প্রাণ-বৈচিত্র্যে নান্দনিকভাবে ফিরছে শুভাঢ্যা খাল

প্রকাশ | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

মাসুম পারভেজ, কেরানীগঞ্জ (ঢাকা)
শুভাঢ্যা খাল। এক সময় ঢাকার কেরানীগঞ্জে সুপেয় পানির অন্যতম উৎস ছিল খালটি। কলকারখানার ময়লা-আবর্জনা, গৃহস্থালির বর্জ্য ও অবৈধ স্থাপনার দখলে বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীর সংযোগ স্থাপনকারী খালটির অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। সম্প্রতি খালটি উদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য শুভাঢ্যা খাল পুনঃখনন এবং খালের উভয়পাড়ের উন্নয়ন ও সুরক্ষা (১ম পর্যায়) নামে প্রকল্প গ্রহণ করেছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা খালে বইবে স্বচ্ছ পানি, চলবে নৌকা, দুই পাড়ে হাঁটবে সাধারণ মানুষ। প্রাণ-বৈচিত্র্যে, নান্দনিকভাবে ফিরবে খালটি। তথ্য অনুযায়ী, খালটির অবৈধ দখলদারমুক্ত করতে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩১৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা জোগান দিয়ে বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো)। শুভাঢ্যা খাল ও খালের পাড় সুরক্ষাকরণ, খাল খনন, উন্নয়ন ও সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ, খালের অভ্যন্তরীণ নৌযোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরায় চালু করা এবং স্থানীয় জনগণের জন্য খালের পাড়ে বিনোদনমূলক সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির লক্ষ্যে শুভাঢ্যা খাল পুনঃখনন প্রকল্পটি ২৯ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন করা হয়। ২০২৫ সালের ৩০ জুন নাগাদ প্রকল্পটি শতভাগ বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ১৪ দশমিক ২৬ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন করা হবে। ১৩ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার পাড় সংরক্ষণসহ ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। এর জন্য ৩ একর ভূমি অধিগ্রহণ বা ক্রয় করা হবে। প্রকল্পের আওতায় খালের দুই পাড়ে বৃক্ষরোপণ করা হবে ২ হাজার ৬০০টি। প্রকল্পটি গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আছে। তারা বলেছে, প্রকল্পটি সরকারের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। সরকারের ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ ও ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পানি সম্পদ খাতের অন্যতম উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হচ্ছে, নদী তীর সংরক্ষণের মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নদী ভাঙন রোধ করে দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমন করা। এ উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের সঙ্গে প্রস্তাবিত প্রকল্পটির কার্যক্রম সামঞ্জস্যপূর্ণ। এছাড়া, এসডিজি'র নির্দেশক ৬.৫.১: সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনার সঙ্গেও প্রকল্পটি সঙ্গতিপূর্ণ বলে মনে করে পরিকল্পনা কমিশন। প্রকল্প প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান জানান, বুড়িগঙ্গার নিকটবর্তী কেরানীগঞ্জ উপজেলার শুভাঢ্যা খাল এখন শুধু নামেই; পানির বদলে চোখে পড়বে শুধু পলিথিন আর পস্নাস্টিক। খালটির অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার উপক্রম। এ অবস্থায় খালটিকে আগের চেহারায় ফিরিয়ে আনার তাগিদ থেকেই একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এ খালে আগের মতোই বইবে স্বচ্ছ পানি এবং চলবে নৌকা। অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে খালটিকে রক্ষা করতে আশপাশে অবৈধভাবে গড়ে তোলা বাড়িঘর, দোকানপাট, কলকারখানা অপসারণ করা হবে। এদিকে বিদু্যৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, 'দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার অবশেষে জয় হয়েছে কেরানীগঞ্জের মানুষের। একনেক মিটিং-এ চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে আমাদের প্রাণের দাবি উন্নয়ন প্রকল্প। ঐতিহ্যবাহী শুভাঢ্যা খালের উন্নয়ন প্রকল্পে কেরানীগঞ্জবাসীর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আরেকটি যুগান্তকারী উপহার। ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ শুভাঢ্যা খালটি উদ্ধারের পাশাপাশি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য থাকবে আধুনিক ব্যবস্থা। সেই সঙ্গে দুই পাড়কে সাজানো হবে নান্দনিকভাবে।' শুভাঢ্যা খালের আদি পরিবেশ এবং প্রাণ-বৈচিত্র্য ফিরিয়ে এনে সুন্দর, স্বাস্থ্যকর কেরানীগঞ্জ প্রতিষ্ঠায় স্থানীয়দের পাশে থাকার আহ্বান জানান বিদু্যৎ প্রতিমন্ত্রী।