গুরুদাসপুরে শীতকালীন রোগে আক্রান্ত ৫ শতাধিক গবাদি পশু

শতভাগ ভ্যাকসিন প্রস্তুত, দাবি প্রাণিসম্পদ বিভাগের

প্রকাশ | ২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায় কুয়াশা আর হিমেল বাতাসের কারণে হাড়কাঁপানো কনকনে শীত পড়ছে। এতে বিপর্যস্ত হচ্ছে এই জনপদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। এ অঞ্চলে বেশি সমস্যায় পড়েছে গবাদি পশু। ঘন কুয়াশা ও প্রচন্ড ঠান্ডায় নাকাল হয়ে পড়েছে গবাদি পশুগুলো। এসব গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে রয়েছেন খামারিসহ কৃষকরা। তবে শীতকালীন যে কোনো ধরনের রোগ প্রতিরোধ করতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের শতভাগ ভ্যাকসিনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানা গেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, বেশিরভাগ খামারে এবং কৃষকের বাড়িতে থাকা গরু শীতকালীন রোগ সর্দি, কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। এ ছাড়া বেশকিছু জায়গায় ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত গরুও পাওয়া গেছে। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই খামারিরা গরুগুলো গোয়ালঘরে বেঁধে রেখেছেন। প্রচন্ড শীত থেকে রক্ষা করতে পশুগুলোকে চটের বস্তা ও পাতলা কম্বল জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এ নিয়ে খামারি ও কৃষকরা দুশ্চিন্তা করলেও উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী গবাদি পশুর চিকিৎসা করিয়ে অনেক গরু সুস্থ হচ্ছেন বলেও জানা গেছে। উপজেলাব্যাপী আনুমানিক ৩ শতাধিক গরু ক্ষুরা রোগে ও ৫ শতাধিক গরু শীতকালীন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলাব্যাপী মোট ৭২টি গরুর খামার ও ৪৯টি ছাগলের খামার রয়েছে। সর্বমোট এক লাখ ৫ হাজার গরু এবং এক লাখ ৩৫ হাজার ছাগল রয়েছে। ইতোমধ্যেই চলতি মাসে আনুমানিক ১২০টি ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত গরু পাওয়া গিয়েছিল। প্রতিটি গরুকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিহ্নিত করে 'এফএমডি' ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চলতি মাসে সর্বমোট ৪১৬টি গরুকে ক্ষুরা রোগের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। শীতকালীন রোগ সর্দি, কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া আক্রান্ত গবাদি পশুকেও ভ্যাকসিন দিয়ে খামারি ও কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। খামারি আব্দুর রাজ্জাক জানান, 'আমার খামারে ছোট-বড় মাঝারি ৯টি গরু আছে। তার মধ্যে হঠাৎ করেই একটি গরুর শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে দেখা যায়। জিহ্বা, দাঁতের মাড়ি দিয়ে লালা ঝরছিল। পায়ের ক্ষুরের মাঝে ঘা দেখা দিয়েছিল। এ কারণে দ্রম্নত উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে গেলে সেখানে আমার সব গরুকে ভ্যাকসিন দিয়েছে। দুই সপ্তাহ আক্রান্ত গরুকে নিয়মিত ওষুধ খাওয়ানো ও নির্দেশনা মানায় গরুটি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।' উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর হোসেন জানান, 'শীতকালীন সময়ে বিভিন্ন রোগে গবাদি পশু আক্রান্ত হয়। তবে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। এখন পর্যন্ত আক্রান্ত কোনো গরু বা ছাগল মারা যায়নি। ভ্যাকসিন ও চিকিৎসা দেওয়ার পর সবগুলোই সুস্থ আছে। তিনি আরও বলেন, ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত পশুকে সুস্থ পশু থেকে আলাদা রাখতে হবে। অসুস্থ পশুর ক্ষত পটাশ মেশানো পানি (০.০১ শতাংশ পটাশিয়াম পার ম্যাঙ্গানেট) দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে। ফিটকিরির পানি ১০ গ্রাম (২ চা চামচ) ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে হবে। সোহাগার খৈর গুঁড়া করে মধু মিশিয়ে মুখের ঘায়ে প্রলেপ দিতে হবে। নরম খাবার দিতে হবে। পশুকে শুষ্ক ও ছায়াযুক্ত স্থানে মেঝেতে রাখতে হবে। কোনো অবস্থাতেই কাদা মাটি বা পানিতে রাখা যাবে না।