ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্তদের এক মাসেও সহায়তা আসেনি
প্রকাশ | ২৩ জুন ২০২৪, ০০:০০
ইন্দুরকানী (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
'মোর ঘরডা বাতাসে উড়াইয়া লইয়া গেছে, আলস্নায় আমাগো বাঁচাইয়া রাখছে। বইন্যার (ঘূর্ণিঝড় রেমাল) ২৫ দিন গেলেও কোনো মেম্বার-চেয়ারম্যান ও সরকারি স্যাররা কাছে আয় নাই। নেয় নাই কুনো খবর। মোর ঘরডা বানাইতে না পারলে পোলাপান লইয়া কোই থাকমু।' এমন প্রশ্ন ছুড়ে দেন রওশনারা বেগম।
পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার সদর ইউনিয়নের ইন্দুরকানী গ্রামের এই বাসিন্দা পরিবার নিয়ে প্রতিবেশীর বাড়িতে আশ্রিত। একই অবস্থায় আছেন উপজেলার হাজারো মানুষ। রেমালের প্রায় মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো সহায়তা পায়নি তারা। রওশনারার স্বামী আনসার আলী ঘরামি দিনমজুর। ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে আয়-রোজগার নেই। ঝড়ে উড়ে যাওয়া ঘর মেরামতের সাধ্য নেই। তিনি দ্রম্নত সময়ের মধ্যে মাথা গোঁজার ঠাঁই দেওয়ার দাবি করেন।
২৬ মে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। এতে ইন্দুরকানী উপজেলার ৯৫ শতাংশ মানুষই ক্ষতির শিকার হয়েছেন। অথচ বরাদ্দ এসেছে মাত্র ২০ টন চাল ও নগদ ৫ লাখ টাকা। ফলে সিংহভাগ মানুষই সহায়তার বাইরে রয়ে গেছে। যেসব ব্যক্তির ঘর ভেঙে গেছে, প্রশাসন শুধু তাদের আবেদনই গ্রহণ করছে। কিন্তু বেশিরভাগ প্রান্তিক মানুষই সে খবর রাখেন না।
ঝড়ের সংবাদে এলাকার আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যান বিধবা শাহানুর বেগম। তার বাড়ি চন্ডিপুর ইউনিয়নের চরবলেশ্বর গ্রামে। কিন্তু গাছ পড়ে তার ঘর শেষ হয়ে গেছে। সরজমিনে দেখা গেছে, ইন্দুরকানীতে অন্তত শতকোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু এখনো সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহায়তা পাননি। তিনিও অন্যের ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন। ঘর না হলে কোথায় থাকবেন- এমন প্রশ্ন করেন তিনি। তারই মতো জিজ্ঞাসা ইন্দুরকানীর সত্তার কাজী, এনায়েত গাজী, শাহীন হাওলাদার, আম্বিয়া বেগম, জামাল হোসেনদের।
ঝড়ে কচা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে পানির তোড়ে ভিটা ভেসে গেছে দিনমজুর গণি মিয়ার। তিনি টগড়া গ্রামের বাসিন্দা। গণি মিয়ার ভাষ্য, ঘর তুলতে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে গেছেন কিন্তু কেউ সহায়তা করেননি।
চন্ডিপুর ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মঞ্জু বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে যে ত্রাণ এসেছে, তা সামান্য ঘরহারা মানুষের পুনর্বাসনে কোনো সহায়তা এখনও আসেনি।
উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল আহসান গাজী বলেন, 'সাধ্যমতো সহায়তা করে যাচ্ছি। ঘূর্ণিঝড়ে উপজেলায় শত কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।' তিনি সরকারের কাছে দুর্গত মানুষের আবাসন ও বেশি করে ত্রাণ বরাদ্দের দাবি জানান।
এসব তথ্যই জানা আছে পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য শ ম রেজাউল করিমের। তার ভাষ্য, কচা নদীতে বিলীন বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও ঘরহারা মানুষের পুনর্বাসনে তিনি চেষ্টা করছেন।