হালতি বিল

বন্যার পানি নামার পথে বাঁশের বেড়ার বাঁধ, পানি প্রবাহে বাধা

সময়মতো বোরো ধান চাষ নিয়ে শঙ্কায় হাজারো কৃষক

প্রকাশ | ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
নাটোরের নলডাঙ্গার হালতি বিলে এভাবে মশারির জাল দিয়ে মাছ শিকার করায় পানি প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে -যাযাদি
ম নলডাঙ্গা (নাটোর) প্রতিনিধি নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার হালতি বিলের সৃষ্ট বন্যার পানি নিষ্কাশনের পথে আড়াআড়িভাবে বাঁশ, তালাইয়ের বেড়ার বাঁধ দিয়ে সুঁতিজাল ফেলে অবৈধভাবে মাছ শিকার করছে প্রভাবশালীরা। এতে বাঁধার মুখে পড়ছে হালতি বিলের পানি প্রবাহ। ফলে মৌসুমের শুরুতে সময়মতো ৬ হাজার হেক্টর জমির রবিশস্য ও বোরো ধান চাষ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন এ বিলের হাজার হাজার কৃষক। হালতি বিলের প্বার্শবর্তী উপজেলা সিংড়ার ত্রিমোহনীর সোনাইডাঙ্গা খালে এ ধরনের অন্তত ৬টি সুতিজাল বসানো হয়েছে। এসব সুতিজাল স্থানীয় মৎস্য বিভাগ মাঝে মাধ্যে অভিযান চালিয়ে অপসারণ করলেও এসব অবৈধ পন্থায় মাছ শিকার বন্ধ না হওয়ায় বিলের পানি দ্রম্নত নামছে না। এ কারণে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। বাঁশের বেড়ার বাঁধ দিয়ে বসানো এসব সুতিজাল স্থায়ীভাবে অপসারণ ও স্ুস্নইসগেটের সবগুলো মুখ খুলে দেওয়ার দাবি কৃষকদের। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার হালতি বিলের চারদিকে থৈ থৈ করছে পানি, এখনো চলছে ইঞ্জিনচালিত নৌকা। প্রতিবছর এই সময় বিলের পানি নেমে যায়। কিন্তু এবার রবিশস্য ও বোরো ধানের মৌসুম শুরু হলেও জমিগুলো থেকে বন্যার পানি না নামায় বোরো বীজতলা, সরিষা, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন রবিশস্য চাষাবাদ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন কয়েক হাজার কৃষক। কৃষকদের অভিযোগ, হালতি বিলের পাশের উপজেলা সিংড়া এলাকার ত্রিমোহনীর সোনাইডাঙ্গা খালে অন্তত ৬টি স্থানে বাঁশের বেড়ার বাঁধ দিয়ে সুতিজাল বসিয়ে অবৈধভাবে মাছ শিকার করছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এসব সুতিজাল বসানোর কারণে চরম বাঁধার মুখে পড়েছে হালতি বিলের পানি প্রবাহ। ফলে পানি নামার গতিপথ বন্ধ হয়ে বিলের পানি নামছে ধীরগতিতে। এভাবে পানি নামলে আগামী ৩ মাসে বিলের পানি নামবে না বলে দুচিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। সিংড়ার চরহাঁফানিয়া গ্রামের বাসিন্দা জাকির হোসেন ও সাইফুল ইসলাম বলেন, এসব সুতিজাল স্থানীয় মৎস্য বিভাগ মাঝে মাধ্যে অভিযান চালিয়ে অপসারণ করলেও, মৎস্য কর্মকর্তারা চলে যাওয়ার পর আবার বাঁশের বাঁধ দিয়ে সুতিজাল পেতে মাছ শিকার শুরু করে। নলডাঙ্গা উপজেলার মাধনগর গ্রামের বোরো চাষি এবাদুল প্রামাণিক বলেন, 'আমি হালতি বিলে হালতি এলাকায় ৩০ বিঘা জমিতে একমাত্র ফসল বোরো ধান চাষ করি। গত বছর এ সময় বিলের সবপানি নেমে গিয়েছিল। আমরা সঠিক সময়ে বোরো ধান চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছি। কিন্তু এবার শেষ সময়ে হওয়া বন্যার পানি এখনো নামেনি। জমি প্রস্তুত করে বীজতলা রোপণ কাজ শুরু করতে পারিনি। দেরিতে বোরো ধান রোপণ করলে ফলনও কম হয়, অন্যদিকে ধান পাকার আগে অতিবর্ষণে আধাপাকা ধান তলিয়ে যায়।' পিপরুল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কলিম উদ্দিন বলেন, 'হালতি বিলের বিভিন্ন স্থানসহ সিংড়ার ত্রিমোহনী খালে সুতিজাল বসিয়ে মাছ শিকার করায় বিলের পানি নামতে বিলম্ব হচ্ছে। এগুলো দ্রম্নত অপসারণের কথা ইউএনও'র কাছে বারবার বলছি।' সিংড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শাহাদত হোসেন বলেন, 'আমরা অবৈধ বাঁশের বেড়ার সুতিজাল ৬ বার উচ্ছেদ করি। পরে আবার সুতিজাল বসিয়ে মাছ শিকার করছে প্রভাবশালীরা। গত বৃহস্পতিবার সিংড়ার হাঁফানিয়া সোনাইডাঙ্গা খালে বসানো সুতিজাল কেটে দেওয়া হয়। এর বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।' উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফৌজিয়া ফেরদৌস বলেন, প্রতিবছর এই সময় বন্যার পানি নেমে গেলেও এবার ধীর গতিতে নামছে। সিংড়ার খালে বিভিন্ন স্থানে বাঁশের বেড়া দিয়ে সুঁতিজাল ফেলে মাছ শিকার করায় পানি নামার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। সুতিজাল অপসারণ করার কাজ শুরু করেছে মৎস্য বিভাগ। নাটোর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল ওযাদুদ বলেন, এ পরিস্থিতি উত্তরণে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সিংড়া উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগের মাধ্যমে অবৈধ সুতিজাল অপসারণ করার কাজ শুরু করেছে। অচিরেই এ সংকটের সমাধান মিলবে।