ধামরাইয়ের ২৫ পরিবারে দুঃসহ স্মৃতি

প্রকাশ | ২৪ এপ্রিল ২০১৯, ০০:০০

ধামরাই (ঢাকা) সংবাদদাতা
সাভারের রানা পস্নাজা ট্র্যাজেডির ছয় বছর আজ। ধামরাইয়ের হতাহত ২৫ গার্মেন্টকর্মীর পরিবার এখনো স্বজন হারানোর স্মৃতি ভুলেননি। এসব পরিবারে এখনো চলছে শোক। সরকারি-বেসরকারিভাবে কিছু সাহায্য পেলেও পরিবারগুলো একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষকে হারিয়ে ও পঙ্গু হয়ে চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের একটাই দাবি কর্মসংস্থানের। ধামরাইয়ের মামুরা গ্রামের শুকুর আলী রানা পস্নাজা ধসে পড়ার ১৭ দিন পর তার ছেলে ছুরমান আলীর লাশ খুঁজে পান। ছুরমান আলীর বৃদ্ধ বাবা শুকুর আলী, মা তারা ভানু কোনো কাজ করতে পারে না। স্ত্রী সুফিয়া বেগমও বেকার। তার ঘরে রয়েছে ৯ বছরের ফুটফুটে মেয়ে সুমি আক্তার। সুফিয়া বেগম এখন অভাবের সংসার টিকিয়ে রাখতে মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করছেন। অষ্টমতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে প্রাণ রক্ষা পেয়েছেন ধামরাইয়ের মামুরা গ্রামের আবদুল হালিমের ছেলে মনির হোসেন। দীর্ঘ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরলেও পঙ্গুত্ব নিয়ে তিনি এখন অসহায়। তার কৃষক বাবা আবদুল হালিমের দিনজুরিতেই এখন চলছে তাদের সংসার। ধামরাইয়ের মাখুলিয়া গ্রামের সামছুন্নাহার তার ছেলে মিজানুর রহমান রানা পস্নাজার অষ্টমতলায় কাজ করতেন। ছেলের স্বপ্ন ছিল গর্ােেমন্টে চাকরি করে বাবা-মার জন্য পাকা বাড়ি বানাবেন। বাড়ির কাজেও হাত দিয়েছিলেন। কিন্তু সে স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি। ভবন ধসের শিকার হয়ে মিজানুর রহমান নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার তার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, ছেলের ছবি বুকে নিয়ে মা সামছুন্নাহার কান্নায় শুধুই প্রলাপ করছেন, ছেলে বেঁচে থাকলে আজ পাকা বাড়ি নির্মাণের কাজ শেষ হতো। ছেলেকে বিয়ে করিয়ে বাড়িতে নতুন বউ আনতে পারতাম। ছেলের মৃতু্যর পর কোনো সাহায্য পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে সামছুন্নাহার সাংবাদিকদের বলেন, 'আমি কোনো সাহায্য চাই না, আমার ছেলেকে চাই। খুনি রানার বিচার চাই।' এ ছাড়া ধামরাইয়ের রূপনগর গ্রামের আবদুস সালাম, মুক্তা আক্তার, আড়ালিয়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন, শিল্পী আক্তার, চরবর্দাইল গ্রামের তহুরা বেগম, লিমা আক্তার, ফড়িংগা গ্রামের আরিফুল ইসলাম, দধিঘাটা গ্রামের পবিত্রা মন্ডল, বাঙালপাড়া গ্রামের শিল্পী আক্তার, কদমতলা গ্রামের রোমানা আক্তার, আনন্দনগর গ্রামের রবিন হোসেন, রিনা আক্তারসহ ১৪ জন ওই রানা পস্নাজা ধসে মারা গেছেন। তাদের পরিবারেও দেখা দিয়েছে অভাব-অনটন। পরিবারের সদস্যদের হারিয়ে তাদের মধ্যে নেই কোনো সুখ। এ ছাড়াও পঙ্গুত্ববরণ করেছে আরও ১১ জন।