মজুরি বঞ্চনার শিকার হাওরাঞ্চলের নারীশ্রমিক

প্রকাশ | ১৯ মার্চ ২০১৯, ০০:০০

অষ্টগ্রাম (কিশোরগঞ্জ) সংবাদদাতা
কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে ধানক্ষেতে কাজ করছেন কয়েকজন নারীশ্রমিক
আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তনে নারী-পুরুষের শ্রম বিভাজনে পরিবর্তন এলেও কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলে মজুরি বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন শত শত নারীশ্রমিক। জানা গেছে, পুরুষশ্রমিকরা বিভিন্ন কাজের খোঁজে গ্রাম ছেড়ে শহরমুখী হওয়ায় কৃষিকাজে দায়িত্ব বাড়ছে নারীশ্রমিকদের। তারা রোদ, বৃষ্টি মাথায় নিয়ে সারাদিন মাঠে কাজ করছেন। অনেক ক্ষেত্রে পুরুষদের চেয়েও ভালো কাজ করে দৈনিক মজুরি পাচ্ছেন পুরুষদের অর্ধেক কিংবা যৎ সামান্য। কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সংযোগস্থল নিয়ে গঠিত বিস্তীর্ণ এই হাওরাঞ্চল। এলাকাটি এক ফসলি বোরো উৎপাদনকারী অঞ্চল হিসেবে প্রসিদ্ধ। হেমন্তের ৬ মাস কাজ থাকে এরপর বর্ষার পানিতে একাকার হয়ে গেলে সংস্থান থাকে না। এ অঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই শ্রমজীবী। হেমন্তে কাজ করে তাদের বর্ষার খাবার সংগ্রহ করতে হয়। বেশির ভাগ মজুরই বোরো চারা রোপণ, বাছাই, নিড়ানি, সার দেয়া, ধান কাটা-মাড়াই এবং গোলা কাজে মজুরি বিক্রি করেন। অষ্টগ্রামের বিভিন্ন হাওড় এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অসংখ্য নারীশ্রমিক কৃষিক্ষেতে, সড়ক নির্মাণে ও খামারে কাজ করছেন। এক সময় শুধু বৃদ্ধ মহিলারই তাদের শ্রম বিক্রি করতেন। বর্তমানে সংখ্যাগরিষ্ঠ যুবতী, গৃহবধূ ও কিশোরীরাও তাদের শ্রম বিক্রি করছেন। তারা ৫-৭ মাইল দূরে এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলা গিয়ে কাজ করছেন। মাঝে মধ্যে অনেকের পাশবিক লালশার শিকার ও নির্যাতনের শিকারও হচ্ছেন এসব নারীশ্রমিক। অনেক সময় কাজ করেও মজুরি না পাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। তবুও সন্তান ও পরিবারের কথা ভেবে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। অভাব-অনটন এদের নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়ায়। তাই বেঁচে থাকার তাগিদেই এদের কাজ করে খেতে হয়। স্থানীয় নারীশ্রমিকরা জানান, বেসরকারি এনজিওগুলোতে কাজ করে যেখানে পুরুষশ্রমিকরা দৈনিক মজুরি পান ৪০০ টাকা যেখানে মহিলা শ্রমিকদের মজুরি দেয়া হয় মাত্র ১০০-১৫০ টাকা। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকার হাওরাঞ্চলবাসী নামক একটি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রোটারিয়ান কামরুল হাসান বাবু বলেন, শ্রম আইন অনুযায়ী নারী কিংবা পুরুষ সমমান। সমঘণ্টা কাজ করলে তার সমপরিমাণ মজুরি পাওয়ার অধিকার রয়েছে। নারীশ্রমিকদের কম মজুরি দেয়া রাষ্ট্রীয় শ্রম আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন কঠোর হওয়া প্রয়োজন।