উপহারের কবুতরে ভাগ্য বদল

প্রকাশ | ২৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

মাফুজা আফরিন মনি, কালীগঞ্জ (গাজীপুর)
নিজের খামারে কবুতর পরিচর্যা করছেন রুবেল সিকদার -যাযাদি
বন্ধুর উপহার দেওয়া পাঁচ জোড়া কবুতর ভাগ্য বদলে দিয়েছে এক সময়ের বেকার গাজীপুরের রুবেল সিকদারের (৩৪)। তার কবুতরের খামারে এখন বিভিন্ন জাতের ১০০ জোড়া কবুতর। রুবেল কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের পানজোরা গ্রামের আব্দুল কাদির সিকদারের ছেলে। এখন থেকে প্রায় বছর দুই আগে মোটামুটি বেকারও ছিলেন রুবেল সিকদার। মাঝে মধ্যে কিছু শাকসবজি ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করতেন। সবজি বিক্রির আয় দিয়ে স্ত্রী, সন্তান ও বাবা-মা নিয়ে কোনো রকম জীবিকা নির্বাহ করতেন। একদিন এক বন্ধুর দাওয়াতে তার বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে উপহার হিসেবে পান পাঁচ জোড়া কবুতর। উপহারের এই কবুতর দিয়ে শখের বসে শুরু করেন কবুতরের খামার। তখন থেকেই আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। রুবেলের খামারে এখন বিভিন্ন জাতের ১০০ জোড়া কবুতর। শুধু তাই নয়, এসব কবুতর দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন ২ জন প্রশিক্ষিত যুবক। সম্প্রতি রুবেল সিকদারের বাড়ির তৃতীয়তলার ছাদে পস্নাস্টিকের বেড়া ঘেরা কবুতরের খামার দেখতে গিয়ে কথা হয় কবুতর পালন নিয়ে। রুবেল জানান, দেড় বছর আগে বন্ধুর দেওয়া পাঁচ জোড়া দিয়ে শুরু করেন কবুতরের খামার। সেখান থেকে এখন ১০০ জোড়া। তবে এই দেড় বছরে সময়ের মধ্যে মাঝখানে বড় ধরনের একটি ধাক্কা তিনি পার করছেন। তার খামারের বেশ কিছু কবুতর মারা যায়। সেখান থেকে তিনি তার পরিশ্রম ও মেধা দিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তবে শখের বসে কবুতর পালন করতে গিয়ে তিনি মনে করছেন এটা বাণিজ্যিকভাবে পালন করা জরুরি। সেই চিন্তা মাথায় রেখে তিনি সামনে এগিয়ে চলেছেন। কবুতরের পাশাপাশি খামারে তিনি চাষ করছেন দেশি জাতের মুরগি, ছাগল ও বিদেশি জাতের গাভি। রুবেল জানান, তার কবুতর খামার দেখে প্রতিবেশীসহ এলাকার অনেকে কবুতর পালনে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও শখের খামারিরা তার কাছ থেকে কবুতর কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে তিনিও বিভিন্ন জেলা থেকে পছন্দমতো কবুতর কিনে আনছেন। রুবেলের খামারে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার ও সর্বনিম্ন ১ হাজার টাকা দামের বিভিন্ন জাতের কবুতর পাওয়া যায়। খামারে সিরাজী, চিলা, রেস, বুম্বাই, মিসরীয় বুম্বাই, পাকিস্তানি কিং, মিসরীয় মেগপাই, ডায়মন্ড কিং, বিউটি কিং, দেশিসহ নানা জাতের কবুতর রয়েছে। রুবেল বলেন, 'কবুতর পরিচর্যার জন্য দু'জনকে নিয়োগ দিয়েছি। এরা খামার দেখভাল করেন। এছাড়াও গরু, ছাগল ও মুরগির খামারে আরও ছয়জন নিয়োগ দিয়েছি। এরা সবাই প্রশিক্ষিত। উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের লোকজন সবসময় খোঁজ নেন। কোনো সমস্যায় ফোনে যোগাযোগ করলেও তারা ছুটে আসেন। তাদের পরামর্শে কবুতরকে নিয়মিত টিকা দেওয়া হয়।' রুবেল জানান, তার খামারে এখন সাড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার কবুতর আছে। প্রতি মাসে কবুতরের খাবার কিনতে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা লাগে। দু'জন কর্মীকেও বেতন দিতে হয়। সব খরচ বাদে কবুতরের খামার থেকে মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় হয় তার। বেকার যুব সমাজের উদ্দেশে রুবেল সিকদার বলেন, 'কোনো কাজ ছোট নয়। ইচ্ছাশক্তি থাকলে ছোট থেকেই শুরু করা যায়। দুই জোড়া দিয়ে শুরু করেন, দেখবেন এক বছরের মধ্যেই এর সুফল পাচ্ছেন।' প্রতিবেশী শাহ আলম সিকদার (৩৯) বলেন, 'প্রতিবেশী ছোট ভাই রুবেল কবুতরের খামার করেছে। সেখানে এক মাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রায় ৬ মাস ধরে কাজ করছি। এখানে বেশ ভালো বেতনও পাচ্ছি। আলহামদুলিলস্নাহ এই খামারের বেতন দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালোই চলছে।' উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ইউসুফ হাবিব বলেন, 'রুবেল সিকদার একজন সফল উদ্যোক্তা। কেননা তিনি পাঁচ জোড়া কবুতর নিয়ে শুরু করলেও তার খামারে এখন ১০০ জোড়ার বেশি কবুতর। তাকে দেখে আশপাশের অনেক বেকার যুবক কবুতর চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।