শিবচরে হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর রসের ঐতিহ্য

প্রকাশ | ২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
খেজুর গাছ। শীতের সঙ্গে রয়েছে যার নিবিড় সম্পর্ক। শীতকালে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ থেকে পাওয়া যায় সুমিষ্ট রস ও গুড়। মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলায় শীতের সকালে এক দশক আগেও চোখে পড়ত রসের হাড়ি ও খেজুর গাছ। সাত-সকালে খেজুরের রস নিয়ে গাছিরা বাড়ি বাড়ি হাঁকডাক দিতেন। শীতের মৌসুম শুরু হতেই বাড়ি বাড়ি চলত খেজুরের রস কিংবা রসের পাটালি গুড় দিয়ে মজাদার পিঠাপুলির আয়োজন। তবে গ্রামবাংলার এই দৃশ্য এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। এর প্রধান কারণ, খেজুর গাছ নিধন। এতে দিন দিন শিবচরে কমছে খেজুর গাছ। দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে খেজুরের রসও। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, দিন দিন শিবচরে খেজুর গাছ কমতে থাকলেও হারিয়ে যায়নি। সুস্বাদ ও পিঠাপুলির জন্য অতি আবশ্যক উপকরণ হওয়ায় এখনো খেজুর রসের চাহিদা রয়েছে। তবে আগের মতো খেজুরের রস ও গুড় পাওয়া যায় না। পেলেও আগের চেয়ে ৫-১০ গুণ বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়। উপজেলা বহেরাতলা দক্ষিণ ইউনিয়নের আবুল মোলস্না বলেন, 'কাঁচা রসের পায়েস খাওয়ার কথা এখনো ভুলতে পারি না। আমাদের নাতি-নাতনিরা তো আর সেই দুধচিতই, পুলি-পায়েস খেতে পায় না। তবুও ছিটেফোঁটা তাদেরও কিছু দিতে হয়। তাই যে কয়টি খেজুর গাছ আছে, তা থেকেই রস, গুড়, পিঠাপুলির আয়োজন করা হয়।' উপজেলার বহেরাতলার গ্রামের জরিনা বেগম জানান, গাছের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। এক সময় শিবচর উপজেলা খেজুর রসের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। এখন গাছ যেমন কমে গেছে, তেমনি কমে গেছে গাছির সংখ্যাও। ফলে প্রকৃতিগত সুস্বাদু সেই রস এখন আর তেমন নেই। তবুও কয়েকটি গাছের পরিচর্যা করে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। গাছি নুর ইসলাম মাদবর জানান, খেজুরের গাছ কমে যাওয়ায় তাদের চাহিদাও কমে গেছে। আগে এই কাজ করে ভালোভাবেই সংসার চালাতেন। এমনকি আগে যে আয়-রোজগার হতো, তাতে সঞ্চয়ও থাকত। যা দিয়ে বছরের আরও কয়েক মাস সংসারের খরচ চলত। ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চাইলে সবার উচিত, তালগাছের মতো বেশি বেশি খেজুর গাছ লাগানো এবং তা যত্নসহকারে বড় করা। উপজেলার বাখরের কান্দি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন জানান, বর্তমানে যে হারে খেজুর গাছ হারিয়ে যেতে বসেছে, এতে এক সময় হয়ত এলাকায় খেজুর গাছ থাকবে না। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চাইলে সবার উচিত, বেশি করে খেজুর গাছ লাগানো। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, শিবচরে নদী ভাঙন, জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার, নতুন করে চারা রোপণ না করাসহ বিভিন্ন কারণে খেজুরের গাছ অনেকটাই কমে গেছে। কৃষি বিভাগ গাছিদের রস সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। খেজুর গাছের জন্য বাড়তি কোনো খরচ করতে হয় না। যে কেউ বাড়ির পাশে যে কোনো স্থানে লাগাতে পারেন।