শিবচর ও ফটিকছড়িতে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সূর্যমুখীর হাসি

প্রকাশ | ২০ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

স্বদেশ ডেস্ক
সূর্যমুখীর হলুদের আভায় জ্বল জ্বল করছে ফসলের মাঠ। হাজারও সূর্যমুখী ফুলের নজরকাড়া রূপের দেখা মিলবে মাদারীপুরের শিবচর ও চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বিভিন্ন এলাকায়। যেখানে সবুজের মাঝে যেন হলুদ গালিচার বিস্তৃতি। গুনগুন শব্দে মৌমাছিদের ছুটোছুটি পুরো মাঠজুড়ে। ফসলের ক্ষেতের এমন দৃশ্য টানছে সৌন্দর্যপিপাসুদের। প্রতিনিধিদের পাঠানো বিস্তারিত খবর- শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি জানান, বর্তমানে সূর্যমুখী ফুলের সমারোহে মেতে উঠেছে শিবচর উপজেলার মাঠগুলো। আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকূলে থাকায় কৃষকরা সূর্যমুখী ফুলের বাম্পার ফলনের আশা করছেন। তেলজাতীয় অন্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখীর চাষ অনেক সহজলভ্য ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কৃষকরা এতে উৎসাহিত হয়ে উঠবেন বলে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে। শিবচর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, অল্প খরচ বেশি লাভ হওয়ায় সূর্যমুখী ফুলের চাষে আগ্রহী হচ্ছেন এখানকার কৃষকরা। সূর্যমুখী ফুলের চাষ করলে ফুল থেকে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়। উপজেলায় ২৫ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড সূর্যমুখী প্যাসিফিক হাইসান- ৩৩ সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এ যেন সবুজের মাঝে হলুদের সমাহার। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফুলের দিক পরিবর্তন হয়। সকালে পূর্ব দিকে তাকিয়ে থাকলেও বিকালে দিক পরিবর্তন করে ধাবিত হয় পশ্চিমে। সূর্যমুখীর বাগানগুলো এখন প্রকৃতিপ্রেমীদের উপভোগের বিষয় হয়ে উঠেছে। দলে দলে তারা ছুটে আসছেন এসব বাগানে। ছবি তুলে পোস্ট করছেন ফেসবুকে ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পড়ন্ত বিকালে সূর্যমুখীর এ জমিগুলোতে প্রকৃতিপ্রেমীদের বেশ সমাগম ঘটে। সংশ্লিষ্টরা জানান, সূর্যমুখী চাষের ৯০-১০৫ দিনের মধ্যেই কৃষকরা ফুল থেকে বীজ ঘরে তুলতে পারেন। প্রতি বিঘা জমিতে ১০-১২ মণ বীজ পাওয়া যাবে। বিঘাপ্রতি কৃষকরা ২৫-৩৫ হাজার টাকার বীজ বিক্রি করতে পারেন। বাহেরচর এলাকার কৃষক সোহাগ শীল বলেন, 'আমি ১০০ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। আমার সূর্যমুখী ফুলের জমি দেখার জন্য দূরদূরান্তের লোকজন ছুটে আসছেন। বিকালে অনেক লোকজন দেখতে আসেন এ সূর্যমুখী ফুলের জমি। জমির পাশে ছবি তুলে সময় কাটান অনেকেই। ইতোমধ্যেই প্রতিটি গাছেই ফুল ধরেছে। আশা করি সূর্যমুখী চাষে সফলতা আসবে। লাভবান হতে পারব ইনশাআলস্নাহ। কৃষি অফিসের সহযোগিতা নিয়ে ধানের পরিবর্তে আগামী বছর আরও জমি বাড়িয়ে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাকে দেখে এলাকার অনেক কৃষক সূর্যমুখী ফুলের চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।' এদিকে সূর্যমুখী ফুল দেখতে শেখ ফজিলাতুন্নেছা সরকারি পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, 'সব ধরনের ফুল ভালো লাগলেও চারদিকে ফসলি জমির মাঝখানে একসঙ্গে অসংখ্য সূর্যমুখী ফুল ফোটায় সৌন্দর্য বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। নয়ন জুড়ানো সৌন্দর্য দেখে বিমুগ্ধ হয়েছি।' উপজেলার যাদুয়ারচর এলকার কৃষক শাহিন জমাদ্দার সূর্যমুখী ফুলের চাষ দেখে মাতোয়ারা ভ্রমণপিপাসুরা প্রকাশ করছেন রোমাঞ্চকর যতসব অনুভূতি। কৃষক শাহিন বলেন, 'আমার দাবি কৃষি বিভাগ এই বীজ আগ্রহী সবার মাঝে যেন বিতরণ করে। তাহলে শিবচরে তেলজাতীয় আবাদের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।' সন্যাসীরচর ইউনিয়নের দায়িত্বরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পার্থ প্রতীম হীরা বলেন, 'সূর্যমুখী একদিকে মনোমুগ্ধকর ফুল অন্যদিকে লাভজনক ফসল। কৃষকদের বিস্তারিত জানিয়ে সূর্যমুখী আবাদ করার পরিকল্পনা করি। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের দিকে সারিবদ্ধভাবে বীজ বপন করা হয়। বীজ বপনের ৯০-১০০ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়। সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ও দুবার সেচ দিতে হয় এ ফসলে। স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিগুণসম্পন্ন হওয়ায় বাজারে সূর্যমুখী তেলের চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে।' শিবচর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম বলেন, এ বছর উপজেলায় ২৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা হয়েছে। সূর্যমুখী ফুল দেখতে শুধু রূপময়ই নয়, গুণেও অনন্য। সূর্যমুখীর বীজ থেকে যে তেল উৎপন্ন হয় তা স্বাস্থ্যসম্মত ও মানসম্পন্ন। ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রাম ফটিকছড়ি উপজেলার ফটিকছড়ি পৌরসভায় ১ বিঘা জায়গায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ করে রীতিমতো বাজিমাত করে ফেলেছেন পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের মৃত ডা. সালেহ জহুরের ছেলে সৌখিন কৃষক দুই ভাই সাখাওয়াত হোসেন বাচ্চু (৪৫) ও মো. রবিউল হোসেন (৩৮)। শখেরবশে অনুপ্রাণিত হয়ে সূর্যমুখী ফুলের বাগান করে কৃষি অফিসসহ সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তারা। সূর্যমুখী বাগানের হলুদ ফুল আর সবুজ গাছের অপরূপ দৃশ্য দেখলেই দুচোখ জুড়িয়ে যায়। উপজেলা কৃষি উপ-সহকারী অফিসার আবুল কালাম আজাদের পরামর্শে ১ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেন সাখাওয়াত হোসেন ও রবিউল হোসেন। বাজারে সূর্যমুখী বীজের ভালো দাম আছে। আশা করছেন তারা লাভবান হবেন। সরেজমিন দেখা গেছে, প্রকৃতির মাঝে নিজের সৌন্দর্য ছড়িয়ে দিচ্ছে সূর্যমুখী ফুলগুলো। প্রতিনিয়ত মিষ্টি হলুদ রঙের সূর্যমুখী দেখতে সকাল-বিকাল ভিড় করছেন দর্শনার্থী। মিষ্টি হলুদ রঙের সূর্যমুখীতে সেজেছে প্রকৃতি। সূর্যমূখী বাগানের মালিক সাখাওয়াত ও রবিউল হোসেন বলেন, কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় ১ বিঘা জমিতে প্রথমবারের মতো সূর্যমুখী চাষ করেছেন। ফলনও হয়েছে চমৎকার। প্রতিটি গাছে ফুল এসেছে। একদিকে যেমন ফুলের সৌন্দর্য মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অপরদিকে এ ফুলের বীজ বেচেও লাভবান হওয়া যায়। সে চিন্তা মাথায় রেখে এ বাগান করেছেন। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ক্যানসার ও হৃদরোগ প্রতিরোধী অধিক পুষ্টিগুণসম্পন্ন সূর্যমুখীর তেল অন্যান্য সাধারণ তেলের চেয়ে একটু আলাদা। কোলেস্টেরলমুক্ত প্রচুর পরিমাণে প্রাণশক্তি থাকায় সূর্যমুখী তেল শরীরের দুর্বলতা, কার্যক্ষমতা বাড়াতে সূর্যমুখীর ভূমিকা অনন্য। রান্নার জন্য সয়াবিন তেলের চেয়ে সূর্যমুখী তেল দশগুণ বেশি পুষ্টিসমৃদ্ধ। সূর্যমুখী তেল হাড় সুস্থ ও মজবুত করে। শরীরের ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও কপারের চাহিদা পূরণ করে। ফটিকছড়ি উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ফটিকছড়িতে সূর্যমুখী ফুল চাষের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে- তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আগামীতে সূর্যমুখী চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে।