নিষেধাজ্ঞার সময় সহায়তা বঞ্চিত ইলিশ অধু্যষিত নড়াইলের জেলেরা

প্রকাশ | ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

নড়াইল প্রতিনিধি
মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় নরসিংদীর নবগঙ্গা ও মধুমতী নদীর সংযোগস্থল মহাজন এলাকায় নোঙ্গর করে রাখা জেলে-নৌকা -যাযাদি
প্রায় ৪০ বছর ধরে নবগঙ্গা ও মধুমতী নদীতে মাছ ধরেন ইন্দ্রজিৎ বিশ্বাস। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে তার সংসার। মাছ ধরা ছাড়া অন্য কোনো কাজ করেন না তিনি। নেই চাষের জমিও। বর্তমানে ইলিশ মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা চলছে। তবে কোনো সরকারি সহায়তা পাননি তিনি। ফলে তার পরিবারকে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে। ইন্দ্রজিৎ বিশ্বাসের বাড়ি নড়াইলের কালিয়া উপজেলার নবগঙ্গা ও মধুমতী নদীর সংযোগস্থল মহাজন এলাকায়। তিনি বলেন, 'ইলিশ মাছ ধরা বন্ধ থাহায় জাল-দড়ি উঠায় থুইছি। হ্যান্নে আমি বেকার। আর কোনো আয় নাই। মাছ ধরে দিন আনি দিন খাই। হ্যান্নে ধার-কর্জ করে খাতি হচ্ছে। ছাওয়াল-মাইয়ের মুখি ঠিকমতো দুই মুঠ ভাত দিতি পারতিছিনে। আমরা খুব অসহায় হয়ে পড়িছি।' জাটকা সংরক্ষণ ও মা ইলিশ রক্ষায় ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন ইলিশ শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। এই ২২ দিনে সারাদেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহণ, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ ও মজুতকরণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং দন্ডনীয় অপরাধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এ সময় দিক বিবেচনা করে সরকার জেলেদের খাদ্যসহায়তা দিয়ে থাকে। কিন্তু নড়াইলের জেলেরা এ পর্যন্ত কোনো সহায়তা পাননি। নড়াইল জেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে ৩৮টি ইলিশ অধু্যষিত জেলা রয়েছে। এর মধ্যে নড়াইল একটি। ২০২২ সালে নড়াইলকে ইলিশ অধু্যষিত জেলা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়। মূলত নড়াইল জেলার লোহাগড়া ও কালিয়া উপজেলা এলাকায় নবগঙ্গা ও মধুমতী নদীতে এ মাছ মেলে। দুটি উপজেলায় ইলিশ আহরণে যুক্ত আছেন অন্তত ১ হাজার ৮৫০ জন জেলে। এর মধ্যে কালিয়ায় ১ হাজার ২০০ জন ও লোহাগড়ায় আছেন ৬৫০ জন। লোহাগড়ার কুন্দশী জেলে পাড়ার অরুণ মালোর ছয় সদস্যের সংসার। ইলিশ ধরা নিষেধাজ্ঞা থাকায় কষ্টে দিন যাচ্ছে তাদেরও। তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে খাল-বিলে যেসব পুঁটি মাছ পাচ্ছেন, তা গ্রামে গ্রামে বেচে যা পান তা দিয়ে তিন বেলার ভাত জোটে না। একই অবস্থার কথা বলেন কুন্দশী জেলে পাড়ার বিপস্নব বিশ্বাস, মন্টু বিশ্বাস, বিধান মালো, সঞ্জয় মালো, লক্ষ্ণণ মালো, শ্মশান মালো, সুনীল মালোসহ অন্য জেলেরা। লোহাগড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মাছুম খান জানান, নিষেধাজ্ঞার মধ্যে অনেকবার নদীতে অভিযান চালানো হয়েছে। এ সময় জাল-দড়ি পোড়ানো হয়েছে। কিন্তু জেলেরা বলেন, 'খাব কী' আসলেই এই জেলেরা খুব অসহায় ও হতদরিদ্র। তাদের সহায়তা দেওয়ার জন্যও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। একই কথা বলেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এইচ এম বদরুজ্জামান। তিনি বলেন, ২০২২ সালে নড়াইল ইলিশ অধু্যষিত জেলা হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। তবে ইলিশ আহরণ নিষেধাজ্ঞার সময়ে জেলেদের জন্য কোনো ধরনের সহায়তা আসেনি। ইলিশ আহরণে যুক্ত জেলেদের জন্য আর্থিক সহায়তা পেতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানো হয়েছে।