মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও শেষ হয়নি বীর নিবাস নির্মাণকাজ
প্রকাশ | ১৯ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০
রায়পুরা (নরসিংদী) প্রতিনিধি
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য 'বীর নিবাস' নির্মাণের নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি নির্মাণ কাজ। ফলে ঈদকে সামনে রেখেও বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার অন্যের বাড়িতে থেকে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। নির্মাণ সামগ্রীর বাজার মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ভর্তুকি দিয়ে কাজ করলে নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে বলে জানান ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মালিকরা। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আবাসন নির্মাণ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে এ উপজেলায় ঘর পাচ্ছে ১১৭ পরিবার। উপজেলা প্রশাসন ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রনালয় অধীনে রায়পুরা উপজেলার ১১৭ জন অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধার জন্য ২০২২ সালের ২৮ মার্চ আবাসান নির্মাণ কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে একই বছরের ৭ জুন ২৩টি প্যাকেজে ২৩ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পায়। কার্যাদেশ প্রাপ্তির পর থেকে ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো অর্ধশত ঘরের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। বাকি অর্ধশতাধিক ঘরের নির্মাণ কাজের এখনো দৃশ্যমান কিছু হয়নি।
উপকারভোগীরা জানান, বীর নিবাস নির্মাণের সময়সীমা প্রায় চার থেকে পাঁচ মাস আগেই পেরিয়ে গেছে। ঘরগুলো তাদের আগের ঘরের স্থানে নির্মাণ হওয়ায় এখন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে থাকতে হচ্ছে। প্রায় এক বছর আগে নির্মাণ শুরু হয়ে কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে চার থেকে পাঁচ মাস আগেই। ফলে এতদিন ধরে অন্যের বাড়িতে বসবাস করতে তাদের নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এবারের ঈদেও আপন ঠিকানায় উঠতে না পেরে ভেঙে পড়েছেন অনেকেই।
উপজেলার অলিপুরা ইউনিয়নের নবিয়াবাদ গ্রামের মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুলস্নাহ ভূঁইয়ার স্ত্রী নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, 'ঘর বরাদ্দ পাওয়ার পর আমার আগের ঘরটির স্থানেই কাজ শুরু হয়েছে। এ জন্য ছয় থেকে সাত মাস ধরে ছেলেমেয়েকে নিয়ে দেবরের বাড়িতে থাকছি। জানি না আর কত মাস অন্যের বাড়িতে থাকতে হবে।'
মেসার্স জাহিদুল ইসলাম ট্রেডার্সের মালিক আবুল কালাম বলেন, 'আমি দু'টি প্যাকেজে ১০টি ঘর নির্মাণের কাজ নিয়েছি। ইতোমধ্যে চারটি ঘরের কাজ প্রায় শেষের দিকে। দরপত্রের মূল্য অনুযায়ী কাজ করতে গিয়ে প্রতিটি ঘরের ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা ভর্তুকি গুনতে হচ্ছে। এছাড়া কাজ অনুযায়ী বিল পাচ্ছি না, যতটুকু কাজ হয় তার ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ বিল দেয়, প্রকল্প দেখভালের দায়িত্বটা যদি স্থানীয় ইউএনও বা পিআইও'র মাধ্যমে হতো তাহলে আমাদের সুবিধা হতো।'
মেসার্স মা-বাবার দোয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক মাহবুবুর রহমান বলেন, 'কার্যাদেশ পাওয়ার পর পরই নির্মাণ সামগ্রীর বাজার বেড়ে গেছে। প্রতিটি ঘরে কয়েক লাখ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে নিঃস্ব হওয়ার পথে আমরা। নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়িয়ে বর্তমান বাজারের সঙ্গে মিল রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।'
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম বলেন, নির্মাণ কাজের ধীরগতি হওয়ায় এসব বীর মুক্তিযোদ্ধারা অন্যের বাড়িতে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। নির্মাণসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অনীহা কাজ করছে। তারা ভর্তুকি দিয়ে কাজ করতে নারাজ। এমবতাস্থায় সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) প্রকৌশলী বোরহান উদ্দিন বলেন, 'বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতির কারণে নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় কাজে ধীরগতির সৃষ্টি হয়েছে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান দরপত্রের মূল্যকে বর্তমান বাজারের সঙ্গে মিল রেখে রিভাইস করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। আমরা তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছি।'