নূর মোহাম্মদের নতুন ধান

প্রকাশ | ২১ মে ২০১৯, ০০:০০

আসাদুজ্জামান মিঠু, তানোর
কৃষক নূর মোহাম্মদের প্রদর্শনী ক্ষেতে ধান কর্তনের উদ্বোধন করেন তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম -যাযাদি
রাজশাহী থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে তানোর উপজেলার গোলস্নাপাড়া বাজারে প্রবেশের আগেই রাস্তার ডান পাশে তাকালে ধানের ক্ষেতের মধ্যে দেখা মিলবে ছোট ছোট নাম্বারিং করা অনেক সাইনবোর্ড। আরো কাছে গিয়ে দেখা যাবে বেগুনি, সোনালি, সবুজ, খয়েরী, মুড়িকালার, সাদাগুঠিসহ নানা প্রকারের ধানে ভরপুর ক্ষেত। তবে শুরুতেই যে কেউ দেখলে ভাববেন এটি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের কোনো প্রদর্শনী পস্নট। কিন্তু না। এটি গ্রামের প্রান্তিক কৃষক নূর মোহাম্মদের নিজস্ব ধান গবেষণার প্রদর্শনী পস্নট। এ পস্নটে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে প্রায় ২৭ জাতের ধান সঙ্করায়নের মাধ্যমে নতুন ধান উদ্ভাবন করেছেন তিনি। প্রান্তিক কৃষক নূর মোহাম্মদের শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো সনদ নেই, তবে তার আছে ধান নিয়ে নতুন নতুন উদ্ভাবন চিন্তা। সঙ্করায়ণ করে একের পর এক নতুন ধান উদ্ভাবন করছেন তিনি। স্বশিক্ষিত এই বিজ্ঞানীর কাজ আমলে নিয়েছেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরাও। ধানগুলো জাত হিসেবে স্বীকৃতির অপেক্ষায় রয়েছে। কৃষক নূর মোহাম্মদ ধান বিজ্ঞানী হিসেবেই উপাধি পেয়েছে অত্র বরেন্দ ্রঅঞ্চলে। এমনকি কৃষি সম্প্রাসারণ অফিসগুলোতেই তাকে বিজ্ঞানী নূর মোহাম্মদ নামেই চেনে। বাড়ি রাজশাহীর তানোর উপজেলার গোলস্নাপাড়া গ্রামে। দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। বরেন্দ্রভূমিতে প্রায় প্রতি বছরই খরায় নষ্ট হয়ে যায় ধান। সেই ধান রক্ষা করতেই কাজে লেগে যান তিনি। নিজের মাটির ঘরটাকে বানিয়ে ফেলেছেন হারানো ধানের গবেষণাগার। নতুন ধান ও প্রায় বিলুপ্ত ধান মিলে নূর মোহাম্মদের কাছে সংরক্ষণ করা আছে এমন ধানের জাতের সংখ্যা ২০০টি। সর্বশেষ তিনি একটি নতুন ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন। তার দাবি, দেশে প্রচলিত বোরো ধান বপন থেকে শুরু করে কাটা পর্যন্ত ১৪০ দিন লাগে। তার উদ্ভাবিত এই ধান বোরো মৌসুমে বপন থেকে ১৩০ দিনের মধ্যে কাটা যাবে। তিনি খরাসহিষ্ণু এই ধানের সারির নাম দিয়েছেন 'এনএমকেপি-১০৫'। এনএমকেপির অর্থ হচ্ছে 'নূর মোহাম্মদ কৃষি পরিষেবা'। প্রথম দিকে তিনি এনএমটি অর্থাৎ 'নূর মোহাম্মদ তানোর' নামে ধানের নামকরণ করতেন। নূর মোহাম্মদ জানান, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে তার এক একর জমিতে ২৭ জাতের ধান সঙ্করায়ণের মাধ্যমে উদ্ভাবন করেছেন। এগুলো এখন পাক ধরেছে। কিছু কর্তন শুরু হয়েছে। এসব ২৭ জাতের ধানের শুধু নম্বর পেস্নট দেয়া রয়েছে। ক্ষেতের এসব ধান কৃষি কর্মকর্তারা দেখে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন করবেন। কোন কোন জাতকে স্বীকৃতি দেয়া হবে। স্বীকৃতির পরেই ধান জাতগুলোর নাম ও কৃষকের মধ্যে বীজ বিতরণ করা হবে। সম্প্রতি তার প্রদর্শনী পস্নটের ক্ষেতের কৃষক নূর মোহাম্মদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে ধান কর্তনের উদ্বোধন করেছেন তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম।