গাংনীতে ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে চাঁদাবাজ

একের পর এক বোমা রেখে হুমকি, জনমনে আতঙ্ক

প্রকাশ | ৩১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি
দীর্ঘদিন পর মেহেরপুরের গাংনী এলাকায় ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে চাঁদাবাজরা। এরা চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীদের বাড়িতে বোমা, কাফনের কাপড় ও জীবননাশের হুমকিসংবলিত চিরকুট রেখে হুমকি দিচ্ছে। চিরকুটে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য দিচ্ছে মোবাইল ফোন নম্বর। কোথাও কোথাও গোপনে ও প্রকাশ্যে চাঁদা চাওয়া হচ্ছে। পুলিশ আজও এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত ও আটক করতে পারেনি। তবে পুলিশ বলছে, বোমা রেখে যাওয়ার ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে সেই সঙ্গে পুলিশি টহলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। গাংনীর বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ জনগণের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, একসময়কার চরমপন্থি অধু্যষিত এলাকা হিসেবে বিশেষ পরিচিতি ছিল মেহেরপুরের গাংনীর। সে সময় চাঁদাবাজি, খুন, রাহাজানি ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। শ্রেণি শত্রম্ন খতম, চাঁদাবাজি ও এলাকা দখলের নিমিত্তে একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটেছে। পরে প্রশাসনিক তৎপরতায় সেটি বন্ধ হয়। অনেকেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে আত্মসমর্পণ করে। স্বাভাবিক হয় জনজীবন। সম্প্রতি আবারো শুরু হয়েছে সেই আগের চিত্র। একের পর এক বোমা, কাফনের কাপড়, আগরবাতি, সাবান ও জীবননাশের হুমকিসংবলিত চিরকুট রেখে যাচ্ছে ধনাঢ্য ব্যক্তি এবং ব্যবসায়ীর বাড়িতে। চাওয়া হচ্ছে চাঁদা। অনেকেই গোপনে তা পরিশোধ করছেন। সন্ধ্যার পরপরই বিভিন্ন স্থানে বোমা বিস্ফোরণের বিকট শব্দে আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন এলাকাবাসী। প্রাপ্ত তথ্যমতে, গেল দুই মাসে বেশ কয়েকটি বোমা রেখে চাঁদা দাবির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আলামত উদ্ধার করলেও আজও জড়িতদের শনাক্ত করতে পারেনি। এতে জনগণের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা অসন্তোষ। অনেকেই পুলিশের ভূমিকাকে দায়ি করেছেন। এলাকায় টহল না থাকায় এমনটি ঘটছে বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন। গত ৩০ আগস্ট রাতে চৌগাছার ওষুধ ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম মিঠুর বাড়ির গেটের সামনে থেকে এক টুকরা কাফনের কাপড়ের ও লাল স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো একটি বোমাসদৃশ বস্তু উদ্ধার করা হয়। ৩১ আগস্ট মিঠুর প্রতিবেশী বস্তা ব্যবসায়ী জয়নালের বাড়ির সামনে থেকে লাল স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো বোমাসদৃশ বস্তু ও হাতে লেখা একটি চিরকুট উদ্ধার করা হয়। চিরকুটে লেখা এক মাসের মধ্যে জয়নালকে হত্যা করা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়। গত ৩ অক্টোবর রাতে আকুবপুর নামক স্থানে সড়কে গাছ ফেলে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা শ্যামলী পরিবহণসহ বেশ কয়েকটি ট্রাক ও রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সে ডাকাতি করে। লুটে নেয় নগদ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার। ধারালো অস্ত্রাঘাতে আহত হয় শ্যামলী পরিবহণের চালক ও তার সহকারী। গত ২২ অক্টোবর সকালে উপজেলার কড়ুইগাছি গ্রামের শ্রমিক লীগ নেতা সুমন ইসলামের বাড়ি থেকে দুটি বোমাসদৃশ বস্তু ও লাশ দাফনের সরঞ্জামসহ প্রাণনাশের হুমকিসংবলিত চিরকুট উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় এলাঙ্গী ক্যাম্প পুলিশের একটি দল এগুলো উদ্ধার করে। ১৩ সেপ্টেম্বর সকালে গোপালনগর মোড়ে রাইপুর ইউনিয়ন বিএনপি সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলামের মুদি দোকানের পাশ থেকে বোমা ও কাফনের কাপড় উদ্ধার হয়। চিরকুটে রবিউলকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। সর্বশেষ গত ২৮ অক্টোবর সকালে চৌগাছা গ্রামের বস্তা ব্যবসায়ী জয়নালের বাড়ির মেইন গেটের সামনে থেকে দুটি বোমাসদৃশ বস্তু, কাফনের কাপড় এবং প্রাণনাশের হুমকিসংবলিত একটি চিরকুট উদ্ধার করে পুলিশ। চিরকুটে জয়নালকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে দুটি মোবাইল ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে চাঁদাবাজদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য। বেশ কয়েকজন গরু ব্যবসায়ী জানান, আগে সন্ধ্যার আগ থেকেই হাটের দিনে বিভিন্ন মাঠের রাস্তায় পুলিশ পাহারা দিত। মাস তিনেক ধরে পুলিশ আর ডিউটি করে না। তাই ছিনতাই-ডাকাতির ভয়ে তারা সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফেরেন। তাছাড়া বেপারিরা আর কেউ দূরের হাটে যান না। সন্ধ্যার পর থেকেই বোমা বিস্ফোরণের শব্দে এলাকা কেঁপে ওঠে। ভয়ে আর কেউ দেরি করে হাট থেকে ফেরে না। গাংনী থানার ওসি বানী ইসরাইল জানান, বোমা রেখে যাওয়া ও হুমকির ব্যাপারে গোপন তদন্ত করা হচ্ছে। শিগগিরই জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে। বিভিন্ন এলাকায় টহল জোরদার করা হচ্ছে।