বন্যার প্রভাবে ক্রেতাশূন্য কোরবানির পশুর হাট

প্রকাশ | ০২ জুলাই ২০২২, ০০:০০

স্বদেশ ডেস্ক
বন্যার প্রভাবে ক্রেতাশূন্য সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের পশুর হাট -যাযাদি
কোরবানির ঈদের আর মাত্র বাকি ৮ দিন। পুরোদমে প্রস্তুতি নিচ্ছেন পশুর বেপারী ও খামারিরা। কিন্তু এখনো জমে উঠেনি পশুর হাট। তার উপর যে ক্রেতা হাটে আসছেন তারাও দালালের দৌরাত্ম্যে বিড়াম্বনায় পড়েছেন। হাটগুলোতে গরু আমদানির তুলনায় ক্রেতার উপস্থিতি নিতান্তই কম। দালালের দৌরাত্ম্যে বাড়তি দামে পশু বিক্রেতাদের আশায় গুঁড়েবালি হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো বিস্তারিত খবর- আমাদের জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পশুর বেপারী ও খামারিরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে গৃহস্থ ও খামারিদের কাছ থেকে গরু কিনছেন। অনেক গৃহস্থ ও খামারি সরাসরি হাটে নিয়ে গরু বিক্রির প্রস্তুতি নিয়েও খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন। কিন্তু এখনো জমে উঠেনি গরু হাট। উপজেলার বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা গেছে, এবার উপজেলায় ছোট-বড় কয়েকটি গরু বাজার বন্যার কারণে ক্রেতাশূন্য। বিশেষ করে উপজেলা জুড়ে বন্যার পানি থাকায় সবাই বন্যা মোকাবিলায় ব্যস্ত। তাই কোরবানি দেওয়া নিয়ে চিন্তার মধ্যে আছেন। খামারি-বেপারীরা বলছেন, এবার পশু বেশি, কিন্তু ক্রেতা কম। ছয় মাস আগে গরুর যা দাম ছিল, এখন প্রায় দ্বিগুণ কমেছে। খামারিদের এবার লোকসান গুনতে হবে। এখনো অনেক গরুর বাজারে পানি থাকায় ক্রেতা-বিক্রেতারা পশু নিয়ে আসতে পারছেন না। আবার ক্রেতারা দেখে শুনে পশু কিনতে পারছেন না। ক্রেতারা জানান, এবার ঈদে বন্যার জন্য পশু কম আসছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবার আর গরুর বাজার ভরপুর নয়। অভাবে পড়ে যারা গরু নিয়ে আসছেন শুধু তাদের দেখা যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদের এবার গরু আমদানি করতে দেখেননি। অন্য বছর যেভাবে বিদেশি গরু আসত এবার তা দেখা যাচ্ছে না। গরু ব্যবসায়ীরা জানান, কয়েক মাস ধরে তারা এলাকায় ঘুরে ঘুরে গরু কিনছেন। ঈদের আগে তিন-চার মাস খাইয়ে হৃষ্টপুষ্ট করে বিক্রি করবেন লাভে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বন্যা। দেশে গরুর সংকট নেই। যে গরু আছে, তা দিয়ে চাহিদা মেটানো সম্ভব। বন্যা কপাল নষ্ট করেছে তাদের। এ ব্যাপারে রানীগঞ্জ বাজারের আশিলে দায়িত্বে থাকা দিদার আহমদ সুমন জানান, গত বছর এ সময়ে প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা কালেকশন আসত। এবার মাত্র ২০ হাজার কালেকশন হয়েছে। বিশেষ করে গরু বাজারে থাকলেও কাস্টমার কম। এ জন্য বন্যাকে দায়ী করে বলেন, বন্যা না হলে উপজেলার সব থেকে বড় তাদের বাজারের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পশু আসত। এবার আর আসবে না। এদিকে, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি জানান, নীলফামারীর সৈয়দপুরের পশুরহাটগুলোও এখনো জমে ওঠেনি। তার ওপর যে ক্রেতা হাটে আসছেন তারাও দালালদের দৌরাত্ম্যে বিড়াম্বনায় পড়েছেন। দালালদের দৌরাত্ম্যে বাড়তি দামে পশু বিক্রেতাদের আশায় গুঁড়েবালি হয়েছে। ঈদের আর মাত্র ৮ দিন বাকি থাকলেও হাটে ক্রেতার আগমন তেমন একটা নেই। তবে পশু আমদানি হচ্ছে প্রচুর। হাটে আগত বেশিরভাগ ক্রেতাই হচ্ছেন পাইকার, যারা গ্রামের হাট থেকে গরু কিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার হাটে বিক্রি করে থাকেন। সৈয়দপুরের বড়হাট ঢেলাপীর ও দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার রানীরবন্দর হাট ঘুরে দেখা গেছে, এবার কোরবানির পশু কেনার ক্রেতার খুবই অভাব। কারণ, উত্তরের মঙ্গা-পিড়িত জেলা নীলফামারীর সাধারণ মানুষ এমনিতেই এবার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে পরিবার-পরিজন নিয়ে দিনাতিপাত করতে হিমশিম খাচ্ছেন। তারা ইরি-বোরো মওসুমে ধান আবাদ করে আশানুরূপ ফলন পেলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে অধিকাংশ কৃষকই ধান কাটার পর কাঁচা ধানই অল্পদামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। জেলার ৬টি উপজেলার অধিকাংশ কৃষকেরই গোলায় ধান নেই। এখন সামনে কোরবানির ঈদ। তাই তারা কোরবানির পশু কিনতে এখনও সিদ্ধান্তই নিতে পারেননি। \হসৈয়দপুর পৌরসভার ১১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নাজমুল, নুরুল হুদা, ১০নং ওয়ার্ডের মান্নান, দুলাল, বোতলাগাড়ি ইউনিয়নের সফিক, বাদল, কামারপুকুর ইউনিয়নের লাল্টু, দুলুসহ অনেকেই জানান, কাঁচা ধান বিক্রি করে উৎপাদনসহ কাটা-মাড়াই খরচ জোগাতে বিক্রির টাকা শেষ হয়েছে। তার ওপর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে পরিবার-পরিজন নিয়ে দিনাতিপাত করতেই হিমশিম খাচ্ছেন। তাই, অনেকেই কোরবানি দিতে পারবেন না। যারা উচ্চ বেতনের চাকরি করেন তারা অনেকে একাই কোরবানি দিতে পারলেও, যারা ছোট চাকরি করেন এবং যাদের বেতন ২০-৩০ হাজার টাকার মতো তাদের অনেকেই কোরবানি দিতে পারবেন না। কেউ- কেউ ভাগে কোরবানি দেবেন বলেও জানান। হাটগুলো ঘুরে দেখা যায়, যেসব মানুষ হাটে এসেছেন তারা পশুর দরদাম করে কেনার চেষ্টা করছেন, তবে দালালদের কারণে তারা পশু কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। হাটে ক্রেতাদের মধ্যে শহরের লোকদের আধিক্য বেশি। গ্রামের ক্রেতা নেই বললেই চলে। গতবারের তুলনায় এবার পশুর দাম অপেক্ষাকৃত বেশি। এদিকে গ্রামের নিম্ন ও প্রান্তিক চাষিরা একটু বেশি দামের আশায় তাদের পালিত গরু-ছাগল হাটে নিয়ে এলেও ক্রেতার অভাবে বিক্রিতে ভাটা পড়েছে। হাটে ছোট সাইজের একটি গরু ৪০ হাজার টাকার উপরে এবং বড় আকারের গরু ৮০ থেকে ১ লাখ টাকা। ছাগলের দামও বেশি। তারপরেও যেসব ক্রেতা আসছেন তারা দালালদের জন্য কুরবানির পশুর ধারে-কাছেই যেতে পারছেন না। তবে, দালালদের দৌরাত্ম্য নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি ক্রেতা-বিক্রেতাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে আগামী হাটগুলোতে বেচাকেনা বেড়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করে ঢেলাপীর হাটের ইজারাদার মোতালেব হক।