ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে ও পরিচ্ছন্নতায় শিক্ষার্থীরা

প্রকাশ | ০৯ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

স্বদেশ ডেস্ক
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে থানায় হামলা, অগ্নিসংযোগ ও দুর্বৃত্তদের হাতে পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনায় ১১ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে পুলিশ সদস্যরা কর্মবিরতিতে রয়েছেন। এর ফলে গত দুইদিন ধরে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছে শিক্ষার্থীরা। শুধু তাই নয়, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের কারণে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনাও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে তারা। গত মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়কে এমন চিত্রই দেখা গেছে। আঞ্চলিক অফিস, স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত- বরিশাল অফিস জানিয়েছে, বরিশালে ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক কর্মীরা। বরিশাল নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে তাদের ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। তবে মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) জানিয়েছেন, দুই-একদিনের মধ্যেই পুলিশ স্বাভাবিক কাজে ফিরে আসবে। বরিশাল জেলা যুব আন্দোলন শহরের গুরুত্বপূর্ণ দুটি স্পট কাকলির মোড় ও লঞ্চঘাটে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছে। সেখানে জেলা যুব আন্দোলনের সভাপতি এইচ এম সানাউলস্নাহ, সহ-সভাপতি আরমান হোসেন রিয়াদ, দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ সোলায়মান, অর্থসম্পাদক ইব্রাহিম হোসাইন দায়িত্ব পালন করছেন। মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) তানভির আরাফাত জানান, তারা উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় বসেছেন। দুই একদিনের মধ্যেই পুলিশ তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরবে। স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জানান, গত দুদিন ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন ও শহরে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনাও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছে শিক্ষার্থীরা। গত মঙ্গলবার সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, স্কাউটস, গার্লস গাইডসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে যানজট নিরসনে ট্রাফিকিং করতে দেখা গেছে। বুধবার সকাল থেকে বিভিন্ন সড়কে শিক্ষার্থীরা রয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আয়মান বলেন, 'সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের যৌক্তিক দাবি আদায় করেছে। এখন আমাদের দেশকে আমরাই সাজাবো।' সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আহ্বায়ক আবদুন নূর বলেন, 'পুলিশ সদস্যরা কর্মবিরতিতে চলে যাওয়ার পর সড়কের নিয়মশৃঙ্খলা রক্ষায় নেমেছে আমাদের সন্তানরা। এটি দেখে আমরা গর্বিত। তবে দ্রম্নত দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ছাত্রসমাজ পড়ার টেবিলে ফেরত যাবে সেই প্রত্যাশা করছি। স্টাফ রিপোর্টার, মাদারীপুর জানান, মাদারীপুরে গত কয়কে দিনে শিক্ষার্থীদের অসহযোগ আন্দোলনে শহরের বিভিন্ন রাস্তায় ময়লা-আর্বজনার সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে শহররে ডিসি ব্রিজ এলাকা থেকে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এরপর কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে শহরের বিভিন্ন জায়গায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করে তারা। এ কাজে বিশ্ববিদ্যালয়, কলজে, স্কুলের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরাও অংশগ্রহণ করেন। মাহি নামের এক শিক্ষার্থী জানান, 'দীর্ঘদিন আন্দোলনের কারণে শহররে বিভিন্ন জায়গায় অনেক ময়লা-আবর্জনা জমা হয়েছে। তাই আমরা নিজেরাই মাদারীপুর শহর পরিষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছি।' স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল জানান, টাঙ্গাইল শহরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বুধবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে নেমে পড়ে। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে মোড়ে যানজট নিরসনে ট্রাফিকের কাজ করতেও দেখা যায় তাদের। সরেজমিন দেখা যায়, আন্দোলন চলাকালে শহরের শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যান ময়লা-আবর্জনায় ভরপুর ছিল। বুধবার শিক্ষার্থীরা সেসব পরিষ্কার করে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ বিভিন্ন সড়কের ময়লা-আবর্জনাও তারা পরিষ্কার করেছে। এদিকে শিক্ষার্থীরা শহরের গুরুত্বপূর্ণ নিরালা মোড়, কাজী নজরুল সরণি, বটতলা ও বাসস্ট্যান্ডে অবস্থান নিয়ে ট্রাফিক হিসেবে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণের কাজ করছে। কেউ লাঠি হাতে, কেউ মুখে বাঁশি নিয়ে ট্রাফিক পুলিশের ন্যায় ইশারা-ইঙ্গিতের মাধ্যমে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে। স্থানীয় সমন্বয়ক আশফাকুর রহমান জানান, শহরের কোথাও কোন পুলিশ না থাকায় নিজেরাই ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে কিছুটা হলেও সড়কে চলাচলকারী যানবাহন ও যাত্রীদের ভোগান্তি কম হচ্ছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিজের দায়িত্ববোধ থেকে শহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে নেমে পড়েছে। কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, ঢাকার কেরানীগঞ্জে সড়ক-মহাসড়কে বেড়েছে যান চলাচল। আর যান চলাচল বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শূন্য ট্রাফিক সিগন্যালগুলোতে দায়িত্বপালনে নেমে পড়েছে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এর পাশাপাশি করে যাচ্ছে রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের কাজ। বৃহস্পতিবার কেরানীগঞ্জ উপজেলার কদমতলি, ঢাকা-মাওয়া লিঙ্ক রোড, গুলিস্তান-নবাবগঞ্জ, জিনজিরা, বুড়িগঙ্গা প্রথম, দ্বিতীয় ও বসিলা সেতুসহ ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচ্ছন্নতার কাজ করতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের। সিগন্যালগুলোতে শিক্ষার্থীরা পালা করে দায়িত্বপালন করছে। কয়েক জায়গায় তাদের সঙ্গে আনসার সদস্যও রয়েছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কিছু সদস্যকেও বিভিন্ন সিগন্যালে দায়িত্বপালন করতে দেখা যাচ্ছে। এর পাশাপাশি উপজেলা সরকারি ইস্পাহানি কলেজ, জিনজিরা পীর মোহাম্মদ পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কেরানীগঞ্জ গালর্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কেরানীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজসহ বিভিন্ন এলাকায় পরিচ্ছন্নতার কাজে নেমেছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তারা রাস্তা ঝাড়ু দিচ্ছেন, সড়কের আবর্জনা সরিয়ে ফেলছে। অটোরিকশাচালক আব্দুল আলী জানান, যাদের হাতে কলম আর কাঁধে বইয়ের ব্যাগ থাকার কথা ছিল আজকে তারা হাতে নিয়েছে ঝাড়ু আর কাঁধে নিয়েছে ময়লার বস্তা। তারা খুব ভালো কাজ করছে। পথচারী আফরোজ চুমকি জানান, শহরে যে ট্রাফিক পুলিশ নেই, তা বোঝা যাচ্ছে না। ছাত্ররা খুব সুন্দরভাবে সড়কের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইউএনও আবু রিয়াদ বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে জনসাধারণের ভোগান্তি লাঘবে ছাত্ররা নিজ উদ্যোগে যে দায়িত্ব পালন করছে আমি তাদের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক, পূর্বাচলের ৩০০ ফিট সড়ক, রূপসী-মুড়াপাড়া-কাঞ্চন সড়কসহ রূপগঞ্জের অভ্যন্তরীণ সড়কের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ করছে শিক্ষার্থীরা। তাদের পাশাপাশি উপজেলা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাজে অংশ নেয়। তারা রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজারসহ বিভিন্ন স্থানের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার ও পরিচ্ছনতায় নিয়োজিত রয়েছে। গত দুই দিন ধরে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত তারা এ কর্মসূচি পালন করছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভুলতা, গোলাকান্দাইল, বরপা, কাঞ্চন, তারাবো, মুড়াপাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকার রাস্তা-ঘাটের ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে। লোকজনকে এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেয় শিক্ষার্থীরা। সুশৃঙ্খলভাবে যানবাহন চলাচল ও যানজট নিরসনে কাজ করছে তারা। এ সময় ভুলতা স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কাঞ্চন সলিমউদ্দিন চৌধুরী কলেজ, পাঁচরুখী বেগম আনোয়ারা কলেজ, হাজী নূরউদ্দিন আহম্মেদ উচ্চ বিদ্যালয়সহ রূপগঞ্জের বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ ও পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে। চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রামের চন্দনাইশে চলমান পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সারাদেশে যানজট নিরসনে ট্রাফিকের দায়িত্বভার নিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের এই কাজের প্রশংসা করেছে পথচারী যাত্রী ও সাধারণ মানুষ। শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে দেশের শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন করেছে। তাদের চেষ্টায় দেশের আগামীও বদলে যাবে বলে আশা করে তারা। বৃহস্পতিবার সরেজমিন দেখা যায়, পুলিশের কর্মবিরতি থাকায় চন্দনাইশের বিভিন্ন সড়কে দেখা যায়নি কোনো ট্রাফিক পুলিশকে। এ অবস্থায় চন্দনাইশ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে যান চলাচলে শৃঙ্খলা ফেরাতে রাস্তায় রয়েছে শিক্ষার্থীরা। তারা বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে সড়ক ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করেছে। চন্দনাইশে সেনাবাহিনী ছাড়া মাঠে কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা না থাকলেও চন্দনাইশে অনেকটাই স্বাভাবিক রয়েছে সাধারণ মানুষের চলাচল। বৃহস্পতিবার দিনভর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, এলাকাভিত্তিক পাহারা প্রদানসহ নানা সমাজসেবামূলক কাজে অংশ নিয়েছে শিক্ষার্থীরা। নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিভিন্ন ধর্মের উপসনালয়গুলোতে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়েছে।