১২০ ঘণ্টা পরেও মেরাদিয়ায় কোরবানির বর্জ্য
প্রকাশ | ২৪ জুন ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
কোরবানি শেষ হওয়ার প্রায় এক সপ্তাহ পরেও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন মেরাদিয়ার বিভিন্ন জায়গায় পশুর বর্জ্য পড়ে থাকতে দেখা গেছে; অথচ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সব বর্জ্য অপসারণের ঘোষণা ছিল।
৩নং ওয়ার্ডের নয়াপাড়ার বিভিন্ন গলিতে এখনো গরুর মাথা, হাড়গোড়সহ নানা উচ্ছিষ্ট, খড় ও চট পড়ে রয়েছে। এগুলো থেকে বের হওয়া দুর্গন্ধ এলাকাবাসীর জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে।
মেরাদিয়ার যে সড়কে পশুর হাট বসেছিল, সেখানে গোবর আর কাদায় মাখামাখি অবস্থা দেখা গেছে। সড়কের পাশের মাটিতে ছোট ছোট বর্জ্য আর গোবরের গন্ধের কারণে পরিবেশ হয়ে উঠেছে অসহনীয়।
স্থানীয়রা জানান, সিটি করপোরেশনের কর্মীরা পশুর বর্জ্যের বড় বড় স্তূপ অপসারণ করলেও গলির ভেতর থেকে ছোট ছোট বর্জ্য সরানোতে নজর দেয়নি। এ জন্য টাকা চাওয়ার অভিযোগ করেছেন স্থানীয় এক প্রবীণ।
কোরবানি দাতারাও পর্যাপ্ত জীবাণুনাশক ও বিস্নচিং পাউডার ছিটায়নি। তীব্র রোদ আর মাঝেমধ্যে ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে সেসব বর্জ্যে পরে পুঁতিগন্ধময় পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন বেশ আগে থেকেই নানা পরিকল্পনা ঘোষণা করে। এবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ৬ ঘণ্টার মধ্যে আর দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পশুর বর্জ্য অপসারণের ঘোষণা দিয়েছিল।
নির্ধারিত সময়ে বর্জ্য অপসারণের দাবি করে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তিও পাঠানো হয়। তবে ঈদের পঞ্চম দিনেও একটি এলাকায় এই দুরবস্থা কেন, সে বিষয়ে নগর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর অসুস্থ জানিয়ে তার ঘনিষ্ঠ একজন বলেছেন তিনি কথা বলবেন না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা শাখার এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মন্তব্য না করে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার বক্তব্য নিতে বলেন। তবে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা বলেছেন, এ বিষয়ে বক্তব্য দেবেন প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা।
মেরাদিয়াবাসী যে পশুর বর্জ্যের কারণে ভুগবেন, সে বিষয়ে হাট চলার সময়ই বোঝা গিয়েছিল। নগরীর অন্য পশুর হাটগুলো খোলা মাঠে বসানো হলেও নগরীর এই অংশে পশু কেনাবেচা চলে সড়কে। মূল সড়কের পাশে আর গলির সড়কের ওপরেই দাঁড় করানো হয় পশু।
ঈদের দিন পশু সরে গেলেও পরিচ্ছন্নতায় জোর দেয়নি বাজার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা লোকজন।
যেখানে পশু দাঁড় করানো হয়েছিল, সেখানে খানাখন্দে বর্জ্য জমে থাকতে দেখা যায়। গরুর গোবর ও কাদা মিশে একাকার হয়ে থাকায় রাস্তা দিয়ে হাঁটার পরিবেশও নেই।
কোরবানির ঈদে যেখানে মেরাদিয়া হাট বসে, সেখানে এমনিতে সারা বছর বসেন কাঁচা বাজারের দোকানিরা। দুর্গন্ধের কারণে বিক্রেতাদের এখন বসার কোনো পরিবেশ নেই।
সবজি বিক্রেতা কাউসার আহমেদ বলেন, "ঈদ শেষ তো সপ্তাহখানেক হয়ে গেল। এখনো এই রাস্তায় গোবর পড়ে আছে। গোবর আর কাদা-পানি মিলে কত খারাপ পরিবেশ। এখানে এই পরিস্থিতি দেখে কোনো কোনো ক্রেতা অন্য বাজারে চলে যাচ্ছে।"
এই এলাকার বাসিন্দা মাজারুল ইসলাম বলেন, "কোনটা গোবর আর কোনটা কাদা সেটাও বোঝার উপায় নেই। সব এক রঙের হয়ে গেছে। যেহেতু এখানে গরুর হাট বসেছিল তাই বিস্নচিং পাওডার ছিটিয়ে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা উচিত ছিল।"
দুই নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোহাম্মদ রহেদ বলেন, "কোরবানির পরে বড় বড় বর্জ্যের স্তূপগুলো সরানো হলেও ছোট ছোট বর্জ্য এখনো সরানো হয়নি। হাট বসায় বিভিন্ন জায়গায় গরুর গোবর পড়েছিল। সেগুলো বৃষ্টির পানিতে এখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।"
তিন নম্বর ওয়ার্ডের নয়াপাড়ায় একটি গলিতে কোরবানির পশু জবাইয়ের পর মাংস কাটাকাটিতে ব্যবহার করা চাটাই, খড়, মাথার উচ্ছিষ্ট, হাড়গোড়, মাথার ছোট চামড়া পড়ে থাকতে দেখা যায়।
পাশে দাঁড়িয়ে একজন প্রবীণ বলেন, "সিটি করপোরেশনের লোকদের কইছি ময়লা নিতে। তারা টাকা চায়। টাকা ছাড়া ময়লা নেব না কয়। তাদের লগে কি এহন মারামারি করুম?"
পাশে দাঁড়িয়ে নারী ওড়না দিয়ে নাক-মুখ চেপে ধরে বলছিলেন, "এখানের গন্ধে থাকা যায় না। প্রচুর গন্ধ। একটা গাড়ি নিয়া আইছিল সেটা সামনে থেকে নিছে, কিন্তু এখান থেকে নেয় নাই।"
তাদের সঙ্গে কথা বলার সময়ে আরও আট থেকে দশজন এসে এ ভোগান্তির বিষয়ে আক্ষেপ জানালেন।
পাশের একটি এলাকায় সড়কের মধ্যে পড়ে ছিল গরুর দাঁতের হাড়, মাথার অংশ, মাথার চামড়া। দুর্গন্ধে সেখানে টিকে থাকাই মুশকিল।
স্থানীয় বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, 'গরুর মাথা, হাড় আর নানা কিছুতে পচন ধরেছে। গন্ধে বাসায়ও টেকা যাচ্ছে না। আর এটা একটা মাত্র রাস্তা হওয়ায় এদিক দিয়ে চলাচল করতে আমরা বাধ্য।'
এ বিষয়ে তিন নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাকসুদ হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে কাউন্সিলর কার্যালয়ে গিয়ে পাওয়া যায়নি।
পরে ওয়ার্ড সচিব ওসমান গনিকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, "কাউন্সিলর মাকসুদ হোসেন একটু অসুস্থ। এখন হাসপাতালে যাচ্ছেন তাই কথা বলতে পারবেন না।"
ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মতো সিটি করপোরেশনেরও কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি, কারণ এক কর্মকর্তা দেখিয়ে দিয়েছেন অন্যজনকে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সফিউলস্নাহ সিদ্দিক ভুঁইয়াকে ফোন করলে জানান, তিনি এই দায়িত্বে নেই।
তিনি অঞ্চল-২ এর নির্বাহী কর্মকর্তা সুয়ে মেন জোকে কল করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, "কোরবানির বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য অঞ্চলভিত্তিক দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।"
তবে সুয়ে মেন জো বলেছেন, তিনি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নেই। তিনি সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ নাছিম আহমেদের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
পরে নাছিম আহমেদকে ফোন করলে তিনি ব্যস্ত আছেন জানিয়ে পরে ফোন করতে বলেন।
পরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অঞ্চল-২ এর দায়িত্বে থাকা মো. আবু তাহের ফোন দিয়ে বলেন, "আমরা মেরাদিয়ার সমস্ত জায়গা পরিষ্কার করেছি। হয়তো ভেতরে এক দুই জায়গায় অজান্তে রয়ে যেতে পারে। আমরা আবারও ঘুরে দেখছি, যদি কোথাও পাই তবে ব্যবস্থা নেব।"