ফুতো বেগুনের কদর বাড়ছে

প্রকাশ | ২২ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা
হাটহাজারীর ঐতিহ্যবাহী ফুতো বেগুনের কদর বেড়েছে। ব্রিটিশ আমল থেকে হাটহাজারীর কৃষকরা এ বেগুন চাষ করে আসছে। সুস্বাদু এ বেগুনের খ্যাতি দেশের গÐি পেরিয়ে মধ্যপ্রাচ্যেও বেশ সমাদৃত হচ্ছে। এ বেগুনের তুলনামূলকভাবে পোকামাকড়ের আক্রমণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী শুঁটকি দিয়ে ফুতো বেগুনের স্বাদই অসাধারণ। শিমের বিচি, ছোট চিংড়ি ও যে কোনো মাছের সঙ্গে ফুতো বেগুনের তরকারিও বেশ সুস্বাদু। ক্রেতাদের ব্যাপক চাহিদা এবং লাভজনক হওয়ায় চাষিরাও বছরের পর বছর এ বেগুন চাষে ঝুঁকে পড়ছে। হাটহাজারী উপজেলা কৃষি কমর্কতার্ শেখ আবদুল্লাহ ওয়াহেদ জানান, উপজেলায় অন্তত ২ হাজার কৃষক ২৫০ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ করেন । এর মধ্যে শুধু ২০০ হেক্টরেই ফুতো বেগুন চাষ করা হয়। শুষ্ক মৌসুমে দো-অঁাশ ও বেলে দো-অঁাশ মাটিতে এ বেগুন ভালো চাষ হয়। ৫ থেকে ৬ মাস ফলন দেয় এ বেগুন। এ বেগুন সাদা ও কালছে বেগুনি রঙের হয়ে থাকে। ডিম্বাকার ও গোলাকার আকারের অপেক্ষাকৃত ছোট হলেও এটি বেশ সুস্বাদু। প্রতি হেক্টর জমিতে ১৫ থেকে ২০ টন হিসেবে বছরে ৩ থেকে ৪ হাজার টন ফলন পাওয়া যায়। প্রতি টন গড়ে ৫০ হাজার টাকা হিসেবে হাটহাজারীতে বছরে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার ফুতো বেগুন উৎপাদিত হয়। হালদা নদীর অববাহিকা ছাড়াও হাটহাজারী পৌর এলাকার আলীপুর, চন্দ্রপুর, সুজানগর, মোহাম্মদপুর, মৌলবী পাড়া, রঙ্গীপাড়া, ফায়ার সেন্টার, ফতেপুর ইউনিয়নের ঘাটক‚ল, ভবানীপুর, মদনহাট, মিজার্পুর ইউনিয়নের চারিয়া, মেখল ইউনিয়ন, নন্দিরহাট, ছড়ারক‚ল ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ফুতো বেগুন বেশি চাষ হয়ে থাকে। পাশ্ববতীর্ রাউজান ও ফটিকছড়ির কিছু এলাকায় ফুতো বেগুনের চাষ হয়। সরেজমিন হাটহাজারী পৌর এলাকার সুজানগর গ্রামের কৃষক এরশাদ ও নবী সাথে কথা হয়। তারা প্রত্যেকেই ২০ শতক জায়গায় ফুতো বেগুন চাষ করেছে। খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। প্রতি সপ্তাহে ১৫০ থেকে ২০০ কেজি পযর্ন্ত তারা ফলন পেয়েছে। যখন আগাম ফলন পেয়েছে তখন প্রতি কেজি ১০০ টাকা হিসেবে হাটহাজারী সদরের পাইকারি দোকানদারদের কাছে বিক্রি করেছে। এখন বেগুনের পূণর্ মৌসুম হওয়ায় প্রতি কেজি ৩০ টাকা হারে পাইকারি বিক্রি করছেন। তারা জানান, দাম বেশি ও লাভজনক হওয়ায় অনেকে বড় জাতের বেগুনি রঙের বেগুনকে ফুতো বেগুন বলে চালিয়ে দিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। কৃষক আবুল কালাম (৫৯) বলেন, ‘দীঘর্ ৩৫ বছর ধরে চাষের সঙ্গে জড়িত। হাটহাজারী বেগুন আমরা প্রতিবছরই চাষ করি। আমার পূবর্পুরুষরাও এ বেগুন চাষ করে আসছে। প্রচুর চাহিদা রয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে তাই অনেকে এ বেগুন কিনতে ক্ষেতে পযর্ন্ত চলে আসে। হাটহাজারী সদরের কঁাচা বাজারের আড়তদার আবু তৈয়ব বলেন, এখন সপ্তাহে হাটহাজারীর বিভিন্ন বাজারে ১০ হাজার কেজির অধিক ফুতো বেগুন বিকিকিনি হয়ে থাকে। ফুতো বেগুন আগাম বাজারে আসলে কেজি ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন পাইকারি প্রতি কেজি ২৮-৩০ টাকা যা খুচরা ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হয়। প্রতি বাজারবারে আমরা ৮ জন আড়তদার প্রায় এক হাজার কেজি ফুতো বেগুন কৃষক থেকে ক্রয় করি। বাজারের ২০০ সবজি বিক্রেতার মধ্যে শতাধিক বিক্রেতা এ বেগুন ক্রয় করে ক্রেতাদের নিকট বিক্রি করে। এ ছাড়া নগরীর বহদ্দরহাট, অক্সিজেন কঁাচাবাজার, স্টিল মীল বাজার, আগ্রাবাদ কামাল বাজার, পাহাড়তলী কঁাচাবাজার, রেয়াজ উদ্দিন বাজারেও আমরা সরবরাহ করে থাকি।’