জনমনে রাসেলস ভাইপার আতঙ্ক!

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের ৬ নির্দেশনা প্রাপ্তি অস্বীকার ফরিদপুর বন বিভাগের গাংনীতে দেখা মিলল বসতঘরে

প্রকাশ | ২৪ জুন ২০২৪, ০০:০০

স্বদেশ ডেস্ক
চলমান সময়ে দেশব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে রাসেলস ভাইপার সাপ। এ সাপটির উপস্থিতি উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় জনমনে ভীতির সঞ্চার সৃষ্টি হয়েছে। তাই চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে ৬ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এদিকে, ফরিদপুরে রাসেলস ভাইপার পাওয়ার বিষয়ে স্বীকার মিলছে না বন বিভাগের। অন্যদিকে, মেহেরপুরের গাংনীতে একটি বসতঘরে বিষধর রাসেল ভাইপারের দেখা মিলেছে। আঞ্চলিক অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত- চট্টগ্রাম বু্যরো জানিয়েছে, রাসেল ভাইপার সাপে (কাটা) আক্রান্ত হওয়ার ভীতি দূরীকরণসহ কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী সব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের ৬ নির্দেশনা দিয়েছেন। গত শনিবার জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাপে কাটা রোগীর জীবন রক্ষার্থে জেলার প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে এন্টিভেনোমসহ যাবতীয় চিকিৎসা প্রস্তুত রাখতে হবে। সাপে কাটা রোগীর ব্যবস্থাপনায় কোনো ধরনের জঠিলতা সৃষ্টি হলে সব ধরনের দায়ভার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানের উপর বর্তাবে। এ বিষয়ে স্যানিটারি ইন্সপেক্টর, স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য সহকারীসহ সিএইচসিপিদের মাধ্যমে স্বাস্থ্যশিক্ষা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। যে কোনো সাপে কাটার সঙ্গে সঙ্গে ওঝার শরণাপন্ন না হয়ে অতি দ্রম্নত সময়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তারা স্থানীয় জাতীয় সংসদ সদস্য, জনপ্রতিনিধি, উপজেলা প্রশাসন, তথ্য অফিস ও সংবাদকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নিতে হবে। রাসেল ভাইপারে আক্রান্ত ব্যক্তি কম সময়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে আসলে এন্টিভেনোমসহ যাবতীয় চিকিৎসা সেবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে সম্ভব। এ বিষয়ে বহুল প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি লিফলেট, পোস্টার ও ব্যানার উপজেলা ও কমিউনিটি ক্লিনিকে টাঙ্গাতে হবে। একইসঙ্গে রাসেল ভাইপারে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা সুবিধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে পাওয়া যাবে মর্মে স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় মিডিয়াতে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, জীবিত রাসেল ভাইপার ধরতে পারলে পুরস্কার এই ঘোষণার পর থেকে পদ্মা পাড়ের বাসিন্দারা সাপ ধরতে তৎপর হয়ে ওঠে। গত দুই দিনে বেশ কয়েকটি সাপ ধরে বন বিভাগে জমা দিয়ে প্রাপ্তি স্বীকার আনতে গেলে সেখানে বিপত্তি কর্তৃপক্ষের। ফরিদপুরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা গোলাম কুদ্দুস ভূঁইয়া বলেন, এ জাতীয় প্রাণী ধরার কোনো বিধান নেই। ধরাটাই অপরাধ। তিনি বলেন, 'গত দুই দিনে বেশ কয়েকজন রাসেল ভাইপার সাপ নিয়ে আমাদের কাছে আসে এবং প্রাপ্তি স্বীকার পত্র চায়। আমি প্রাপ্তি স্বীকারপত্র দিতে পারি না। রোববার দুপুর পর্যন্ত তিনজন পুরস্কারের আশায় বন বিভাগে রাসেলস ভাইপার জমা দেওয়ার চেষ্টা করছে। এ নিয়ে আমরা বিপদে পড়েছি।' ফরিদপুরে জীবিত একটি রাসেলস ভাইপার ধরেছেন আলীয়াবাদ ইউনিয়নের সাইনবোর্ড এলাকার বাসিন্দা মনোরুদ্দিন খানের ছেলে কৃষক রেজাউল খান। শনিবার রাতে সাপটি নিয়ে আসা হয় ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সামনে। গত বৃহস্পতিবার ফরিদপুর কোতোয়ালি এরিয়ার মধ্যে জীবিত রাসেল ভাইপার ধরতে পারলে ৫০ হাজার করে টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক আরিফ। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত জেলা কার্যনির্বাহী কমিটির প্রস্তুতি সভায় এ ঘোষণা দেন তিনি। কৃষক রেজাউল খান জানান, বৃহস্পতিবার বিকালে আলিয়াবাদ ইউনিয়নের সাইনবোর্ড এলাকার ফসলি জমিতে চাষ করার সময় রাসেলস ভাইপারটি দেখতে পান। পরে সেটিকে অ্যালুমিনিয়ামের পাতিলে ভরে পস্নাস্টিকের নেটের আবরণ দিয়ে পাতিলের মুখ বন্ধ করে সাপটিকে আটক করেন। তিনি বলেন, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আওলাদ হোসেন জানিয়েছেন সাপটি বন বিভাগে জমা দিয়ে প্রাপ্তি স্বীকারপত্র নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে যেতে হবে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন সাপ নিয়ে বন বিভাগে গেলে তারা সেটি নেয় না এবং প্রাপ্তি স্বীকার পত্রও দেয় না। গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি জানান, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের রাসেল মিয়ার বাড়িতে রাসেলস ভাইপার আতঙ্কে মারা হলো একটি কালাচ বা শিয়র চাদা সাপ। শনিবার রাতে সাপটিকে আটক করার পর সেটিকে মেরে ফেলা হয়। শুধু চাঁদপুর নয়, সারা উপজেলাতে রাসেল ভাইপার আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে প্রকৃত রাসেল ভাইপারের দেখা মেলেনি কোথাও। \হরাসেল মিয়া জানান, তিনি শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে হেমায়েতপুর বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। মোটর সাইকেলের আলোয় বাড়ির সিঁড়িতে একটি সাপ দেখতে পান। এটিকে রাসেল্‌স ভাইপার মনে করে চিৎকার দেন। বাড়ির লোকজন ও প্রতিবেশীরা এসে কৌশলে সাপটিকে একটি কৌটায় আটক করে। গ্রামের লোকজন ও প্রবীণ ব্যক্তিরা সাপটিকে শিয়র চাদা সাপ বলে চিহ্নিত করেন ও মেরে ফেলেন। হেমায়েতপুর বাজারের ওষুধ ব্যবসায়ী রাজন জানান, রাসেল্‌স ভাইপার ধরা পড়ার খবর পেয়ে তিনি সাপটি দেখতে চাঁদপুর গ্রামের রাসেল মিয়ার বাড়িতে আসেন। সেখানে দেখতে পাওয়া যায় কালাচ বা শিয়র চাদা সাপ। যার ইংরেজি নাম কমন ক্রেট জাতের সাপ। এ সাপটিও বিষধর। তাই সাপটিকে স্থানীয় লোকজন একটি কৌটায় রেখে মেরে ফেলে। তবে সোস্যাল মিডিয়ায় রাসেলস ভাইপার আতঙ্ক নিয়ে ব্যাপক প্রচারণার ফলে এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। একই কথা জানালেন গ্রাসের ডিস ব্যবসায়ী আব্দুর রব ও ঠান্ডু ডাক্তার।