শিবচরে মৌসুমি ফলে বাজার সয়লাব, দামে অসন্তুষ্ট ক্রেতা

প্রকাশ | ০৫ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
মধুমাস জ্যৈষ্ঠ শেষ হয়ে প্রকৃতিতে আষাঢ় এলেও মৌসুমি ফলের কমতি নেই বাজারে। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচুসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফলে সয়লাব মাদারীপুর শিবচরের বিভিন্ন বাজার। বিভিন্ন হাট বাজারের মধুমাসের রসালো ফল নিয়ে বসেছে ফল বিক্রেতারা। জ্যৈষ্ঠের শুরুতে দেশীয় ফলের আগমনে ফলের ব্যবসাকে কেন্দ্র করে ব্যস্ততা বেড়েছে বাজারগুলোতে। তবে এবার দেশি ফলের দামে সন্তুষ্ট নন ক্রেতারা। প্রকৃতির তাপে-গরম, বৃষ্টির হাঁস-ফাঁস অবস্থার মধ্যেও রসনা তৃপ্ত করতে সন্ধ্যা বা রাতে বাড়ি ফেরার পথে উচ্চবিত্ত পরিবারের গৃহকর্তা ঠিকই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন এসব বাহারি মৌসুমি ফল। তবে নিম্ন আয়ের মানুষরা চড়া দাম হওয়ায় এসব ফল খুব স্বল্প পরিমাণেই কিনতে পারছেন। শিবচর পৌর বাজার ও পাঁচ্চরসহ বিভিন্ন ফলের বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ঈদের পর এখনো বাজার পুরোপুরি জমে না উঠলেও সব ধরনের দেশি ফলই পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে এখন আমের ভরা মৌসুম চলায় প্রায় প্রতিটি দোকানেই পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন জাতের আম। লিচুর মৌসুম শেষের দিকে হওয়ায় গুটি কয়েক দোকানেই পাওয়া যাচ্ছে রসালো এই ফল। এছাড়া আছে জাম, কাঁঠাল, জামরুল। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে কাঁঠালের আকার অনুপাতে ১০০ থেকে ৪০০ টাকা টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে মান ও আকার ভেদে প্রতি কেজি হিমসাগর আম ৮০ থেকে ১৬০ টাকা, ল্যাংড়া ৮০ থেকে ১২০ টাকা, হাড়িভাঙ্গা ১০০ থেকে ১৩০ টাকা, আম্রপালি ৯০ থেকে ১৩০ টাকা, ব্যানানা ম্যাংগো ১০০ থেকে ১৭০ টাকা, কাটিমন আম ১১০ থেকে ১৪০ টাকা, গোপালভোগ আম ৭০ থেকে ১১০ টাকা, ফজলি আম ৬০ থেকে ৯০ টাকা, সুরমা ফজলি আম ৭০ থেকে ১১০ টাকা, বারি আম-৪ (হাইব্রিড) ১০০ থেকে ১৪০ টাকা, লক্ষণভোগ আম ৫০ থেকে ৮০ টাকা, কালিভোগ আম ৫০ থেকে ১০০ টাকা, কোহিতুর আম ৬০ থেকে ৮০ টাকা, নাক ফজলি আম ৫০ থেকে ৭০ টাকা, মলিস্নকা আম ৬০ থেকে ৯০ টাকা, গোবিন্দভোগ আম ৫০ থেকে ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি জাম বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে, প্রতি কেজি লটকন বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে। আকার ভেদে আনারসে জোড়া ৪০-৬০ টাকা, ১০০টি লিচু ৩৬০ থেকে ৪০০ টাকা ও প্রতি কেজি জামরুল ৮০ থেকে ১২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। বাজারে প্রতি পিস তাল ছোট (তিন কোষ) ১০ টাকা। আকার ভেদে প্রতি পিস ৬০-৮০ টাকা, ডাব প্রতি পিস ১০০-১২০ টাকা, সবরি কলা প্রতি হালি ৩০-৩৫ টাকা, চম্পা কলা ২০-২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মৌসুম অনুসারে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ফলের দাম বেশি দেখা গেছে। এর কারণ হিসেবে ফলন ও সরবরাহ কম হওয়াকে দায়ী করছেন বিক্রেতারা। উপজেলা পাইকারি ফল ব্যবসায়ী সোহেল আম্মেদ রানা বলেন, এবার আম, জাম, লিচুর মতো দেশি ফলের ফলন কম হয়েছে। তার ওপর ঝড়-বৃষ্টি ও তাপপ্রবাহের কারণে অনেক ফল নষ্ট হয়েছে। ফলে বাজারে দেশি ফলের যে চাহিদা রয়েছে তার তুলনায় সরবরাহ অনেক কম। তাই দামও বেশি। বিক্রেতা বলেন, অন্যান্য বছর এই সময় বাজারে যে পরিমাণ আম ঢোকে, এবার তার তুলনায় আম অনেক কম আসছে। তাই দাম বেশি। ফল আনা নেওয়ায় পরিবহণ খরচ ও শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে। এগুলো কম থাকলে ফলও কম দামে পাওয়া যেতো। ফল কিনতে আসা লিটন খান বলেন, অন্যান্য বছর এ সময় ৬০ থেকে ৭০ টাকা করে ভালো আম পাওয়া যেতো। কিন্তু এই বছর একটু ভালো মানের আম ১২০-১৩০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। আমের ফলন হয়তো কিছুটা কম হয়েছে। তাই বলে এত দাম হওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। অন্যান্য বছর শিবচর বাজারে কম দামে আম পাওয়া যেত। শিবচর ইউএনও আব্দুলস্নাহ আল মামুন জানান, গ্রীষ্ম মৌসুমের নানা ধরনের দেশীয় ফল এখন বাজারে এসেছে। এগুলো মানুষের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। আমরা চাই মানুষ যেন ফরমালিনমুক্ত নিরাপদ ফল খেতে পারেন। কোথাও কোনো অনিয়ম পেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।