ক্ষুধার্ত মুখে হাসি ফোটায় 'ব্যাক বেঞ্চার মেজবান'
প্রকাশ | ০৩ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
স্টাফ রিপোর্টার, যশোর
শুক্রবার বেলা পৌনে দুইটা। যশোর শহরের বাণিজ্যিক এলাকা রবীন্দ্রনাথ সড়কের (আরএন রোড) নান্নু চৌধুরী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট মার্কেট। এই মার্কেটের নিচ তলাতে গোটা বিশেক দোকান। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় সব দোকানই বন্ধ। এমন সময়ে নীল টি-শার্ট আর গলায় আইডি কার্ড পরিহিত দুই যুবক এসে মার্কেটের সামনে গেটে ব্যানার টানালেন। তাতে লেখা, 'ব্যাক বেঞ্চার মেজবান'। মার্কেটের ভেতরে কয়েকজন মেঝে ঝাড়ু দিলেন। এরপর বসার জন্য মেঝেতে বিছানো হলো চট (পাটি)। এরই মধ্যে দুই-একজন করে ছিন্নমূল, রিকশা, ইজিবাইক চালক, শ্রমজীবীসহ দরিদ্র মানুষ আসতে থাকেন সেখানে। একটু দূর থেকে কয়েক হাড়ি রান্না করা খাবার নিয়ে এলেন আরও কয়েক যুবক। সঙ্গে আনলেন পেস্নট, গস্নাস আর পানির জগ। এরই মধ্যে বিভিন্ন বয়সি চার শতাধিক মানুষ উপস্থিত হন সেখানে। শুরু হয় খাবার পরিবেশন। তৃপ্তি ভরে খিচুড়ি-মাংস খেয়ে তারা চলে যান।
দরিদ্র মানুষের জন্য বিনামূল্যে প্রতি মাসের প্রথম শুক্রবার দুপুরে এ খাবারের ব্যবস্থা করেন যশোরের এসএসসি ১৯৯৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সংগঠন 'ব্যাক বেঞ্চার'। 'খাবার আছে যতক্ষণ, পরিবেশন করা হবে ততক্ষণ'- এমন স্স্নোগান নিয়ে ২০২৩ সালের পহেলা আগস্ট থেকে সংগঠনটি নিয়মিত প্রতি মাসের প্রথম শুক্রবার দুপুরে মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করেন। প্রথম দিকে ৬০ থেকে ৭০ জন মানুষ অংশ নিলেও এখন চার শতাধিকে দাঁড়িয়েছে। সংগঠনটি এসব মানুষের খাবার দেওয়ার পাশাপাশি শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, রক্তদান, সামাজিকভাবে সচেতনতামূলক কর্মকান্ড করে আসছেন।
সেখানে খেতে আসা শংকরপুর বস্তিতে থাকা প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক রুহুল আমিন জানান, 'শহরে ভিক্ষা করি। গেল বছর একজনের মাধ্যমে জানতে পারি এখানে প্রতি মাসের প্রথম শুক্রবার ভালো মন্দ খেতে দেয়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ভিক্ষা করে দুপুরে এখানে এসে ভালোমন্দ খাই।'
সংগঠন 'ব্যাক বেঞ্চার' সদস্য সংখ্যা ১৯ জন। সদস্যরা কেউ চাকরিজীবী কেউ বা ব্যবসায়ী। এই সদস্যদের চাঁদার টাকা দিয়ে প্রথমে নিজেদের উদ্যোগে অসহায়দের এক বেলার খাবারের আয়োজন শুরু করা হয়। পরে অনেক ভালো মনের মানুষ এতে শরিক হচ্ছেন। এছাড়া অনেক দানশীল ব্যক্তির সহযোগিতায় এ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
সংগঠনটির সভাপতি জাকিউল ইসলাম পিংকু জানান, 'আমরা ভালো আছি, আমরা এই নীতিতে বিশ্বাসী না। আমরা চাই সমাজের পিছিয়ে পড়া ও হতদরিদ্রদের নিয়েই ভালো থাকতে। সেই নীতি অনুযায়ী আমরা গত বছর থেকে এই খাবারের আয়োজন করে আসছি।'
সংগঠনটির উপদেষ্টা শাহনেওয়াজ আনোয়ার লেনিন বলেন, 'দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে আমরা মানবতা, মমত্ববোধকে প্রাধান্য দেই। সমাজের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে সবাই নিজ এলাকা থেকে এগিয়ে আসলে সমাজের হতদরিদ্ররা ভালো থাকবে।'