সীতাকুÐের ঝাড়–ফুলের কদর দেশজুড়ে

প্রকাশ | ১২ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

সবুজ শমার্ শাকিল সীতাকুÐ
ঝাড়–ফুল। ঘরের নিত্যদিনের অন্যতম সঙ্গী। যার সহযোগিতায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ সহজে করা যায়। চাহিদা বেশি থাকায় পাহাড়-পবর্ত ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাণিজ্যিক চাষাবাদ না হলেও পাহাড়ের জঙ্গলে প্রাকৃতিকভাবেই জন্ম নেয়া এই ফুলের রয়েছে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা। স্থানীয় মানুষ তা সংগ্রহ করে বাজারে এনে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীদের কাছে। ব্যবসায়ীরাও ঝাড়ুফুলের ব্যবসায় লাভের মুখ দেখছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে এই পেশায় ব্যবসায়ীর সংখ্যা। সীতাকুÐে পাহাড়ি ঝাড়–ফুলের কদর দেশজুড়ে রয়েছে। ইতোমধ্যে পাহাড় থেকে ঝাড়– তৈরি করার জন্য ঝাড়–ফুল কাটা শুরু হয়েছে। গহিন পাহাড় থেকে এই ফুল সংগ্রহ করার আনন্দে মেতে উঠেছে ঝাড়–ফুল সংগ্রহকারীরা। এই ফুল দিয়ে সুন্দর ও সহজভাবে ব্যবহারযোগ্য ঝাড়– তৈরি হয় বলে দেশের বড় বড় শহরে রপ্তানি করা হচ্ছে। দেখা যায়, উপজেলার সীতাকুÐ পৌর সদর, বঁাশবাড়িয়া, বাড়বকুÐ, মগপুকুর, সুলতানা মন্দির, ছোটকুমিরা, বড়কুমিরা, মাঝার গেট, জোড় আমতল, ফকিরহাট, বিশ্ববিদ্যালয় গেট, বারআউলিয়া, শুকলাল হাট, সিরাজভুইয়ার রাস্তার মাথা এবং আনোয়ারা গেটসহ বিভিন্ন খোলা স্থানে পাহাড়ি বাহারি ঝাড়–ফুল শুকাতে দেখা যায়। এই কাজে কমর্রত গরিব খেটে খাওয়া মানুষগুলোর মহিলা-পুরুষ সবাই ফুল শুকাতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। শীতে রোদের আমেজ কম থাকায় এই ফুল শুকাতে সময় একটু বেশি নিলেও তাদের মুখে হাসির কমতি নেই। এই ঝাড়–ফুল সংগ্রহে তিনস্তরে লোক কাজ করে। পুরুষরা খুব ভোরে উঠে দা নিয়ে গহিন পাহাড়ের উদ্দেশে রওনা হয়। তারা প্রত্যেকে ঘণ্টাখানেক এই ফুল সংগ্রহ করে। এক হাজার ফুল এক সঙ্গে অঁাটি বেঁধে নিয়ে আসে লোকালয়ে। আনীত ফুলগুলোকে পরিবারের মহিলারা বিভিন্ন খোলা স্থানে রোদে শুকিয়ে ব্যবহারের উপযোগী করে। পরে ১০০টি ফুল নিয়ে আবার অঁাটি করে বিক্রির উদ্দেশে বাজারে নিয়ে যায়। ১০০টি ফুলবিশিষ্ট অঁাটি ৫০-৬০ টাকা দামে বিক্রি হয়। অনেক সময় পাহাড় থেকে ঝাড়–ফুল আনয়নকারী লোকগুলো নিজেরা না শুকিয়ে বাজারে পাইকারদের এজেন্টদের কাছে কঁাচা অবস্থায় বিক্রি করে দেয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, কুমিল্লা,ফেনী এবং কক্সবাজারসহ বিভিন্ন বড় বড় শহর থেকে ঝাড়–ফুল পাইকাররা এসে কিনে নিয়ে যায়। পরে তারা বিভিন্ন প্লাষ্টিক জাতীয় পদাথর্ দিয়ে পেঁচিয়ে হাতল তৈরি করে এর ওপর কারুকাজ করে শহরে বসবাসরত পরিবারের কাছে খুচরা ঝাড়– হিসেবে বিক্রি করে। এ ছাড়া দালানকোটায় অবস্থিত বাসা-বাড়িতে, শহরের বিল্ডিং আছেÑ এমন অফিস-আদালতে ঘরকে ঝাড়– দিয়ে পরিষ্কার করার জন্য ঝাড়– হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই ঝাড়–গুলো দেখতে চমৎকার এবং ব্যবহারে দ্রæত ময়লা পরিষ্কার ও বহনে সুবিধা বেশি বলে এটি শহরের প্রত্যেক বাসায় না থাকলেই নয়। এ ছাড়া এই ঝাড়–ফুলের তৈরি ঝাড়– নষ্ট হয় কম। তাই এটি সাশ্রয়ী। পাহাড়িদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গহিন পাহাড়ে একমাত্র সৃষ্টিকতার্র অবদানে কঁাশফুলের মতো গাছে এসব ফুল গাছ দেখা যায় পাহাড়ের টিলা থেকে টিলায়। পৌষ, মাঘ ও ফাল্গুন মাসে এই গাছের ফুল আসে, যাকে ঝাড়–ফুল বলা হয়। গরিব লোক পাহাড়ে গিয়ে এই ফুল সংগ্রহ করে। এতে বনবিভাগ থেকে কোনো বঁাধা দেয়া হয় না। কঁাচা অবস্থায় ভারী বলে দিনে একভার (২ অঁাটি) কিংবা ২ ভঁারের বেশি আনা যায় না। প্রতি ভারের আনয়ন খরচ পড়ে ৭০০-৮০০ টাকা। বিশেষ করে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা ১৮-২০টি ঝাড়ুফুলের কাঠি দিয়ে একটি আটি বঁাধেন। আর এক একটি অঁাটি বিক্রি হয় ৭-৮ টাকায়। ব্যবসায়ীরা এগুলো কিনে প্রথমে শুকিয়ে নেন। পরে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা এসে প্রতি আটি ঝঁাড়ুফুল ১০-১১ টাকা দরে কিনে জিপ বা ট্রাকের মাধ্যমে সমতলের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যান। ঝাড়–ফুলের ব্যবসাটির প্রসার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিত্তবান ব্যবসায়ীরা এগিয়ে এলে এটি শিল্প আকারে রূপ নিতে পারে।