হত্যা, আগুনে পুড়ে ও ইঁদুর মারার ফাঁদে আটকে পাঁচ জেলায় ৬ মৃতু্য
প্রকাশ | ০১ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
স্বদেশ ডেস্ক
হত্যা, আগুনে পুড়ে ও ইঁদুর মারার ফাঁদে আটকে পাঁচ জেলায় ৬ জনের মৃতু্য হয়েছে। এর মধ্যে বাগেরহাটের চিতলমারীতে শিশুকে হাত-পা বেঁধে হত্যা, কচুয়ায় ইঁদুর মারার ফাঁদে বিদু্যৎস্পৃষ্ট হয়ে কৃষকের মৃতু্য, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে স্ট্রোক করে এক ব্যক্তি, ঝিনাইদহের শৈলকুপায় ছেলের বঁটির আঘাতে মায়ের মৃতু্য, পাবনার ঈশ্বরদীতে ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে প্রতিপক্ষের আঘাতে মা নিহত এবং বগুড়ার ধুনটে আগুনে পুড়ে বিধবার মৃতু্য হয়। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-
বাগেরহাট ও চিতলমারী প্রতিনিধি জানান, বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার হিজলা এলাকায় শিহাব শেখ (৪) নামের এক শিশুকে হাত-পা বেঁধে হত্যা করা হয়েছে। নিহত শিহাব শেখ উপজেলার বারাশিয়া গ্রামের ফরহাদ শেখের ছেলে। পুলিশ হামীম শেখ (১৭) নামের হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। হামীম হিজলা গ্রামের রমজান শেখের ছেলে। আর হত্যাকান্ডটি ঘটেছে বুধবার সন্ধ্যার দিকে। খবর পেয়ে বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) রাসেলুর রহমান বুধবার রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
আটক হামীমের স্বীকারোক্তিমতে পুলিশ জানায়, শিশু শিহাব বুধবার বিকালে বাড়ির পাশে খেলছিল। হামীম শিশুটিকে নিয়ে যৌনাচার করে। এতে শিশুটি চিৎকার করলে হামীম তার মুখ চেপে ধরে। শিশুটি জ্ঞান হারালে হামীম হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখে। রাতে স্থানীয়রা শিশুটিকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে, জেলার কচুয়া উপজেলার রাঢ়িপাড়া কাকার বিল নামক এলাকায় ধানক্ষেতে ইঁদুর মারতে নিজের পাতানো ফাঁদে বিদু্যতায়িত হয়ে মোস্তফা মৃধা (৫২) নামের একজন কৃষক নিহত হয়েছেন। নিহত মোস্তফা মৃধা কাকার বিল গ্রামের মৃত সফিজ উদ্দিনের ছেলে। বুধবার রাতে বাড়ির পাশে ধানের ক্ষেতে যান মোস্তফা। সেখানে ইঁদুর মারার জন্য পাতানো বৈদু্যতিক ফাঁদে জড়িয়ে নিজেই মারা যান।
আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে খাগকান্দা ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামে এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ১৭ বাড়ি লুটপাটের ঘটনার রেশ ধরে আবারো মামলার বাদী আবুল হোসেনকে (৪২) কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় পুলিশ গেলে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে হাতেম আলী (৬০) নামে এক লোক স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
প্রসঙ্গত, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তোফাজ্জল হোসেন এবং ৫ নং ওয়ার্ড সদস্য জুলহাস মেম্বার ও শাহ আলমের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। গত সোমবার রাতে জুলহাস ও শাহ আলমের লোকেরা তোফাজ্জল ও মহিলা ইউপি সদস্য আফরোজার বাড়িসহ ১৭ বাড়িতে হামলা করে। এর জেরে বৃহস্পতিবার সকালে তোফাজ্জলের ভাই আবুল হোসেনকে (৪২) কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করে জুলহাস মেম্বারের লোকেরা। এ নিয়ে আবারো উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে হাতেম আলী আতঙ্কিত হয়ে স্ট্রোক করে মারা যান।
শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি জানান, ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ভদ্রডাঙ্গা গ্রামে ছেলের বঁটির আঘাতে আহত মা পায়রা খাতুনের (৬১) মৃতু্য হয়েছে। বৃহস্পতিবার নিজ বাড়িতে তার মৃতু্য হয়। নিহত পায়রা ওই গ্রামের জের আলী মন্ডলের স্ত্রী। এ ঘটনায় ছেলে হাসেম আলী পলাতক রয়েছেন। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাসেম আলীর ছেলে নাজমুলকে আটক করেছে।
স্থানীয় ত্রিবেনী ইউনিয়নের মেম্বর আব্দুল লতিফ জানান, শবেবরাতের দিন স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করেন হাসেম। ঝগড়া থামাতে মা পায়রা এগিয়ে আসেন। এ সময় হাসেম স্ত্রীকে লক্ষ্য করে বঁটি ছুড়ে মারলে স্ত্রীর পরিবর্তে মা আহত হন।
আঘাতের পরও তাকে ঠিকমতো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। ফলে ডায়াবেটিক রোগ থাকায় স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে এবং আহত হওয়ার তিন দিন পর বৃহস্পতিবার সকালে মৃতু্যবরণ করেন।
শৈলকুপা থানার ওসি সফিকুল ইসলাম চৌধুরী জানান, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। আঘাতজনিত কারণে মৃতু্য হলে ছেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি জানান, ঈশ্বরদীতে মাত্র সাত হাজার টাকা পাওনা আদায়ের জন্য ছেলেকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারপিট করার খবর শুনে তাকে বাঁচাতে গিয়ে মারা গেলেন মা সেলিনা বেগম (৫২)। গত বুধবার উপজেলার লক্ষ্ণীকুন্ডা ইউনিয়নের নুরুলস্নাপুর কুতুবের মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সেলিনা বেগম ওই এলাকার আইয়ুব আলী সরদারের স্ত্রী।
জানা যায়, উপজেলার লক্ষ্ণীকুন্ডা ইউনিয়নের নুরুলস্নাপুর গ্রামের আইয়ুব আলী সরদারের ছেলে লিমনের কাছে একই এলাকার নাসিমের ছেলে বিপুল কলা কেনাবেচা বাবদ সাত হাজার টাকা পান। সময়মত টাকা দিতে পারেননি সুমন। বুধবার সুমনকে ধরে গাছের সঙ্গে বেঁধে নাসিম, তার ছেলে বিপুল ও সহযোগী ফন্টু মিলে মারধর করেন। খবর শুনে সুমনের মা সেলিনা বেগম ছেলেকে বাঁচাতে ঘটনাস্থলে যান। প্রহারকারীরা পেটে লাথি দিলে তিনি অচেতন হয়ে যান। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঈশ্বরদী থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এই বিষয়ে থানায় ইউডি মামলা হয়েছে।
ধুনট (বগুড়া) প্রতিনিধি জানান, বগুড়ার ধুনটে চুলার আগুনে পুড়ে হালিমা বেগম (৪২) নামে এক বিধবা নারীর মৃতু্য হয়েছে। বুধবার রাতে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃতু্য হয়। নিহত হালিমা উপজেলার গোসাইবাড়ি ইউনিয়নের গোসাইবাড়ি গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের স্ত্রী।