আইনশৃঙ্খলার অবনতি

পাবনায় একশ দিনে ১৭ হত্যাকাÐ

প্রকাশ | ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী পাবনা
পাবনায় আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটেছে। বেড়েছে খুন, হত্যা, অপহরণ, ছুরিকাঘাত, ছিনতাই, চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কমর্কাÐ। গত ১০০ দিনে এই জেলার ১১ উপজেলায় পূবির্বরোধ, আধিপত্য বিস্তার এবং তুচ্ছ ঘটনায় প্রাণ গেছে ১৭ জনের। গুলিবিদ্ধ, ছুরিকাঘাত, ধারাল অস্ত্রাঘাত, লাঠির আঘাতসহ বিভিন্ন ঘটনায় প্রায় ২০০ জন আহত হয়েছেন। তথ্যমতে, চলতি বছরের ফেব্রæয়ারির ১০ দিনে তিনজন, জানুয়ারিতে চারজন এবং ডিসেম্বরে ছয়জন ও নভেম্বরে চারজন মিলে ১৭ জন খুন হয়েছেন। জেলা পুলিশের তথ্যমতে, গত ১০০ দিনে জেলায় ১৭ খুনে মামলাও হয়েছে ১৭টি। আর পুলিশ এসব মামলায় এখন পযর্ন্ত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছে। এদিকে র‌্যাব, পুলিশ ও সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা প্রতিদিন মাদক উদ্ধার- আটক অব্যাহত রাখলেও মাদকসেবন ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। জানা গেছে, ঈশ্বরদীর পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান সেলিম হত্যার পরদিন ৭ ফেব্রæয়ারি জলাশয়ে মাছ ধরা নিয়ে বিরোধের জেরে পাবনা সদরের চরশিবরামপুর গ্রামে কৃষকলীগ নেতা খাইরুল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষরা। এর আগে ২ ফেব্রæয়ারি বেড়া পৌর এলাকার বনগ্রাম উত্তরপাড়ায় পারিবারিক কলহের জেরে স্বামীর নিযার্তনে মারা যান স্ত্রী আদুরী খাতুন (২২)। জানুয়ারি মাসে খুন হয় চারজন। ১৬ জানুয়ারি ভোরে চাটমোহরের রামনগর গ্রামে মহিষ চুরির ঘটনায় কাভাডর্ভ্যান চাপা দিয়ে রব্বান আলী (৬৫) নামের এক ব্যক্তিকে হত্যা করে চোরের দল। ১৯ জানুয়ারি সন্ধ্যায় মাছ ধরা নিয়ে বিরোধের জেরে আতাইকুলার শ্রীপুর বাজারে হাফিজুর রহমান (৩২) নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করে দুবৃর্ত্তরা। ২০ জানুয়ারি সদর উপজেলার রুপপুর গ্রামে কম্বল দেয়া নিয়ে কথা কাটাকাটির জেরে নজরুল ইসলাম (৩৮) নামের এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে প্রতিপক্ষের লোকজন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২২ জানুয়ারি তার মৃত্যু হয়। ২২ জানুয়ারি পাবনা শহরের পৈলানপুরে অটোবাইক স্ট্যান্ডের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের দুই গ্রæপের সংঘষের্ যুবলীগকমীর্ অরিনকে (১৮) কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ডিসেম্বর মাসে খুনের শিকার ছয়জন। ২ ডিসেম্বর রাতে জেলার সুজানগর উপজেলার ভবানীপুর গ্রামে সুদের টাকা না পেয়ে কাশিনাথ হালদার (৫০) নামের এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করে স্থানীয় সুদ ব্যবসায়ীর স্বজনরা। ৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সদর উপজেলার ভাড়ারা গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই গ্রæপের সংঘষের্ লস্কর খঁা (৬৫) ও মালেক শেখ (৪৫) নামের দুইজন নিহত হন। ৭ ডিসেম্বর দুপুরে সদর উপজেলার চর ঘোষপুর গ্রামে ক্রিকেট খেলা নিয়ে দ্ব›েদ্বর জেরে হামিম হোসেন মীম (১৫) নামের এক কিশোরকে কুপিয়ে হত্যা করে সহপাঠী বন্ধুরা। ১০ ডিসেম্বর রাতে ঈশ্বরদী উপজেলার দিয়ার বাঘইল গ্রামে স্বামীর নিযার্তনে মারা যান গৃহবধূ সীমা আক্তার (২৬)। হাসপাতালে লাশ ফেলে পালিয়ে যায় স্বামী। ১২ ডিসেম্বর ঈশ্বরদী উপজেলার মুলাডুলি গ্রামে নিখেঁাজের দুদিন পর ওয়াডর্ স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আসাদুল ইসলামের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে নভেম্বর মাসেও খুন হয় চারজন। ৬ নভেম্বর রাতে পাবনা সরকারি এডওয়াডর্ কলেজের রসায়ন বিভাগের দ্বিতীয় বষের্র ছাত্র আহমেদ মিশকাত মিশুকে (২৪) মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে দুবৃর্ত্তরা। ৮ নভেম্বর রাতে আতাইকুলা থানার মধুপুর গ্রামে সোহেল হোসেন নামের এক যুবককে পূবির্বরোধের জেরে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ২০ নভেম্বর বিকালে বেড়া উপজেলার হাটুরিয়া গ্রামে শিশুদের ঝগড়াকে কেন্দ্র করে বাবলু শেখ নামের একজনকে পিটিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। ৩০ নভেম্বর সকালে আতাইকুলা থানার দুবলিয়া গ্রামে নিখেঁাজের তিন দিন পর মাটিতে পুঁতে রাখা স্কুলছাত্র আবির মাহমুদ অনির (১৪) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। বন্ধুরা তাকে হত্যা করে। এদিকে একের পর এক খুনের ঘটনায় জনমনে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। অন্যদিকে হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে স্বজনরা বিক্ষোভ, মানববন্ধন এবং অবরোধ কমর্সূচি পালন করে আসছেন।