পাঁচ জেলায় স্কুল ছাত্রীসহ ৫ জনকে হত্যা

তিন জেলায় আরও ৩ জনের অপমৃতু্য

প্রকাশ | ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

স্বদেশ ডেস্ক
পাঁচ জেলায় নানা ঘটনায় বৃদ্ধ ও স্কুলছাত্রীসহ ৫ জনকে হত্যা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে প্রেমের বিয়েকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে বৃদ্ধকে, যশোরে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে ব্যবসায়ী, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে ছুড়িকাঘাতে রংমিস্ত্রি, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে ডাকতের হাতে ব্যবসায়ী ও কুমিলস্নার মনোহরদীতে ঘরে ঢুকে স্কুলছাত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া নোয়াখালীর নিঝুম দ্বীপে বজ্রপাতে শিশুর, গাজীপুরের শ্রীপুরে কারখানার মাচা থেকে পড়ে শ্রমিকের ও কক্সবাজারে খালে পড়ে যুবকের মৃতু্য হয়েছে। আঞ্চলিক স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত- স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে প্রেমের বিয়েকে কেন্দ্র করে দুই দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষে সিদ্দিক মোলস্না (৮০) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। গত সোমবার গভীররাতে উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সিদ্দিক মোলস্না সোনাতলা গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বারের ছেলে। এ ঘটনায় আবদুন নূর (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন আহত হন। জানা যায়, গোয়ালনগর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও সোনাতলা গ্রামের বাসিন্দা সালাম মিয়ার মেয়ে শাহিনুর বেগমের সঙ্গে একই গ্রামের সাইফুল মিয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত বছর তারা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন। কিন্তু শাহিনুরের বাবা সালাম মিয়া বিয়ে মেনে নেননি। বিয়ের কয়েকমাস পর পরিবারের চাপে সাইফুলকে ডিভোর্স দেন শাহিনুর। গত ২৫ অক্টোবর রাতে সালাম গ্রামের একটি শালিস শেষে বাড়ি যাওয়ার পথে তাকে মারধর করেন সাইফুল ও তার পক্ষের লোকজন। এ ঘটনায় গত ২৬ অক্টোবর সালাম নাসিরনগর থানায় মামলা করেন। গত সোমবার রাত ২টায় আসামিদের গ্রেপ্তার করতে যায় পুলিশ। এ সময় পুলিশের উপস্থিতিতে টের পেয়ে দুইপক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। উভয়পক্ষের সংঘর্ষে সাইফুলের দাদা বৃদ্ধ সিদ্দিক মোলস্নাসহ উভয়পক্ষের কমপক্ষে ২০ জন আহত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে আনলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের বলেন, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছেন। এ ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। স্টাফ রিপোর্টার, যশোর জানান, যশোর শহরতলী খোলাডাঙ্গা এলাকায় সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে এক ব্যবসায়ী খুন হয়েছেন। নিহত স্যানিটারি ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম সজল (৪৪) ওই এলাকার আজিজুল ইসলাম মিন্টু মুন্সির ছেলে। সোমবার সন্ধ্যায় এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। সজল স্থানীয় গাজীর বাজার ইউনিট জামায়াতের সভাপতি ছিলেন। জানা যায়, সজলের খোলাডাঙ্গা এলাকায় একটি স্যানিটারি দোকান রয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় তিনি বাড়ি ফেরার পথে একদল সন্ত্রাসী তাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে এলে ডাক্তার সজলকে মৃত ঘোষণা করেন। যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান, হত্যাকান্ডের খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরিবারের পক্ষে জানানো হয়েছে, জমি নিয়ে বিরোধে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। পুলিশ তদন্ত করছে। গোপালগঞ্জ ও কাশিয়ানী প্রতিনিধি জানান, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে কুদ্দুস সেখ (৬৫) নামে এক রংমিস্ত্রিকে কুপিয়ে হত্যা করছে দুর্বৃত্তরা। মঙ্গলবার ফজরের নামাজের আগে বা পরে রাজপাট দক্ষিণপাড়া গ্রামে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। কাশিয়ানী থানার ওসি শফি উদ্দিন খান জানান, ভোরে ফজরের নামাজ পড়তে বাড়ি থেকে বের হন রংমিস্ত্রি কুদ্দুস সেখ। এসময় তাকে দুর্বৃত্তরা ছুরি দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে পালিয়ে যায়। পরে পরিবারের লোকজন টের পেয়ে আহত রংমিস্ত্রিকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ ২৫০-শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওসি আরও জানান, নিহতের মেয়ে কয়েক মাস আগে তার স্বামী রফিকুল সরদারের নামে মামলা করেছিলেন। এ ঘটনায় জামাই তাকে হত্যা করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। নিহত রংমিস্ত্রি কুদ্দুস সেখ রাজপাট দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত হাসেম সেখের ছেলে। ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে হামিদুল ইসলাম আলে (২৮) নামে এক ব্যবসায়ীকে বেঁধে শারীরিক নির্যাতনে হত্যার পর বাড়ি ডাকাতি করেছে একদল ডাকাত। ঘটনটি ঘটেছে সোমবার দিনগত গভীর রাতে উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের নগরাজপুর গ্রামে। পুলিশ খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুড়িগ্রাম মর্গে পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় আপাতত থানায় একটি ইউডি মামলা হয়েছে। জানা গেছে, ওই নগরাজপুর গ্রামের শফি ব্যাপারীর ছেলে সুপারি ব্যবসায়ী হামিদুল ইসলাম আলের নগরাজপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন বাড়িতে রাতে ডাকাতরা বাড়ির ব্যবহৃত পানিতে চেতনানাশক মিশিয়ে দেয়। এতে পরিবারের সবাই অচেতন হয়ে ঘুমিয়ে পড়লে ডাকাত দল হামিদুলের শয়নঘরে ঢোকে। এরপর তাকে বেঁধে শারীরিক নির্যাতন চালায়। নির্যাতনে হামিদুল মারা গেলে স্বর্ণ ও টাকা ডাকাতি করে নিয়ে যায়। পরে এলাকাবাসী থানায় খবর দিলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ফুলবাড়ী থানার নবাগত ওসি ছানোয়ার হোসেন। মনোহরদী (নরসিংদী) প্রতিনিধি জানান, নরসিংদীর মনোহরদীতে ঘরে প্রবেশ করে আনিকা (১৫) নামে এক শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় ভাগনিকে বাঁচাতে গিয়ে ধারাল অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন খালা পাপিয়া সুলতানা (৪৯)। সোমবার বিকালে মনোহরদী পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আনিকা বেলাব উপজেলার পাটুলী ইউনিয়নের পোড়াদিয়া গ্রামের মৃত শাহজাদা নূর আলমের মেয়ে। সে মনোহরদী কৃষ্ণপুর টেক্সাইল ভোকেশনাল উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। আর খালা পাপিয়া সুলতানা মনোহরদী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মৃত আবদুস ছাত্তারের স্ত্রী। তিনি আনিকার স্কুলে শিক্ষকতা করেন। স্থানীয়রা জানায়, পাপিয়ার সন্তানরা কেউই বাড়িতে থাকে না। তিনি বোনের মেয়ে আনিকাকে নিয়ে বসবাস করতেন। সোমবার বিকালে চিৎকারের শব্দ শুনতে পেয়ে আশপাশের লোকজন বাড়িতে গিয়ে ঘরের ভেতরে রক্তাক্ত অবস্থায় আনিকাকে মৃত ও খালা পাপিয়াকে গুরুতর আহত অবস্থায় দেখতে পায়। পরে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক ঢাকায় পাঠান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে হত্যার কাজে ব্যবহৃত চাপাতি উদ্ধার করে। মনোহরদী থানার ওসি জুয়েল হোসেন বলেন, ধারাল অস্ত্র দিয়ে শিক্ষার্থীকে হত্যা করা হয়েছে। তার শরীরে বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। আমরা ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করছি। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে। স্টাফ রিপোর্টার, নোয়াখালী জানান, নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার নিঝুম দ্বীপে বজ্রপাতে এক শিশুর মৃতু্য হয়েছে। মঙ্গলবার নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বাচল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সুমি আক্তার (১০) নামে ওই গ্রামের মো. ইউসুফের মেয়ে। স্থানীয় গ্রামপুলিশ আলাউদ্দিন জানান, সকাল ১১টা থেকে নিঝুম দ্বীপে বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাত শুরু হয়। এ সময় ঘরের পাশে থাকা শুকনো লাকড়ি রান্নাঘরে নিতে বের হয় সুমি। বজ্রপাত থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য একটি গাছের নিচে আশ্রয় নেয় শিশুটি। কিন্তু গাছটির ওপরই বজ্রপাত হয়। এতে গাছটির বাঁকল ছিঁড়ে শিশুটি ঘটনাস্থলেই মারা যায়। শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরের শ্রীপুরে নির্মাণাধীন একটি কারখানার মাচা থেকে পড়ে রিফাত হোসেন নামে এক শ্রমিকের মৃতু্য হয়েছে। মঙ্গলবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃতু্য হয়। এর আগে একইদিন সকাল ১০টায় দুর্ঘটনাকবলিত হন তিনি। নিহত রিফাত হোসেন (২৬) ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার গোয়ারী বাজার গ্রামের সোহরাব আলীর ছেলে। তিনি শ্রীপুরের নয়নপুর এলাকার আরএকে সিরামিক কারখানায় নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলেন। কারখানা সূত্র জানায়, সেখানে একটি বিল্ডিং নির্মাণের কাজ চলছিল। কাজের জন্য বিল্ডিংয়ের প্রায় ২০ ফুট উঁচুতে মাচা তৈরি করা হয়। সকালে হঠাৎ ওই মাচা থেকে নিচে পড়ে যান রিফাত। তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃতু্য হয়। কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, কক্সবাজারের একটি পাহাড়ি খাল থেকে মো. হেলাল (২৮) নামে এক যুবকের মরহেদ উদ্ধার করা হয়েছে। গত সোমবার গভীর রাতে ঈদগাঁওয়ে এ মরদেহ দেখতে পাওয়া যায়। হেলাল উপজেলার ঈদগাঁও ইউনিয়নের ভূতিয়া পাড়ার গুরা মিয়ার ছেলে। নিহতের ভাতিজা শফিক আহমদ জানান, তার চাচা হেলাল প্রতিদিনের মতো সোমবার বিকালে ইউনিয়নের কালিরছড়ার পেচার জুমের পাহাড়ি খালে মাছ ধরতে যান। রাতে না ফেরায় খোঁজাখুঁজি করেন স্বজনরা। পরে লোক মারফত জানতে পারেন ওই খালে পানিতে কিছুটা ডোবা অবস্থায় কি যেন ভাসছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিখোঁজ হেলালের লাশ উদ্ধার করে।