নড়াইলের কালিয়ায় নৌকা তৈরির পর বিক্রির জন্য হাটে ক্রেতার অপেক্ষা কারিগররা -যাযাদি
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বর্ষায় খাল-বিল পানিতে টইটম্বুর। বর্ষা মৌসুমে নিচু এলাকার লোকজনের যোগাযোগের মাধ্যম হয়ে ওঠে নৌকা। চারদিকে বর্ষায় যখন রাস্তাঘাট তলিয়ে যায় তখন নৌকা ও কলাগাছের ভেলা হয়ে ওঠে পারাপারের ভরসা। তাই কদর বেড়েছে বিভিন্ন ধরনের নৌকার। সে কারণে নড়াইলের কালিয়ায় নৌকা তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। হাতুড়ি-বাটালের ঠুকঠাক শব্দে মুখর কালিয়ার বড়নাল ও গাজীরহাটসহ বিভিন্ন এলাকা।
সরেজমিন গেলে দেখা যায়, কালিয়ার বড়নাল গ্রামে কারিগররা নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কাঠের ব্যবসায়ী কিসলু মোল্যা বলেন, 'বছরের ৮ মাস কাঠের ব্যবসা করি, আর বর্ষাকালে কারিগর দিয়ে নৌকা তৈরি করে বিক্রি করি। ১০ বছর ধরে এ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছি।'
তিনি আরও জানান, 'একটি নৌকা ৬ হাজার থেকে শুরু করে ১২ হাজার টাকা বিক্রি করি। ১১ ফিট থেকে ১৪ ফিট সাইজ নৌকা। মেহগনি কাট দিয়ে নৌকা তৈরি করি।'
আরেক কাঠের ব্যবসায়ী মিটু মোল্যা বলেন, 'আমি পেশায় কাঠ ব্যবসায়ী, আর বর্ষা এলে নৌকা বানিয়ে বিক্রি করি। ৪ বছর ধরে এ কাজ করছি। আমি নিজেও নৌকা তৈরি করি। জুন মাস থেকে নৌকা তৈরি কাজ শুরু হয়। আগস্ট মাসের শেষ পর্যন্ত তৈরি ও বিক্রি চলে। একটা নৌকা সাত থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করি। এবার ৮ থেকে ৯ হাত দৈর্ঘ্যের নৌকা সাত থেকে দশ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নৌকা বড় হলে দামও বাড়ে। গত দুই মাসে ৩০টি নৌকা বিক্রি করেছি।'
কালিয়া উপজেলার গাজীরহাট বাজারে ও নড়াইল সদরে রামসিদ্দি বাজারে বুধবার নতুন ও পুরাতন নৌকার হাট বসে। সেখানে কথা হয় নৌকা কিনতে আসা উথলী গ্রামের রিয়াজ মোল্যার সঙ্গে। তিনি জানান, বন্যায় নিচু সড়ক ডুবে যায়। বিলের ধান আনা, পরিবারের সদস্যদের পারাপার করার জন্য ১০ হাজার টাকা দিয়ে নৌকা কিনেছেন।
নৌকার কারিগর মিন্টু মলিস্নক জানান, তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রি। বর্ষাকালে ৩ মাস নৌকা তৈরির কাজ করেন। বর্ষায় নৌকা আর বছরের বাকি সময়টা রাজমিস্ত্রির কাজ করে চলে তার সংসার। একটা নৌকা তৈরি করতে একজনের ২ দিন সময় লাগে। মজুরি পান ২ হাজার ৫শ' টাকা।
আরেক কারিগর সিরাজুল ইসলাম বলেন, 'আমি পেশায় কাঠমিস্ত্রি। বছরে ৮ মাস ঘরের কাজ করি। বাকি চার মাস নৌকার কাজ। দুইজন মিলে এক দিনে একটা নৌকা বানাই।'
এ ব্যাপারে নড়াইল বিসিকের উপব্যবস্থাপক প্রকৌশলী সোলায়মান হোসেন বলেন, নৌকা তৈরির কারিগরদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা ও তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিসহ এ শিল্পের উন্নয়নের জন্য যা যা করা দরকার তা করা হবে।