আমদানি করে জোগান দেওয়া হচ্ছে বাজারে
আলুর 'দেশেই', আলুর সংকট
প্রকাশ | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
আলুর 'দেশেই' দেখা দিয়েছে অলুর সংকট। তাই কাজে আসছে না সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম। দিনাজপুরের ফুলবাড়ীর উৎপাদিত আলু স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে সারা দেশেই রপ্তানি করা হলেও এখন বাইরে থেকে আমদানি করে চাহিদা পূরণ করতে হচ্ছে স্থানীয় বাজারের। ফলে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের থেকেও বাজারে বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে আলু।
ফুলবাড়ী পৌর বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিকেজি আলু প্রকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। আলু ব্যবসায়ীরা বলছেন, ফুলবাড়ী কোল্ড স্টোরেজে আলু না থাকায় বাইরে থেকে আলু আমদানি করতে হচ্ছে। পাইকারি বাজারে দাম বেশি ও পরিবহণ খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের বেশি দামে আলু বিক্রি করতে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোল্ড স্টোরেজে মজুত আছে শুধুই বীজ আলু। বাজারের চাহিদা মেটাতে আমদানি করতে হচ্ছে বাহির থেকে। ফুলবাড়ী কোল্ড স্টোরেজের সুপারভাইজার মোজাম্মেল হক বলেন, এই মৌসুমে এই কোল্ড স্টোরেজে সাত হাজার ১৫০ মে. টন আলু মজুত ছিল। এর মধ্যে তিন হাজার ৯২৬ মে. টন আলু ইতোমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। বর্তমানে এই কোল্ড স্টোরেজে ফুলবাড়ীসহ পাশের উপজেলা পার্বতীপুর, চিরিরবন্দর, নবাবগঞ্জ ও বিরামপুর উপজেলার কৃষকদের ৩২২৪ মেটন বীজ আলু মজুত রয়েছে।
এ দিকে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে এই উপজেলায় ১৯১৯ হেক্টর জমিতে ৪৫ হাজার ৯৯৬ মেটন আলু উৎপাদন হলেও গত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে ১৭৭০ হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদন হয়েছে ৪১ হাজার ৫৯৫ মেটন। ২০২১-২০২২ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২০২৩ বছরে তিন হাজার ৫০১ টন আলু কম উৎপাদন হওয়ায় বাজারে এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
জানা গেছে, গত ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাজারে আলুর দাম কমে যায়, অন্যদিকে ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে সরিষার চাহিদা ও দাম বৃদ্ধি পায়। এ কারণে কৃষকরা অধিক লাভজনক ফসল হওয়ায় আলুর পরিবর্তে ওই জমিতে সরিষা চাষ করেন, এতে করে আলুর উৎপাদন কমে আসে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার বলেন, গত বছর বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি রোধসহ ভোজ্যতেল আমদানির ওপর চাপ কমাতে তারা কৃষকদের সরিষা চাষে উৎসাহ দিয়েছেন। এ বছর আবারও আলু চাষের জন্য কৃষকদের আগ্রহী করে তুলছেন। তিনি বলেন, ভুট্টার সঙ্গে সাথি ফসল হিসেবে আলু চাষের পরামর্শ দিচ্ছেন। এতে করে আগামীতে আলুর উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এদিকে ভোক্তারা বলছেন, এই অঞ্চলের মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত ও রুটি হলেও, দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আলু। এ কারণে এই অঞ্চলে অন্য সবজির তুলনায় আলুর চাহিদা থাকে অনেক বেশি। তাই আলুর দাম বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে অন্য সবজির দামও বেড়ে যায়।
বাজার করতে আসা বারকোনা গ্রামের বাসিন্দা তেল, গ্যাস, খনিজসম্পদ ও বিদু্যৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ফুলবাড়ী শাখার আহ্বায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, বর্তমানে কৃষকের কাছে কোনো আলু নেই, রয়েছে মজুতদারের কাছে। মজুতদাররা অতি লাভের জন্য বাজারে আলুর সংকট সৃষ্টি করেছে। তিনি এ ঘটনায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর বামাহ তমাল বলেন, বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে, কেউ অবৈধভাবে মজুত করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।