'মাছ না ধরলে খামু কি চুলার মাডি'

সাগরে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশ | ১৭ মে ২০১৯, ০০:০০

আব্দুস সালাম আরিফ, পটুয়াখালী
'আমরা তো আর কোনো কাম কাইজ জানি না। এই মাছ ধরাই হিখছি (শিখেছি)। ছোডোকাল হইতে ট্রলারে ট্রলারে আছি। মাছ ধইর্রযা যে দুইডা টাহা পাই হেইয়া দিয়া গুরাগারা লইয়া কোনো রহম বাইচ্চা আছি। মোগো এমন কোন ক্যাশ কেবিটাল (ক্যাপিটাল) নাই যে হেইয়া ভাইঙ্গা ভাইঙ্গা খামু। এহন যে আমমেরা কন ৬৫ দিন মাছ ধরমু না। ত্যায় মাছ না ধরলে খামুকি চুলার মাডি।' এভাবেই নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মহিপুর মৎস্য বন্দরের পঞ্চাশোর্ধ্ব জেলে সোবাহান ফকির। আগামী ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত মোট ৫৬ দিন বঙ্গোপসাগরে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। দেশের সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের সুরক্ষায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ইতোমধ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। তবে নিষিদ্ধকালীন জেলে পরিবারগুলো কিভাবে চলবে সে বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে এ কর্মসূচির সফলতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তবে জেলেদের প্রণোদনার বিষয়টি সরকারের সদয় বিবেচনায় রয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক। পটুয়াখালী জেলায় প্রায় ৭০ হাজার জেলে সরাসরি মাছ ধরা পেশার সাথে জড়িত। এর বাইরেও মৎস্য শিল্পের সাথে কয়েক লাখ মানুষ কাজ করছে। সাগরে যে ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকবে এই সময়ে জেলে পরিবার গুলোর সংশার কিভাবে চলবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় তারা। যেহেতু অধিকাংশ জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের কোনো সুযোগ নেই সে কারণে অনেকেই হয়তো পেটের তাগিদে আইন অমান্য করে সাগরে মাছ শিকারে যেতে পারে। এ কারনে এই কর্মসূচির সফলতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। অপরদিকে নিষিদ্ধকালীন ভারত এবং মিয়ানমারের জেলেরা বাংলাদেশের সমুদ্রসীমানায় মাছ শিকার করবে বলে অভিযোগ কুয়াকাটার আলিপুর, মহিপুর মৎস্য বন্দরের জেলেদের। তারা বলছেন, বিগত বছরগুলোতে ইলিশের প্রজনন মৌসুমেও পাশ্ববর্তী দেশের জেলেরা বাংলাদেশের সমুদ্রসীমানায় ঢুকে অবাধে মাছ শিকার করেছে। আর এই নিষিদ্ধ এই সময়ে সাগরে বাংলাদেশি জেলে ট্রলার না থাকায় বহিরাগতদের উৎপাত আরও বাড়বে। কিন্তু পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী দাবি করেন, সমুদ্র উপকূলে নৌ বাহিনী এবং কোস্টগার্ডের পর্যাপ্ত নজরদারি নিশ্চিত করার বিষয়ে ইতোমধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কোনো অবস্থাতেই বিদেশি ট্রলার যাতে মাছ শিকার করতে না পারে সে জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলেদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় কিভাবে তাদের সহযোগিতা প্রদান করা যায় সে বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো কাজ করছে বলেও জানান তিনি।