রৌদ্রোজ্জ্বল সাতকানিয়ায় আকস্মিক বন্যা

কোম্পানীগঞ্জে তীব্র নদী ভাঙনে বিলীন বাড়িঘর

প্রকাশ | ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

স্বদেশ ডেস্ক
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় আকস্মিক বন্যায় পস্নাবিত রাস্তাঘাট -যাযাদি
রৌদ্রোজ্জ্বল চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। এদিকে, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে তীব্র নদীভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বাড়িঘর। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিন্তারিত ডেস্ক রিপোর্ট- সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, গত কয়েক দিন ধরে রৌদ্রোজ্জ্ব্বল দিন পার করছেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার বাসিন্দারা। বৃষ্টিপাতহীন সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া ইউনিয়নে আকস্মিক বন্যা দেখা দেওয়ায় স্থানীয়দের মধ্যে কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে। রোববার উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে আকস্মিক বন্যায় পস্নাবিত রাস্তাঘাটের দৃশ্য দেখা যায়। বন্যার পানি গ্রামীণ সড়কের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সড়কে বিশালাকৃতির গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরে সাতকানিয়ায় বৃষ্টিপাত থেমে রোদের দেখা মিলেছে। হঠাৎ করে কাঠফাটা রোদে জনমনে অস্বস্তি দেখা দেয়। তবে অন্যদিকে বান্দরবানের পাহাড়ি অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। ওই পাহাড়ি ঢলের পানি সাতকানিয়া উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হাঙ্গর ও রামদা খালের পাড় ভেঙে লোকালয়ে প্রবেশ করায় আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। ঢলের পানি গ্রামীণ সড়কের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সড়কগুলো ভেঙে গেছে। এতে স্থানীয়দের চলাচলে দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। এ ছাড়াও সদ্য রোপণ করা আমন ধানের চারা ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। কেঁওচিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সৈয়দ আহমদ বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। কাঠফাটা রোদে বাড়ির বাইরেও যাওয়া যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় আমাদের এলাকায় আকস্মিক বন্যা দেখা দেওয়ায় জনমনে এক প্রকার কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টিপাত হয়নি তাহলে হঠাৎ করে এত পানি এলো কোথায় থেকে। গৃহিণী নাছিমা আকতার বলেন, 'আকস্মিক বন্যায় আমাদের যাতায়াতের একমাত্র সড়কটি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সড়কের একটি অংশ দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের কৃষিজমিও বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। হঠাৎ করে এমন পরিস্থিতি দেখে প্রথমে অবাক হয়েছিলাম। পরে জানতে পারলাম গত কয়েকদিন ধরে পাহাড়ে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সেই বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলের পানি হাঙ্গর খালের পাড় ভেঙে আমাদের এলাকায় প্রবেশ করেছে।' স্থানীয় আবদুল মোনাফ বলেন, 'পাহাড়ি ঢলের পানি আমাদের চলাচলের সড়কের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সড়কে একটি বিশালাকৃতির গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এখনো পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আপাতত আমরা ভিন্ন একটি রাস্তা দিয়ে হাটবাজারে যাতায়াত করছি।' সাতকানিয়া ইউএনও মিল্টন বিশ্বাস বলেন, পাহাড়ি ঢলের পানি কেঁওচিয়া এলাকার একটি সড়কের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়াও কিছু কৃষি জমির আমন ধানের চারাও নষ্ট হয়েছে। ঢলের পানি কমে গেলে গ্রামীণ সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, ডাকাতিয়া নদীর তীব্র ভাঙনে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ৭নং ওয়ার্ডের সব গ্রাম বিলীন হওয়া এখন মাত্র সময়ের ব্যাপার। তীব্র ভাঙনে আগের দিন যে বাড়িঘর, গাছপালা, স্থাপনা দেখা যাচ্ছে সেটি পরদিন গেলে আর দেখা মিলছে না। এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে ভাঙনকবলিত এলাকায়। স্থানীয়রা জানান, প্রায় একশ' বছরের পুরনো বাড়িও উত্তাল ডাকাতীয়া নদীর আগ্রাসী ভাঙনে আজ বিলীন। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মুছাপুর ৭নং ওয়ার্ডের সহস্রাধিক ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, মসজিদ, পারিবারিক কবরস্থান, মক্তব, জনতা বাজারের দোকান-পাট বিলীন হয়ে গেছে। অনেকের মা-বাবা ও আত্মীয়-স্বজনকে কবর দেওয়া হয়েছিল বসতভিটার পাশে। নিজের পরিবার ও ঘরবাড়ি সরিয়ে নিলেও নিতে পারছেন না স্বজনদের কবর। মা-বাবার শেষ স্মৃতি হিসেবে থাকা সেই কবরটি নদীতে হারিয়ে যাচ্ছে চিরতরে, চোখের সামনে এমন দৃশ্য দেখে চোখের পানি ধরে রাখা ছাড়া কোনো উপায় নেই ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষের। সহায়সম্বল হারিয়ে কেউ রাস্তার পাশে, কেউ আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন। এভাবে নদী ভাঙায় ভুক্তভোগীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। শত শত হেক্টর রোপা আমন ধানক্ষেত নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। দুশ্চিন্তায় কাটছে কৃষকদের দিনরাত। অন্যদিকে মুছাপুর রেগুলেটর যাওয়ার প্রধান সড়কটিও ভেঙে যাওয়ার পথে। বনবিভাগের তত্ত্বাবধানে সারি সারি ঝাউগাছ বাগানটিও হুমকির মুখে। নদীভাঙনে ঘর হারানো ভুক্তভোগী একজন বলেন, আগেই নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে বেড়িবাঁধের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এখন নতুন করে জেগে ওঠা চরে ওপর দিয়ে খনন করে গতিপথ পরিবর্তন করা হলে পানির স্রোত আর এদিকে থাকবে না। কিন্তু আমাদের দাবির কথা কেউ শুনছে না। ভাঙনের খবর পেয়ে ইতোমধ্যে কোম্পানীগঞ্জ ইউএনও আনোয়ার হোসাইন পাটোয়ারী, সেনাবাহিনী ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ভাঙনএলাকা পরিদর্শন করেছেন। ইউএনও আনোয়ার হোসাইন পাটোয়ারী বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে। শিগগিরই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।