বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২

বাবাকে প্রতিনিয়ত খুঁজছে শিশু মুহিনের চোখ

রেজাউল করিম লিটন, চুয়াডাঙ্গা
  ১৭ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
বাবাকে প্রতিনিয়ত খুঁজছে শিশু মুহিনের চোখ
বাবাকে প্রতিনিয়ত খুঁজছে শিশু মুহিনের চোখ

পিতৃহারা ৮ মাস বয়সি শিশু মুহিনের ছোট্ট দুটি চোখ প্রতিনিয়ত খুঁজছে তার বাবাকে। কিন্তু কোথায় তার বাবা। বাবাকে আর কোনোদিনই পাবে না শিশু মুহিন। জন্মের পরই এতিম হলো শিশু মুহিন। ছাত্রদের কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলন চলাকালে ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় ছেলের জন্য দুধ কিনতে বের হয়ে ঢাকার মিরপুর এলাকায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন শিশু মুহিনের বাবা প্রকৌশলী শাহরিয়ার শুভ। ঢাকায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৩ জুলাই সন্ধ্যায় মারা যান তিনি।

১৯ জুলাই শুক্রবার সন্ধ্যায় বাড়ির একটি পাচিল নির্মাণের জন্য ছেলেকে ফোন করেছিলেন বাবা আবু সাইদ। একবার কথা হয়েই ফোন বন্ধ পান তিনি। এরপর এশার নামাজের পর জানতে পারেন তার ছেলের গুলি লেগেছে।

1

নিহত প্রকৌশলী শুভর বাবা আবু সাইদ বলেন, 'ওইদিন শুক্রবার জুমার দিন। দেশের এ অবস্থায় জুমার নামাজ শেষে দোয়া করা হলো। এরপর নামাজ শেষ করে বাড়িতে আসলাম। সন্ধ্যার পর শুভকে ফোন দিলাম। বাড়িতে একটা পাচিল তৈরি করব বলে। কিন্তু ঠিক মতো কথা হলো না। ফোনটি কেটে গেল। এরপর শুভর মা আমাকে বকা দিল। ছেলে অনেক ব্যস্ত থাকে। যখন-তখন ফোন করলে হবে। এরপর আমি ফোন রেখে দিই। এশার নামাজে মসজিদে যায়। নামাজ শেষ করে এসে ঘরে ঘুমোতে যায়। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা থেকে শুভর স্ত্রী ফোন দিয়ে বলছে-আব্বা আপনার ছেলের গুলি লেগেছে।'

সেদিন ঢাকার মিরপুরে নিহত প্রকৌশলী শুভর বাসায় ছিল তার ছোট ভাই জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সিয়াম। সিয়াম জানান, তিনি শাহরিয়ারের সন্ধানে বাসা থেকে বের হয়ে একদল অস্ত্রধারীর মুখোমুখি হন। ভাইয়ের মুমুর্ষু অবস্থার কথা বলে সেখান থেকে ছাড়া পান। তবে সরকারি-বেসরকারি বেশ কয়েকটি হাসপাতালে খোঁজখবর নিয়ে ভাইয়ের হদিস পাচ্ছিলেন না। পরে পুলিশের সহযোগিতায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালে যান। এ সময় হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে শাহরিয়ারের মাথা থেকে গুলি বের করতে অস্ত্রোপচার চলছিল। শনিবার দুপুরে আইসিইউয়ে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় মারা যান।

মঙ্গলবার রাতেই চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শংকরচন্দ্র গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয় শাহরিয়ারের মরদেহ। এরপর বুধবার (২৪ জুলাই) সকালে তাকে দাফন করা হয়। হাসপাতাল থেকে দেওয়া মৃতু্য সনদে বন্দুকের গুলিতে আহত, গুলির আঘাতে মাথার খুলি চুরমার ও মস্তিষ্কে ক্ষতের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে পরিবারের উপার্জক্ষম ছেলেকে হারিয়ে অসহায় বাবা-মা ও শুভর স্ত্রী। ছেলের কথা জিজ্ঞেস করতেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন চম্পা বেগম। কথা বলার শক্তিই হারিয়ে ছেলেছেন তিনি। নাতি মুহিনকে কোলে নিয়ে কেঁদে চলেছেন অনবরত।

নিহত প্রকৌশলী শাহরিয়ার শুভর স্ত্রী রাজিয়া সুলতানাও নির্বাক। কি করবেন এখন-কোলের শিশু নিয়ে। তাকে কিভাবে বড় করবেন। সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ- বললেন প্রতিবেদককে।

স্থানীয় শংকরচন্দ্র ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মহিউল আলম সুজন বলেন, 'ছেলেটি অত্যন্ত মেধাবী ছিল। তার আয়েই চলতো পরিবারটি। নিহত শুভর ছোট ভাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। তার পড়ার খরচও শুভ চালাতো। এখন সবকিছুই সমস্যা হয়ে গেল। এ অবস্থায় পরিবারটির পাশে দাঁড়া সরকারকে অনুরোধ করছি।'

কৃষক পরিবারের সন্তান প্রকৌশলী শাহরিয়ার শুভ যশোরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে তড়িৎ প্রকৌশলে ডিপেস্নামা শেষে ঢাকায় একটি লিফট নির্মাতা প্রতিষ্ঠানে চিফ ইঞ্জিনিয়ার পদে চাকরি করতেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে