রঙিন টিন আর পাকা দেয়ালে নতুন স্বপ্ন

২২ মার্চ নতুন ঘর পাচ্ছেন আরও ৪ লাখ ৮৫ হাজার পরিবার

প্রকাশ | ১৯ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

স্বদেশ ডেস্ক
'আশ্রয়ণ-২' প্রকল্পটির চতুর্থ ধাপে সারা দেশে ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৯২টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ঘর দেবে সরকার। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পাঠানো তালিকার ভিত্তিতে গৃহহীন মানুষকে এসব ঘর দেওয়া হবে। এর জন্য সরকারের ৬ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা ব্যয় হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২২ মার্চ আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ৪র্থ পর্যায়ের উপকারভোগী পরিবারের কাছে জমি ও গৃহ প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। এদিন তিনি ২২ উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন ঘোষণা করবেন। এক একটি পরিবার ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা মূল্যের পাকা ঘর পাবে। যার মূল্য আগে নির্ধারণ করা হয়েছিল ২ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় ৫ হাজার ১৪৯টি পাকা ব্যারাক, চরাঞ্চলে ৫ হাজার ৭৮টি সিআইসিট ব্যারাক, ৪ হাজার ৩৯৩টি সেমি পাকা ব্যারাক ও ৬০টি বহুতল ভবন নির্মাণ হবে। ১ হাজার ১২০টি কমিউনিটি সেন্টার, ৫৮০টি বিশেষ ডিজাইনের ঘর, ৫৬৫টি ঘাটলা, অভ্যন্তরীণ রাস্তা, বক্স কালভার্ট, পাকা ড্রেন ও সেস্নাপ প্রোটেকশন নির্মাণ করা হবে। সব প্রকল্প গ্রামে অগভীর-গভীর নলকূপ ও অভ্যন্তরীণ রাস্তাও থাকবে। আগামী ২২ মার্চ ঘর প্রদান উপলক্ষে গত শনিবার জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট- স্টাফ রিপোর্টার, রাঙামাটি ও কাউখালী প্রতিনিধি জানান, রাঙামাটির কাউখালীতে উদ্বোধনের অপেক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত চতুর্থ পর্যায়ের ৪১টি ঘর। আগামী ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী চতুর্থ ধাপে নির্মিত ঘরগুলো উদ্বোধন করবেন। জমিসহ আধা-পাকা ঘর পেয়ে খুশি ভূমিহীন গৃহহীন পরিবারগুলো। তাদের মধ্যে এক উপকারভোগী বিধবা নারী বাসন্তী মজুমদার, ছোট্ট একটা বেড়ার টিন, কাঠ, টিনের দরজা ও জানালারও ভগ্নদশা। এমন জরাজীর্ণ ঘরের টিন নষ্ট হওয়াতে পলিথিন টাঙিয়েছেন উপরে। সেই ঘরে বসবাস করতেন প্রতিবন্ধী সন্তান নিয়ে। আজ এমন একটি ঘর পেয়ে খুশিতে বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর জন্য প্রাণ ভরে দোয়া করি। আজ তার কারণে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছি।' ২২ মার্চ ভূমিহীনদের হাতে দলিল তুলে দেওয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে ঘাগড়া ইউনিয়নে ১৪টি, কলমপতি ইউনিয়নে ১১টি, বেতবুনিয়া ইউনিয়নে ১১টি ও ফটিকছড়ি ইউনিয়নে ৫টি। কাউখালী ইউএনও সৈয়দা সাদিয়া নূরিয়া বলেন, 'প্রতিনিয়ত আশ্রয়ণ-২ নির্মাণ স্থলে গিয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর এই বিশেষ প্রকল্পের কাজ তদারকি করেছি। উপজোলা মনিটরিং টিমও নিয়মিত মনিটরিং করেছে। আগামী ২২ মার্চ সারাদেশে প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে কাউখালী উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের ঘরগুলোও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন। উলেস্নখ্য এর আগে মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে ভূমি-গৃহহীন ১০৯ পরিবারের মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে। আমাদের চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আগামী ২২ মার্চ সারা দেশের ন্যায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়ও চতুর্থ পর্যায়ে ঘর প্রদান উদ্বোধন করা হবে। উদ্বোধন অনুষ্ঠান উপলক্ষে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৪র্থ পর্যায়ে হালনাগাদ নিরুপিত তালিকা অনুযায়ী সদর উপজেলায় ৭৫টি, গোমস্তাপুর উপজেলায় ৭৫টি এবং নাচোল উপজেলায় ৮০টিসহ মোট ২৩০টি বরাদ্দ পাওয়া ঘর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনাসমূহ অনুসরণপূর্বক ঘরের গুণগতমান বজায় রেখে নির্মাণকাজ শতভাগ শেষ করা হয়েছে। এ হিসেবে মুজিববর্ষ উপলক্ষে এ জেলার পাঁচটি উপজেলায় ১ম পর্যায়ে মোট ১৩১৯টি, ২য় পর্যায়ে ২৬১৯টি, ৩য় পর্যায়ে ৬৫১টি এবং ৪র্থ পর্যায়ে ২৩০টিসহ মোট ৪৮১৯টি ঘর ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের ('ক' শ্রেণির) অনুকূলে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেই সঙ্গে উপকারভোগী পরিবারের অনুকূলে দুই শতাংশ করে সরকারি খাসজমি বন্দোবস্ত এবং কবুলিয়ত ও নামজারি প্রক্রিয়া সম্পাদন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে গত ২১ জুলাই ২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিত উপকারভোগী পরিবারের কাছে জমি ও গৃহ প্রদান কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ৩য় পর্যায়ের ২য় ধাপে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত উপজেলা ঘোষণা করেছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, গোমস্তাপুর, নাচোল ও ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জের কাছে পাওয়া প্রস্তাবপত্র, উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটি ও যৌথ সভার সিদ্ধান্ত এবং আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করার লক্ষ্যে জেলা টাস্কফোর্স কমিটির বিশেষ সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক এ জেলার বাকি চারটি উপজেলায় হালনাগাদ নিরূপিত তালিকা অনুযায়ী 'ক' শ্রেণিভুক্ত পুনর্বাসনযোগ্য আর কোনো পরিবার না থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাকে আগামী ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত জেলা হিসেবে ঘোষণা করবেন। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা অন্য কারণে এ শ্রেণিতে নতুন কোনো অন্তর্ভুক্তি হলে পরবর্তীতে তা দ্রম্নত সময়ে পুনর্বাসন করা হবে। কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, 'আশ্রয়ণে অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার' এই সেস্নাগানকে সামনে রেখে গাজীপুরের কালীগঞ্জে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের জীবন-মানের পরিবর্তন শুরু হয়েছে। মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রম্নতি বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা। এরই ধারাবাহিকতায় আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় ১ম ও ২য় পর্যায়ে উপজেলায় ১২৭টি পরিবার পেয়েছে দুই শতাংশ জমি ও একটি সেমিপাকা ঘর। এছাড়াও আগামী বুধবার (২২ মার্চ) আরও ২২টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ ঘর হস্তান্তর করা হবে। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উদ্বোধনের অপেক্ষায় ২২টিসহ এ উপজেলায় ১৪৯টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ ঘর হস্তান্তর করা হবে। আর সর্বশেষ এই হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে এ উপজেলা হবে ভূমিহীনমুক্ত। কালীগঞ্জ উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১ম পর্যায়ে জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের পুনসহি মৌজায় ০.১৮ একর জমিতে ৯টি, তুমুলিয়া ইউনিয়নের সোম মৌজায় ০.১৪ একর জমিতে ৭টি এবং বক্তারপুর ইউনিয়নের ব্রাহ্মণগাঁও মৌজায় ০.১৮ একর জমিতে ৯টিসহ মোট ২৫টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ ঘর প্রদানের মাধ্যমে এ উপজেলায় কার্যক্রম শুরু হয়। সরেজমিন উপজেলার পুনসহি, সোমবাজার, দক্ষিণ রাজনগর, বক্তারপুর, ব্রাহ্মণগাঁও এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পে দেখা গেছে, সময়ের সাথে এখন বদলে গেছে ছিন্নমূল মানুষের যাপিত জীবন। কবির ওই ভেন্না পাতার ছাউনি থেকে তারা এখন বসবাস করছে রঙিন টিন আর পাকা দেয়ালের আধাপাকা বাড়িতে। সেই বাড়িতেই করছেন শাকসবজির আবাদ। কেউবা করছেন হাঁস-মুরগি, ছাগল-গরু পালন। সন্তানদের পাঠাচ্ছেন স্কুলে। বসতির দুশ্চিন্তা ছেড়ে নিশ্চিন্ত মনে কাজ করে এগিয়ে নিচ্ছেন সংসার। সংসারে এসেছে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা। বসবাসের জন্য সরকারের দেওয়া এই সুবিধাটি পেয়ে মহাখুশি আশ্রয়হীন মানুষগুলো। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পাওয়া উপজেলার আশ্রয়ণের বাসিন্দা শান্তি রবি দাস, লিলি বেগম, নয়ন চন্দ্র সূত্রধর, বাতেন, প্রতিবন্ধী সাথী আক্তারসহ আরও অনেকেই জানান- কিছু দিন আগেও তারা ভাবেননি নিজেদের ভালো একটা ঠিকানা হবে। এখন সেটি হয়েছে, বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে পারছেন। তাদের হাঁস-মুরগি পালনসহ নানা কাজ করার সুযোগ হয়েছে। বাস্তব হলেও তারা সবাই এটাকে এটা স্বপ্নের মতোই মনে করছেন। সৃষ্টিকর্তার কাছে শেখের বেটির জন্য সবাই দোয়া করেন। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম শোভন বলেন, প্রধানমন্ত্রী উপজেলার হতদরিদ্রদের জন্য যাদের বসবাসের কোনো ঠিকানা ছিল না তাদের স্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছেন। এটা সত্যিই বিস্ময়কর। এখন ওই মানুষগুলো তাদের ভাগ্যের চাকা নতুনভাবে ঘোরাতে শুরু করেছেন। কালীগঞ্জ ইউএনও মো. আসসাদিকজামান জানান, 'আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা তাদের জীবন-মান উন্নয়নে নিজেরাই এগিয়ে এসেছেন। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করছি। এখানকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা ইতোমধ্যে গঠন করেছেন বেশ কয়েকটি সমবায় সমিতি। উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় কৃষি, মৎস্য, বস্নক-বাটিক, সেলাই কাজসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তারা। অনেকের একাডেমিক শিক্ষা না থাকলেও নানা প্রশিক্ষণে হয়ে উঠছেন স্বশিক্ষিত। জেলা প্রশাসন ও কালীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের নিয়মিত তদারকিতে ক্রমেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উন্নয়নের নানা দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা।' আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলাকে 'ক' শ্রেণির ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেছে উপজেলা প্রশাসন। শনিবার সকালে উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে জনপ্রতিনিধি ও উপজেলার প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে ইউএনও অংগ্যজাই মারমা বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, মুজিব বর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় আখাউড়া উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন করার লক্ষ্যে ৬৬৩টি পাকা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। চরনারায়ণপুর, চাঁনপুর, দেবগ্রাম, রুটি, সাতপাড়া, ঘাগুটিয়াসহ ২৬টি স্থানে ২ শতক ভূমিতে এসব ঘর নির্মাণ করা হয়। উপকারভোগীকে দলিলসহ এসব ঘর দেওয়া হয়েছে। আগামী ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী আখাউড়া উপজেলাসহ সারাদেশের ২২টি উপজেলাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভূমিহীন ও গৃহহীন ঘোষণা করবেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদ সদস্য সাইফুল ইসলাম, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তাপস চক্রবর্তী, মনিয়ন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুল আলম চৌধুরী, মোগড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এমএ মতিন, দক্ষিণ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান জালাল হোসেন, প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হান্নান খাদেম, সাংবাদিক নাসির উদ্দিন, জুটন বণিক, এমএ জলিল প্রমুখ। ভোলাহাট (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় দেশের ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত উপজেলা পর্যায়ের তালিকায় যুক্ত হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলা। এ উপজেলার এক হাজার ১২২ জন অসহায়, ভূমিহীন, গৃহহীন, দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষ রাস্তার ধারে খাস জমিতে, খোলা আকাশে কিংবা পরের জমিতে বসবাস করতে হবে না। বসবাস করবে নিজের আপন ঠিকানায়। সরেজমিন গেলে উপজেলার চরধরমপুর মুজিবপলস্নীর বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা কয়েস উদ্দিন বলেন, 'আমার নিজস্ব জমি না থাকায় প্রধানমন্ত্রী আমাকে এখানে ঘর উপহার দিয়েছেন। আমি খুব খুশী হয়েছি। এখানে ১০০টি পরিবার বসবাস করি। সবাই গৃহহীন ভূমিহীন ছিলাম। রাস্তার ধারে খাস জমিতে বসবাস করতাম। এখন সবাই নিজস্ব ঠিকানা পেয়ে খুব খুশি। হাঁস-মুরগি, গরু, সবজি চাষ করে বেশ ভালো মতো জীবন-যাপন করছি। এখানে শেখ হাসিনা খেলার মাঠ, মসজিদ, পানি, বিদু্যৎ, রাস্তা, স্কুল সব কিছুই করে দিয়েছেন। এখানে কোনো কিছুই কমতি নেই।' এদিকে কুলি পুকুরে গিয়ে দেখা যায় শারীরিক প্রতিবন্ধী নাজমুল হোসেন বলেন, 'এতদিন আমি খুব অবহেলিত ছিলাম। প্রধানমন্ত্রী আমার মতো প্রতিবন্ধীকে মনে রেখে উপহার হিসেবে যে বাড়ি দিয়েছেন এতে তার জন্য আজীবন দোয়া করব।' ইউএনও উম্মে তাবাসসুম বলেন, ভোলাহাট উপজেলায় কয়েক ধাপে এক হাজার ১২২টি ঘর খুব স্বচ্ছভাবে হয়েছে। এখন ভূমিহীন গৃহহীন মানুষেরা স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করছেন। তারা নিজ ঠিকানা পেয়ে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। আগামী ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী ভোলাহাট উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত উপজেলা ঘোষণার তালিকায় রেখেছেন। ইন্দুরকানী (পিরোজপুর) প্রতিনিধি জানান, প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলাকে ক- শ্রেণির ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণার পূর্ব প্রস্তুতি উপলক্ষে প্রেস ব্রিফিং করেছেন ইউএনও লুৎফুন্নেসা খানম। আগামী ২২ মার্চ বুধবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী সারা দেশের ন্যায় ইন্দুরকানীতে উপকারভোগীদের মাঝে ৭৪টি গৃহ হস্তান্তর করে এ উপজেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত এলাকা ঘোষণা করবেন। শনিবার ইউএনও'র অফিস কক্ষে উপজেলায় কর্মরত সকল গণমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে এ প্রেস ব্রিফিং করেন তিনি। \হপ্রেস বিফিংয়ে ইউএনও লুৎফুন্নেসা খানম জানান, আগামী ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী এ উপজেলাকে ক-শ্রেণির ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করবেন। ওই দিন উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। সে অনুযায়ী উজেলার ৭৪ জন উপকারভোগীকে নিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জাহেদুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ৭৪ জন ভূমিহীন ও গৃহহীনকে জমি ও ঘরের দলিল হস্তান্তর করবেন। জুরাছড়ি (রাঙামাটি) প্রতিনিধি জানান, রাঙামাটির জুরাছড়ি উপজেলার পশ্চিমে বনযোগীছড়া ইউনিয়নের হাল্যারাম পাড়ার অধিকাংশ বাসিন্দা দিনমজুর ও জেলে। তাদের প্রায় সময় নুন আনতে পান্তা ফুরায়। দারিদ্র্যতায় বর্ষা এলেই যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার অবস্থা। সব সময় ভয়ে কাটে বর্ষাকাল। এখন আর সেই ভয় নেই। মুজিববর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ৪র্থ পর্যায়ে হাল্যারাম পাড়ার ২৯ পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। শুধু হাল্যারাম পাড়ায় নয়, জুরাছড়ি উপজেলায় ৭০ পরিবারের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে সেমি পাকা টিনসেট ঘর। এখন শুধুই উদ্বোধনের অপেক্ষা। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, মুজিববর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওয়াতায় ৪র্থ পর্যায়ে উপজেলার ভূমিহীন ও হতদরিদ্র পরিবারের জন্য গৃহ নির্মাণে ৭০টি ঘর নির্মাণের বরাদ্দ দেওয়া হয়। আগামী ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গৃহহীনদের জন্য নির্মাণকৃত এ ঘরগুলোর উদ্বোধন করবেন। বনযোগীছড়া ইউপি চেয়ারম্যান সন্তোষ বিকাশ চাকমা বলেন, যে সব হতদরিদ্র পরিবার প্রধানমন্ত্রীর উপহার গৃহ পাচ্ছে তারা খুবই খুশি। তাদের কাছে এখনো মনে হয় এ ঘর পাওয়া কাল্পনিক। সুবিধাভোগী এবং আমার ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। জুরাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ইমন চাকমা ও মৈদং ইউপি চেয়ারম্যান সাধনা নন্দ চাকমা বলেন, গৃহহীনদের জন্য ঘর ইতোমধ্যে শতভাগ নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা। ইউএনও জিতেন্দ্র কুমার নাথ বলেন, উপজেলার ৭০ জন গৃহহীনদের জন্য ঘরগুলো গুণগতমান নিশ্চিত করে খুবই সুন্দরভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। যারা পাচ্ছে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। নানিয়ারচর (রাঙামাটি) প্রতিনিধি জানান, রারামাটি নানিয়ারচরে ভূমিহীনদের জন্য নির্মিত ২৭টি ঘর উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে। ২২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পরই ঘরগুলো হস্তান্তর করা হবে। ঘরে বসবাস করার আগেই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নির্বাচিত ভূমিহীন পরিবারগুলো। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে যত দ্রম্নত সম্ভব তারা প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘরে বসবাস করতে চান। ৪র্থ পর্যায়ে নানিয়ারচর উপজেলায় ২৭টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে অধিকাংশ ঘর নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। অবশিষ্ট ঘরগুলো খুব অল্প সময়ের মধ্যে নির্মাণ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এই প্রকল্পের আওতায় নানিয়ারচরের ৪ ইউনিয়নে পাহাড়ি এলাকায় নির্মাণ করা হয়েছে ২৭টি ঘর। লাল ও সবুজ টিন সেডের আধা পাকা ঘরগুলো একটি সৌন্দর্যের আধারে পরিণত হয়েছে। পরিবারের সুপেয় পানির জন্য বসানো হয়েছে দুটি গভীর নলকুপ। বিদু্যৎ সংযোগের কাজও চলমান রয়েছে। এছাড়া ভূমিহীন পরিবারের সন্তানদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে আঙ্গিনা। তার পাশেই থাকবে প্রশস্ত রাস্তা। পাহাড়ের পাশে লাগাতে পারবে গাছ, সবুজ বেষ্টনীতে বসবাস করবেন হতদরিদ্র এই জনগণ। ইতোমধ্যে এই উপকারভোগীদের নামে জমির দলিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নানিয়ারচর ইউএনও সৈয়দা সাদিয়া নুরিয়া। বুড়িঘাট ইউনিয়নের উপকারভোগী বিধবা চম্পা বেগম বলেন, 'কোনো জমি না থাকায় স্বামীর মৃতু্যর পরে দুই সন্তান নিয়ে রাস্তার পাশে, বিভিন্ন মানুষের বাড়িতে থাকতাম। বিভিন্ন সময় মেম্বার-চেয়ারম্যানদের কাছে থাকার জন্য একটু জায়গা চেয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে এই ঘর পেয়ে আমি খুব খুশি হয়েছি।' ইউপি সদস্য মোস্তফা খান ও দিগন্ত চাকমা জানান, 'আমার এলাকায় যে আশ্রয়ণ প্রকল্প হয়েছে তাতে আমরা খুব খুশি। বিনামূল্যে দুই শতক জমিসহ পাকা ঘর পেয়ে এলাকার ভূমিহীনরাও খুব খুশি। এই ঘরে তারা খুব শান্তিতে বসবাস করতে পারবেন।' নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রগতি চাকমা বলেন, 'আমাদের পার্বত?্য এলাকায় ভূমিহীনদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু এলাকায় আরও অনেক ভূমিহীন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যদি আরও কিছু ঘর বরাদ্দ দিতেন তাহলে, অন্য ভূমিহীনদেরকে দিতে পারতাম।'