কর্মক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারী তিনগুণ বেশি কাজ করেন

প্রকাশ | ২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

মো. জিয়াউর রহমান, রানীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও)
দেশে কর্মজীবী পুরুষের চেয়ে কর্মজীবী নারীরা তিনগুণ বেশি কাজ করে। দেশে বর্তমানে সাড়ে ছয় কোটিরও বেশি নারী-পুরুষ কর্মজীবী। গড় হার হিসাবে পুরুষ ৭০ শতাংশ এবং নারী ৩০ শতাংশ। কৃষি ও গার্মেন্টে নারী শ্রমিকদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় আনুপাতিক হারে নারী কিছুটা বেড়ে গেছে। জনপ্রশাসন ও অন্যান্য চাকরিতে নারী-পুরুষের আনুপাতিক হার এখনো ৫০:৫০ হয়নি। দেশে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাওয়া এবং নারীর কাজের গতি পুরুষের চেয়ে বেশি হওয়ায় টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ঠ (এসডিজি) অর্জনের পঞ্চম অধ্যায়ে বাংলাদেশ দ্রম্নত এগিয়ে যাচ্ছে। আশা করা হয়েছে, নির্ধারিত সময়েই তা অর্জিত হবে। জাতিসংঘ ঘোষিত সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল (এসডিজি) পূরণে হাতে সময় আছে ৯ বছর। ২০১৬ সালে এসডিজি শুরু হয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ সদস্য দেশগুলোর এসডিজি পূরণের কথা বলা হয়েছে। এসডিজিতে রয়েছে ১৭টি অধ্যায়। বাংলাদেশ এসডিজির সবগুলো অধ্যায় নিয়ে কাজ করছে। এসডিজির পঞ্চম অধ্যায়ে রয়েছে 'জেন্ডার ইকু্যয়ালিটি' বা নারী-পুরুষের সমতা। দেশে নারী-পুরুষের সমতায় হাতেগোনা কয়েকটি সেক্টর কাছাকাছি পৌঁছেছে। তবে বেশিরভাগ সেক্টর এখনো জেন্ডার ইকু্যয়ালিটির অবস্থানে নেই। এই সেক্টরগুলোকে চিহ্নিত করে ইকু্যয়ালিটি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। অতীতে বেশিরভাগ নারী শিক্ষকতা পেশা বেছে নিয়েছেন। শিল্প খাতে নারী শ্রমিকের সংখ্যা ছিল খুবই কম। একবিংশ শতকে কর্মজীবী নারীর চিত্র অতীতের চেয়ে বিস্তর ফারাক। এমন কোনো সেক্টর নেই, যেখানে নারী কর্মজীবী নেই। জনপ্রশাসন, শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী, সেনাবাহিনী, বিমান সেনা, নৌসেনা, সিভিল অ্যাভিয়েশন, পুলিশ,র্ যাব, আনসার, স্বাস্থ্য, ব্যাংক বীমা, অর্থলগ্নি ও সঞ্চয় প্রতিষ্ঠান, নির্মাণকর্মীসহ বিভিন্ন শাখা মিলে প্রায় দেড় কোটি নারী প্রধান নির্বাহী, শীর্ষ নির্বাহী, উচ্চপদের কর্মকর্তা থেকে কর্মচারী পদে নিয়োজিত আছেন। গণমাধ্যম ও শিল্পী সত্তার পেশাকেও বেছে নিচ্ছেন নারী। এর বাইরে কৃষি কাজে প্রায় এক কোটি ও শিল্প খাতে অন্তত ৪০ লাখ নারী শ্রমিক রয়েছেন। সূত্র জানায়, গার্মেন্ট শিল্পে নারী ও পুরুষ শ্রমিকের অনুপাত ৭৫:২৫ অর্থাৎ চার ভাগের তিন ভাগই নারী শ্রমিক। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরোর (বিবিএস) এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়ে যাওয়ায় তারা 'ইকোনমিক্যালি অ্যাকটিভ'। তারা কাজের জন্য বেতন ও মজুরি পাচ্ছেন এবং মূল্য সংযোজন অর্থনীতিকেও সমৃদ্ধ করছেন। দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তির মূলধারায় নারীর অবদান দিন দিন বাড়ছে। বিবিএস সূত্রের হিসাব, প্রতিবছর গড়ে অন্তত দুই লাখ করে নারী কৃষি শিল্প ও সেবা খাতে যোগ হচ্ছে। অর্থনীতির বৃহত্তর তিনটি বড় খাত কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। কৃষি প্রধান উত্তরাঞ্চলে গত শতকের শেষ দশকেও কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ পুরুষের চেয়ে কম ছিল। কৃষিতে যন্ত্র যুগের আবির্ভাবে নারীর অংশগ্রহণ আগের চেয়ে বেড়েছে। ফসলের মাঠে পুরুষই অলস সময় কাটায় বেশি। বর্তমানে নারী কৃষক সকালের কাজ সেরে পাওয়ার টিলার নিয়ে জমিতে যায়। চারা রোপণের কাজ করে নারী। সেচসহ পরিচর্যার অর্ধেকের বেশি কাজ, ধান সিদ্ধ, শুকানের কাজ করে নারী। যন্ত্রে ধান মাড়াই-কাটাইয়ে নারী-পুরুষের অংশগ্রহণ আধাআধি। আবাদ পরিচর্যার সঙ্গে শিশু পরিচর্যাও করতে হয় নারীকে। নারীকেই করতে হয় রান্নাবান্না ও গৃহস্থালি কাজ। একজন কর্মজীবী নারী অর্থের বিনিময় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা কাজের পর ঘরে গিয়ে দৈনিক গড়ে ৩ ঘণ্টা ৪৬ মিনিট গৃহস্থালি কাজ করে। আর পুরুষরা ঘরের কাজ করে মাত্র গড়ে ১ ঘণ্টা ১৪ মিনিট। দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও অঞ্চলের এক নারী সাফ বললেন 'পুরুষরা এখন বাবুগিরি করতে ওস্তাদ'। দেশের বৃহত্তর চিত্র বলে দেয়, কৃষিতে নারী কতটা এগিয়েছে। নারীরা গৃহস্থালি কাজ, সন্তান লালন-পালনসহ জমিতে ফসল ফলানোর দায়িত্ব নিয়েছে। এদিকে শিল্প উদ্যোক্তা হিসেবে নারী এখনো পিছিয়ে আছে। দেশে কলকারখানার সংখ্যা অন্তত ৪২ হাজার। এর মধ্যে দুই হাজার ১৭৭টি ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় কারখানার মালিক নারী। মহানগর শহরে স্থায়ী ও অস্থায়ী গৃহকর্মী হিসাবে কাজ করছে প্রায় ১০ লাখ নারী।