দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে ইছামতি

প্রকাশ | ২২ জানুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী, পাবনা
পাবনার ইছামতি নদী এভাবেই ময়লা-আবজর্নায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে Ñযাযাদি
এক সময়ের স্রোতস্বিনী ইছামতি নদীর দু’পাড়ে অবৈধ দখল, শহরের সব ময়লা-আবজর্নার ভাগাড়ের অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে পাবনার এ ঐতিহ্যবাহী নদীটি। আর নদী দখল-দূষণ রোধে নেই কাযর্করী ব্যবস্থা। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, বাংলার নবাব ইসলাম খঁা ১৬০৮-১৬১৬ খ্রিস্টাব্দ পযর্ন্ত দায়িত্ব পালনকালে সৈন্য পরিচালনার সুবিধায় পদ্মা ও যমুনা নদীর সংযোগ স্থাপনাথের্ পাবনা মধ্যশহরে একটি খাল কাটেন, যার নাম দেন ইছামতি। এক সময়ের খরস্রোতা এই নদী দিয়ে চলত নৌকা-ছোট জাহাজ। এই নদী দিয়েই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার নিজস্ব বোটে করেই জমিদারী দেখাশুনা করতে শিলাইদহ-শাহজাদপুর কাচারিতে আসা-যাওয়া করতেন। কিন্তু সেই স্রোতস্বিনী প্রবহমান ইছামতি তার যৌবন হারিয়ে আজ মৃত্যুর দিকে ক্রমাগত এগিয়ে চলেছে। ইছামতি নদীর অস্তিত্বই বিপন্নের পথে। মধ্যশহরে প্রবাহিত ইছামতি নদীকে এখন সবাই আক্ষেপ করে বলেন ‘ময়লা- আবজর্নার ভাগাড়’ বা ‘পৌরসভার ড্রেন’। নদীর দুই পাড় দখল করে বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মহোৎসব চলছে। জানা যায়, পাবনা থেকে বেড়া পযর্ন্ত ৫৫ কিলোমিটার দীঘর্ এ নদীর প্রায় অধের্ক এখন নদর্মা। এর মধ্যে পৌর এলাকার মধ্যে রয়েছে পঁাচ কিলোমিটার। নদী ভরাটের কারণেই সৃষ্টি হয়েছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, বতর্মানে ময়লা-আবজর্নার দুগর্ন্ধ ও মশা-মাছির আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে। বতর্মানে উৎসমুখের কাছে (বাংলা বাজারে ¯øুুইস গেট) প্রায় ভরাট করে ফেলায় এ নদী হয়ে পড়েছে প্রাণহীন। ১৯৭৪ সাল পযর্ন্ত এ নদীতে প্রবাহ ছিল। এ নদী পাবনার উত্তরপ্রান্ত দিয়ে পূবের্ আতাইকুলার পাশ দিয়ে নদীরূপে এগিয়ে গেছে। সঁাথিয়া সদরের পাশ দিয়ে বেড়া সদরের বৃশালিখা এলাকার হুরাসাগর নদীতে গিয়ে যমুনায় মিশেছে। সূত্র জানায়, ১৯৭৮ সালে পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু করার সময় ইছামতির সাথে বড়াল নদের সংযোগ মুখে নিমার্ণ করা হয় ¯øুইস গেট। এ ছাড়া বেড়ার কাছেও ইছামতির প্রান্তখাত বন্ধ করে দেয়া হয়। বেড়া থেকে আতাইকুলা পযর্ন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটার ইছামতি পুনখর্নন করা হয়। বেড়া পাম্প হাউসের সাহায্যে খননকৃত অংশের নদীতে পানি ভরে রাখা হচ্ছে সেচ কাজের জন্য। কিন্তু অবশিষ্ট ২০ কিলোমিটার নদী ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। শহরের নদর্মাগুলোর চেয়ে ইছামতির তলদেশ উঁচু হয়ে উঠেছে। দখল হয়ে গেছে নদীর কিনারা। পরিবেশবিদ প্রফেসর শাহনেওয়াজ সালাম বলেন, ইছামতি নদী মরে যাওয়ার বিরূপ প্রভাবে শহরের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে বিশুদ্ধ পানির সংকটের পাশাপাশি বিশুদ্ধ বাতাসে নিঃশ্বাস নেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। নদীকেন্দ্রিক ফসল উৎপাদনও প্রায় বন্ধ। পাবনা সদর আসনের পরপর তিনবারের নিবাির্চত সাংসদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স বলেন, নদী উদ্ধারের বিষয়টি অত্যন্ত জটিল। এই ইস্যু এখন স্থানীয় নয়, জাতীয় ইস্যু। আর প্রধানমন্ত্রী নিজেই এই প্রকল্পের তদারকি করছেন। সাংসদ প্রিন্স বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নজর পাবনার ইছামতি নদীর দিকেও আছে। পাবনাবাসীর প্রাণের দাবি ইছামতি নদীর অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ, নদীর পানির প্রবাহ ফিরিয়ে আনা, বিনোদনের ব্যবস্থা সবই হবে।