা পারেন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এই সাহায্যে ছিল না কোনো সাম্প্রদায়িকতা, হিংসা, বিদ্বেষ। এভাবে অর্ধ কোটি টাকারও বেশি নগদ সাহায্য তারা পেয়েছেন। সাহায্য এসেছে সুদূর আমেরিকা প্রবাসী বাঙালি সংগঠন থেকেও। সাহায্যের হাত বাড়ানো দেখে বলা যায় আমাদের জন্মভূমি 'মানবিক বাংলাদেশের স্বরূপ উন্মোচিত করেছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবর্তিত মুজিব বর্ষের উপহারের ৮টি ঘর পাচ্ছেন ৬ ভাইয়ের স্ত্রী ছাড়াও ঘটনার ৩ বছর আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃতু্যবরণ করা আরেক ভাইয়ের স্ত্রী, তাদের মা ও বেঁচে থাকা একমাত্র ভাই পস্নাবন সুশীল। ইতিমধ্যে মুজিববর্ষের এই ৮টি ঘরের কাজ শুরু করে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কাজ এগিয়ে নিয়ে গেছে চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন।
গত শনিবার সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে কথা হয় নিহত কয়েকজনের বিধবা স্ত্রীদের সঙ্গে। নিহত চম্পক সুশীলের স্ত্রী দেবিকা ঘোষ জানান, নিজেসহ মোট ৪ জনের স্ত্রী এখনো ভোটার হতে পারেননি। ফলে প্রাপ্ত নগদ টাকাগুলো দিয়ে সঞ্চয়পত্র কেনার ইচ্ছা থাকলেও ভোটার আইডি কার্ডের অভাবে তা করা যাচ্ছে না। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। যাদের ভোটার আইডি কার্ড আছে তারা ইতিমধ্যে সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ পেয়েছেন। ফলে তারা অধিক আর্থিক নিরাপত্তা পেয়েছে।
এ ব্যাপারে চকরিয়া ইউএনও জেপি দেওয়ান বলেন, একটি পরিবারের ছয়জন লোক একসঙ্গে সড়কে প্রাণ হারানোর ঘটনা খুবই নজিরবিহীন। তাদের এ ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়া কারও পক্ষে সম্ভব নয়। তারপরও ঘটনার পর থেকে উপজেলা ও জেলা প্রশাসন এবং সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।