আদালত না থাকায় বছরের পর বছর ধরে ভোগান্তিতে বিচারপ্রার্থীরা
প্রকাশ | ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি
রবগুনার বেতাগীতে উপজেলা আদালত না থাকায় এলাকার মানুষদের নানা সংকট ও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। ফলে বিচার প্রার্থীদের জেলা সদরে যাওয়া-আসা, খাওয়া ও উকিলের পাওনা মেটাতে হিমশিম খেতে হয়।
বরগুনা মহাকুমা থাকাকালীন ১৯৬৯ সালে বেতাগী থানা আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে এরশাদ সরকারের আমলে উপজেলা প্রতিষ্ঠার সুবাদে বেতাগীতে থানা আদালত স্থাপিত হয়। বিএনপি সরকারের সময় ১৯৯২ সালে বেতাগী থেকে আদালত জেলা সদরে স্থানান্তর করা হয়।
আদালতের দাবিতে বিভিন্ন সময় ম্যাস লাইন মিডিয়া সেন্টার (এমএমসি)'র নেটওয়ার্কিং সেমিনার এবং আদালত বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটি ও উপজেলা মানবাধিকার জোট ১ কিলোমিটার পথজুড়ে পালন করে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। আইন বিচার ও সংস্থাপন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। সর্বশেষ '২০১৭ সালের ২০ মে স্থানীয় সরকার,পলস্নী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল মালেকের নিকট এক সমাবেশে বেতাগী পৌরসভার পক্ষ থেকে একই দাবি তোলা হয়।
তাছাড়াও অনেক লেখালেখি ও এলাকাবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আশ্বাস দিলেও অদ্যবধি কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
জানা গেছে, এ উপজেলার ১টি পৌরসভাসহ ৭টি ইউনিয়নের ৭১টি গ্রামে দুই লাখের বেশি মানুষের বসবাস। বরগুনা জেলা সদর থেকে ৪৫ কিমি দূরে বেতাগী উপজেলার অবস্থান। যোগযোগ ব্যবস্থার দিক দিয়েও ব্যয় বহুল ও পিছিয়ে। তাছাড়া সদরে স্থানান্তরিত বেতাগী থানা আদালতের বিশৃঙ্খল অবস্থা। বিচারক, অ্যাডভোকেট, আদালত কর্মকর্তা- কর্মচারীদের বসার সুব্যবস্থা নেই। আসামি ও বহিরাগতদের দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আসামিদের জবানবন্দির গোপনীয়তা রক্ষা করা সম্ভব হয় না। আদালত কার্যালয়ে প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই।
স্থানীয়রা জানান, বিবিচিনি ইউনিয়নের দেশান্তরকাঠী গ্রামের ভুক্তভোগী হারুন-অর-রশীদ। এখানে আদালত বিদ্যমান থাকলে উপজেলা সদরের নিকটবর্তী লোকেরা বাড়িতে বসেই মামলা পরিচালনা করতে পারত। সদর থেকে যারা একটু দুরবর্তী তারা সকাল সকাল কাজ সেরে বাড়ি ফিরতে পারত। মামলায় কম টাকা ব্যয় হতো। তাছাড়াও প্রশাসনিক জটিলতায় মামলার কার্যক্রম বিলম্বিত হয়। প্রয়োজনীয় সাক্ষী সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না।
বরগুনা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান জানান, প্রশাসনিক জটিলতায় মামলার কার্যক্রমে বিলম্বিত হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সাক্ষী সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। জনগণ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বরগুনায় জেলা সদরে বেতাগী থানা আদালতে কর্মরত অ্যাডভোকেট বিমান কান্তি গুহ বলেন, 'এখান থেকে যে কারণে আদালত স্থানান্তর করা হয়েছে তার কোনো যৌক্তিকতা নেই। দেশের অন্যান্য উপজেলায় আদালত আছে। জনস্বার্থে এ উপজেলা আদালত পুনঃস্থাপনের দাবি স্থানীয়দের।'
বেতাগী পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র হুমায়ূন কবির মলিস্নক বলেন, 'মানুষের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি লাঘবে জেলা সদর থেকে যাতে দ্রম্নত বেতাগীতে আদালত স্থানান্তর করা হয় তা পুনর্বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আমরা তাকিয়ে আছি।'
বেতাগী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাজাহান কবির বলেন, 'থানা আদালত পুনঃস্থাপনে সরকারের যে নীতিমালা রয়েছে তার সবই এখানে বিদ্যমান রয়েছে।'
উপজেলা নির্বাহী অফিসার বশির গাজী বলেন, 'এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের হাতে কিছু নেই।'