পিরোজপুরের নেছারাবাদে দুই পাশের সংযোগ সড়কের জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় চালু না হওয়া সেতু -যাযাদি
পিরোজপুর নেছারাবাদে দুই পাশের সংযোগ সড়কের জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় চালু হচ্ছে না পাঁচ কোটি টাকার সেতু। সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়কের অধিগ্রহণের অভাবে চার বছর ধরে অপরাজেয় সৈনিকের মতো দাঁড়িয়ে আছে সেতুটি। এলজিইডির দাবি, ব্রিজটির বরাদ্দের সময় জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া সমাপ্ত না করেই ধরা হয়েছিল কাজ। তাই সেতু নির্মাণ শেষ হলেও দুই পাশের সংযোগ সড়কের অভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে না জনগুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটি। নতুন করে জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান আছে বলে জানিয়েছেন তারা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার সুটিয়াকাঠি ইউনিয়নে তাঁরাবুনিয়া খালের ওপর যে পুরনো সেতুটি ছিল সেটি পাঁচ বছর আগে ভেঙে পড়েছে। নতুন সেতু তৈরি হওয়ার আগ পর্যন্ত সেখানে চলাচলের একমাত্র সম্বল ছিল নৌকা। নতুন ব্রিজ হওয়ার পর নৌকায় পারাপারের সমস্যা সমাধান হলেও নতুন ব্রিজটি নির্মাণের পর করা হয়নি দুই পাশের সংযোগ সড়ক। যার ফলে পাঁচ কোটি টাকায় নির্মিত ব্রিজ নিয়ে স্থানীয় সাধারণ মানুষকে আবারও নতুন ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
উপজেলা এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, জগন্নাথকাঠি- বৈঠাকাটা জিসি সড়কে আই.বি.আর.বি প্রকল্পের আওতায় ৪৬ মিটার লম্বা আরসিসি গার্ডার ব্রিজ যৌথ উদ্যোগে নির্মাণ করে মেসার্স এম এম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেসার্স আমির ইঞ্জিনিয়ার্স নামের দুটি প্রতিষ্ঠান। পাঁচ কোটি ৬২ লাখ ২২ হাজার ৭০ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ও চার কোটি ৮৪ লাখ ৫৪ হাজার ৬৬ টাকার চুক্তি মূল্যে সেতুটি নির্মিত হয়েছে। যার কাজ শুরু হয়েছে ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রম্নয়ারি এবং সমাপ্তির কথা ছিল ২০২১ সালের ২৬ ফেব্রম্নয়ারি। কিন্তু দুই পাশের সংযোগ সড়কের জমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হলেও চলাচল উপযোগী করা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় শহিদুল ইসলাম বলেন, 'আমরা পুরনো সেতু ভেঙে যাওয়ার পর নৌকায় পারাপার করতাম। এখানে নৌকা না থাকলে পারাপার সবার জন্য অন্যতম ভোগান্তির কারণ ছিল। নতুন সেতু করে দুই পাশে সংযোগ সড়ক করেনি। আমরা নিজেরাই সেতু পারাপারের জন্য কাঠের সেতু বানিয়ে নিয়েছি।' স্থানীয় আমিনুল ইসলাম বলেন, 'কবে যে এই সিঁড়ি সমস্যার সমাধান হবে, আমাদের জানায়নি কর্তৃপক্ষ। এত টাকা খরচ করে সেতু নির্মাণ করে আমরা যেন শান্তিতে পারাপার করতে পারি। সেই ব্যবস্থা দ্রম্নত করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে এমনটাই আশা।'
স্থানীয় বাসিন্দা মেহেদী হাসান বলেন, আমাদের এই সিঁড়ি ব্যবহার করতে অনেক অসুবিধা হয়, বয়স্করা সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পারেন না। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সামনে বৃষ্টি আসলে এ নিয়ে ভোগান্তি আরও বাড়বে। নতুন সিঁড়ি বানিয়ে যদি সেতুতে উঠতে হয়, তাহলে নৌকাই ভালো ছিল।
স্থানীয় ইউপি সদস্য কামাল হোসেন বলেন, তাঁরাবুনিয়া খালের ওপর আগের সেতুটি ভাঙার পর নতুন সেতুর কাজ করছে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা বলেছে, স্থানীয়রা জমি দেয়নি, তাই সংযোগ সড়কের কাজ আটকে আছে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বলেন, ব্রিজের কাজ তো অনেক আগেই শেষ হয়েছে। দুই পাশে যাদের জমিতে সংযোগ সড়ক পড়েছে. তারা জায়গা দিচ্ছে না। তবে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করব, যাতে তারা দ্রম্নত কাঠের সিঁড়ির মতো এই মরণ ফাঁদ খুলে বিষয়টি সমাধান করেন। সংযোগ সড়কের দুই পাশের জমি অধিগ্রহণ না করলে সমস্যাটি থেকেই যাচ্ছে।
নেছারাবাদ উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল হক বলেন, 'স্থানীয়রা নিজ উদ্যোগে সিঁড়ি তৈরি করে নিয়েছে, এটি আসলেই একটি সমস্যা। আমি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাকে বলেছে, স্থানীয়রা জায়গা দেওয়ার জন্য টাকা দাবি করছে। তাই তারা কাজ বন্ধ রেখেছে। আমি চেষ্টা করছি, যাতে দ্রম্নত এই ভোগান্তির সমাধান সম্ভব হয়।'
নেছারাবাদ উপজেলা প্রকৌশলী রাইসুল ইসলাম বলেন, 'জমি-সংক্রান্ত সমস্যার কারণে দুই পাশের সংযোগ সড়কের কাজ আটকে আছে। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি জানেন এবং তারা এসে দেখে গেছেন। তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করি, দ্রম্নত এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।'