মুখ থুবড়ে চরাঞ্চলের প্রাথমিক শিক্ষা

প্রকাশ | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রায় মুখ থুবড়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে অবস্থিত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার পরিবেশ। অবকাঠামো উন্নয়ন, অনুন্নত যোগাযোগ, শিক্ষক সংকট ও বিশেষ প্রণোদনা চালু না করায় এ অবস্থার জন্য বলে দায়ী বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। জানা গেছে, ১৬টি নদ-নদী পরিবেষ্টিত কুড়িগ্রাম জেলায় ছোট-বড় প্রায় ৪৮০টি চরাঞ্চল রয়েছে। এসব চরাঞ্চলে ২০৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে এবং এসব প্রতিষ্ঠানে প্রায় সহস্রাধিক শিক্ষক কর্মরত আছেন। শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এসব চরাঞ্চলে কর্মরত শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে আসতে হয়। অথচ শহরে কর্মরত শিক্ষকদের তুলনায় চরের শিক্ষকরা সুযোগ-সুবিধায় নানা দিক থেকে বঞ্চিত। অনেক শিক্ষককেই প্রতিদিন যাতায়াতের জন্য ব্যয় করতে হয় ২০০-৫০০ টাকা। স্থানীয় অভিভাবকরা জানান, শিক্ষকরা অনেক কষ্ট করে চরের স্কুলগুলোতে আসেন। প্রায়ই তারা সময়মতো স্কুলে আসতে পারেন না। আবার এলেও নৌকার সিরিয়াল ধরতে আগেভাগেই স্কুল ছুটি দিতে হয়। অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকট রয়েছে। চরাঞ্চল হওয়ায় শিক্ষকরা বদলি হয়ে এখানে আসতে চান না। কয়েকটি বিদ্যালয় ঘুরে জানা গেছে, চরবেল মনদিয়ার খাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ শিক্ষকের পরিবর্তে আছে ৪ জন, চিলমারী ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষকের মধ্যে আছে ৪ জন, চর শাখাহাতি ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষকের পরিবর্তে আছে ২ জন, ঢুষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮ জন শিক্ষকের মধ্যে আছে ৫ জন, নাওশাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩ জন শিক্ষকের মধ্যে আছে ২ জন এবং ছালিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬ জনের মধ্যে আছে ৩ জন শিক্ষক। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ জানান, চরাঞ্চলের মানসম্মত পাঠদানের জন্য অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষক সংকট দূর, চরের শিক্ষকদের বিশেষ প্রণোদনা চালুসহ অন্তত ২-৩ বছর পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে বদলি পদ্ধতি চালু করা দরকার। এতে শিক্ষকদের মানসিক চাপ কমার পাশাপাশি বদলি বাণিজ্য কমে আসবে বলে মনে করেন এই শিক্ষাবিদ। এদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন স্বীকার করেন, চরাঞ্চলে প্রক্সি টিচারসহ নানা সমস্যার কারণে শিক্ষার মান এখনো সন্তোষজনক নয়। এ নীতিমালা সংশোধন করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।