মঙ্গা ঠেকাতে রোপা চারা রোপণে ব্যস্ত কৃষক

প্রকাশ | ১৮ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

কাউনিয়া (রংপুর) সংবাদদাতা
রংপুরের কাউনিয়ায় জমিতে চারা রোপণে ব্যস্ত কৃষক Ñযাযাদি
‘আশ্বিন-কাতির্ক মাসের মঙ্গা ঠেকা (মোকাবেলা) নাগবেতো। এ্যালায় ভুইত (জমিত) আগুর ওয়া (ধানের চারা) গাড়বার নাগছি (রোপণ করছি)। ধান কাটার পরে ওই ভুইত (জমিত) আগুর আলু গাড়মো।’ এমন আঞ্চলিক ভাষায় জানায় রংপুরের কউনিয়া উপজেলার নিজপাড়া গ্রামের ক্ষুদ্র কৃষক আবু হোসেন (৬৭)। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) রংপুর আঞ্চলিক কাযার্লয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর রংপুরাঞ্চলে মোট আমন আবাদের কমপক্ষে ২০ ভাগ জমিতে স্বল্পমেয়াদি ও আগাম জাতের ধান চাষ হয়। এতে কৃষক পরিবারের খাবারের যোগানের পাশাপাশি গো-খাদ্যের সংকটও নিরসন হচ্ছে। এছাড়া আশ্বিন-কাতির্ক মাসে (যে সময় কাজ থাকে না) কমর্সংস্থান হচ্ছে কৃষি দিনমজুরদের। জানা গেছে, তিস্তা নদীবেষ্টিত কাউনিয়া উপজেলায় প্রতিবছরে আশ্বিন-কাতির্ক মাসে এলাকার কৃষকের হাতে কাজ থাকে না। সেই সময় কৃষি শ্রমিকসহ নিম্নআয়ের মানুষ মঙ্গার কবলে পড়ে। মঙ্গা মোকাবেলা ও কৃষি শ্রমিকদের কমর্সংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে গত কয়েক বছর ধরে তিস্তার চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন গ্রামে প্রান্তিক কৃষকরা ‘মঙ্গা তাড়ানো ধান’ হিসেবে পরিচিত স্বল্পমেয়াদি বিনা-৭ ও ব্রি-৩৩সহ স্থানীয় জাতের ধানের চাষাবাদ করছেন। পশ্চিম রাজিব গ্রামের কৃষক আ. রহমান রাজিব ডাইলবাড়ী গ্রামের সাহাবুদ্দিন বলেন, আগাম ধান ঘরে তুলে রবিশষ্য চাষাবাদ করবেন বলে বৃষ্টির পানিতে জমি তৈরি করে বিনা-৭ জাতের আমন চারা রোপণ করেছেন। মঙ্গলবার কথা হয় চরবিশ্বনাথ গ্রামে গিয়ে কৃষক আফজাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কয়দিন আগত চরের জমি বানের পানিত তলে গেছলো। এ্যালা বানের পানি কমি গেইছে। জমিত পানিত থাকতে আগুর ধানের ওয়া গাড়বের লাগছি (ধানের চারা রোপন) করছি।’ উপসহকারী কৃষি অফিসার এমদাদুল হক বলেন, স্বল্পমেয়াদি ও আগাম জাতের ধান চাষের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে যেমন অভাবের সময় ঘরে ফসল ওঠে তেমনি কৃষি শ্রমিকদেরও কমর্সংস্থান হয়। ধান কাটার পর ওই জমিতে আলুসহ পরবতীর্ রবি ফসলও আগাম চাষ করা যায়। নাজিরদহ গ্রামের শিক্ষিত সামথর্্যবান কৃষক কামরুজ্জামান বলেন, এ অঞ্চলে প্রতিবছর আশ্বিন-কাতির্ক মাসে দেখা দেয় অভাব। স্থানীয় ভাষায় যাকে বলা হয় মঙ্গা। এ সময় অভাবী মানুষজন চড়াসুদে মহাজনী ঋণ গ্রহণ, আগাম শ্রম বিক্রি করতে বাধ্য হন। কিন্তু আগাম আমন ধান চাষাবাদে রংপুরাঞ্চলে মঙ্গা নেই বলেই চলে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্র জানায়, উপজেলার হারাগাছ পৌরসভাসহ ছয়টি ইউনিয়নে এবার উফশি, হাইব্রিড ও স্থানীয় জাতের ১১ হাজার ৪৭২ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নিধার্রণ করা হয়েছে। উপজেলাকৃষি কমর্কতার্ ও কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, স্বল্পমেয়াদি জাতের ধান ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ফসল কৃষকের ঘরে উঠে। কৃষক ক্ষেত হতে আগাম ধান তুলে আলুসহ নানা ধরনের রবিশষ্য চাষাবাদ করতে পারে বলে তারা আগাম রোপা আমন চারা রোপণ শুরু করেছে।