সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স নিজেই রোগী!

প্রকাশ | ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

খোরশেদ আলম, সোনাইমুড়ী (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে ডাক্তার অনুপস্থিত হয়ে বহিরাগত লোকজন দিয়ে চিকিৎসাসেবা দেওয়া। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় অতিরিক্ত টাকা গ্রহণসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ হাসপাতালটি এখন নিজেই রোগী। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। টিকিট নিয়ে দেড়-দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করেও চিকিৎসকের দেখা মিলছে না। জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স ডাক্তার নার্স যেন সোনার হরিণ হয়ে পড়েছে। একবার দেখা মিললেও আবার কখন দেখা হবে জানেন না এখানকার রোগীরা। ৫০ শয্যাবিশিষ্ট এ স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সটি। ঢাকা-নোয়াখালী মহাসড়কের হওয়ায় প্রতিদিন শত শত রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসে এখানকার স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সটিতে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অবহেলায় দালালদের সিন্ডিকেটের কারণে চরম বিপাকে পড়ছেন সাধারণ রোগীরা। এ হাসপাতালে প্রতিনিয়ত মেডিক্যাল অফিসার ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা ঠিকমতো আসেন না। হাসপাতালের এএনসি কর্নার (ডেলিভারিসেবা কেন্দ্র) বিভাগের মধ্যে অনিয়মের শেষ নেই। হাসপাতালের দাত্রী (মিড ওয়াইফ) ডেলিভারি করিয়ে প্রতি রোগীর কাছ থেকে ২-৩ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে চলে যায়। রোগীর স্বজনরা এ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেননি। সহযোগিতা করেন হাসপাতালের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার ইসরাত জাহান। ডাক্তার গোলাম আযম হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার। তবে তিনি রোগীদের এনেসথেসিয়া দিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। জরুরি বিভাগে রোগী ভর্তি হতে ১০ টাকা ফ্রি'র স্থানে ৫০ টাকা নিয়ে চলে যান কর্তব্যরত স্টাফরা। চিকিৎসা নিতে ৫ টাকা ফ্রি'র জায়গায় নিয়ে যান ২০ টাকা। বহিরাগত ইন্টার্নি ডাক্তাররা ও পিয়নরা জরুরি বিভাগে সার্জিক্যাল কাজ করে। তারা রোগীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়ে যান অনেক টাকা। জরুরি বিভাগে বিষ খাওয়া রোগী এলে সেখানে নিয়ে যায় ৩-৪ হাজার টাকা। শুধু তাই নয়, চুক্তিতে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের। হাসপাতালে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সরকারি ফ্রি চেয়ে বসেন ৪-৫ গুণ বেশি টাকা। হাসপাতালের খাবারের এমন অনিয়মের কারণে চিকিৎসা নিতে আসা শাহজাহান বললেন, আমি হামলায় শিকার হয়ে দুই দিন যাবৎ হাসপাতলে আছি। এখানকার খাবার সবচেয়ে বেশি নিম্নমানের। খাবারে তেল মসলা কিছুই দেওয়া হয় না। খাবারগুলো সিদ্ধ করে নিয়ে আসে। এখানকার স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সটির পরিবেশ অত্যন্ত নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে ভর্তিকৃত কয়েকজন রোগী অভিযোগ করে জানান, নার্সদের দুর্ব্যবহার নিত্যদিনের ঘটনা। হাসপাতালে ইনজেকশন দিতে নার্সদের দিতে হয় ১০০-২০০ টাকা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, উপজেলা স্বাস্থ্য স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে ডাক্তারদের কক্ষে সকাল ১০টা থেকে বিকাল পর্যন্ত। বৈদু্যতিক সবগুলো বাতি জ্বলে ও ফ্যানও চলে কিন্তু ডাক্তার থাকেন না। টিকা কেন্দ্রে মনুসাহা নামে এক কর্মচারী গর্ভবতী মহিলা রোগীদের কাছ থেকে ২০০-৩০০ টাকা করে নেন বলে জানান এখানে আসা রোগীরা। এ প্রসঙ্গে কথা হলে সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের আর এম ও ডাক্তার রিয়াজ উদ্দিন বলেন, হাসপাতালের কিছু অনিয়ম রয়েছে এটা সত্য। বিষয়টি আমরা সংশোধনের চেষ্টা চালাচ্ছি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার ইসরাত জাহান বলেন, তিনি এই হাসপাতালে যোগদান করার পর সেবায় উন্নতি হয়েছে। তবে কোনো অনিয়ম থাকলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান এমনটি। জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার ইফতেখার মাসুম বলেন, হাসপাতালের কয়েকটি অভিযোগ তিনি নির্ণয় করে ব্যবস্থা নিয়েছেন। এরপরও তিনি সরেজমিন গিয়ে ব্যবস্থা নেবেন।