গোবিন্দগঞ্জে কাঁঠালপাতা কেনাবেচা করেই চলে সাহেব মিয়ার সংসার

প্রকাশ | ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
গৃহপালিত পশুর মধ্যে ছাগল একটি অন্যতম পশু। অল্প সময়ে অধিক দামে বিক্রির উপযুক্ত হওয়া এই ছাগলের প্রিয় ও উপাদেয় খাদ্য কাঁঠালপাতা। গ্রামাঞ্চলে একসময় একদম বিনা পয়সাতেই পাওয়া যেত এই কাঁঠালপাতা। নিজের হোক বা প্রতিবেশীর হোক, যেকোনো কাঁঠাল গাছ থেকে ইচ্ছেমতো পেরে নেওয়া যেত কাঁঠালপাতা। বাড়ির পালিত দু-একটি ছাগলের খাবারের জন্য এভাবেই সংগ্রহ করা হতো কাঁঠালপাতা। কিন্তু বর্তমানে এভাবে আর কাঁঠালপাতা সংগ্রহ করা যায় না। ছাগল পালনে সচেতনতা বাড়ায় ছাগলের খাদ্য হিসেবে এখন ব্যাপক চাহিদা এই কাঁঠালপাতার। তাই স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে এর দামও। এ কারণে এখন বাজার তৈরি হয়েছে কাঁঠালপাতারও। সময়ের প্রয়োজনে তাই কাঁঠালপাতা বেচাকেনা করাও এখন একটি পেশা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এমনই এক পেশাদার কাঁঠালপাতার কারবারি গোবিন্দগঞ্জের সাহেব মিয়া। একদা নিজের পালিত দুই-একটি ছাগলের খাবার হিসেবে নিজের গাছের পাশাপাশি পাড়া-প্রতিবেশীর গাছ থেকে কাঁঠালপাতা সংগ্রহ করতে করতে বর্তমানে তিনি একজন পরিচিত ও দায়িত্বশীল কাঁঠালপাতা সরবরাহকারী। কাঁঠালপাতা বেচাকেনা করেই চলে তার সংসার। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট খামারের পাশাপাশি বাড়িতেই দু-একটি করে ছাগল পালন করায় কাঁঠালপাতার চাহিদাও বেশ বেড়ে গেছে বর্তমানে। উপজেলার কোচাশহর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের ৩৫ বছর বয়সি সাহেব মিয়া তাই প্রতিদিন সকাল হলেই বের হন কাঁঠালপাতার খোঁজে। তারপর আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের গৃহস্থের কাঁঠালগাছ থেকে কেটে নেন কাঁঠালপাতাসহ ছোট ছোট ডাল। গাছের বা ফলের ক্ষতি না করে খুব সাবধানতার সঙ্গে পাতাসহ এসব ডাল কাটেন তিনি। নিজের মালিকানাধীন একটি রিকশাভ্যান নিজেই চালিয়ে বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে এ পাতা সংগ্রহ করেন তিনি। আবার পাতাসহ ভ্যান বাজারের পথে নেওয়ার সময় বিক্রিও হয়ে যায় অধিকাংশ কাঁঠালপাতা। গ্রাম এলাকায় অধিকাংশ বাড়িতে এবং কিছু কিছু খামারে পালিত ছাগল বিশেষ করে খাসির মালিকরা তার কাঁঠালপাতার নিয়মিত গ্রাহক। প্রতিদিন বিকালে কোচাশহর বাজারের নির্দিষ্ট যায়গায় বিক্রি করেন তিনি কাঁঠালপাতা। প্রতিদিন তিনি কাঁঠালপাতার বেচাকেনা করেই আয় করেন সাত-আটশ' থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত। সাহেব মিয়া জানান, প্রতিভ্যান কাঁঠালপাতা কিনতে গাছভেদে মালিককে দিতে হয় পাঁচশ' থেকে দুই হাজার টাকা। তারপর ১০ থেকে ১৫টি ছোট ছোট ডালের সমন্বয়ে বাঁধতে হয় পাতার আঁটি। কাঁঠালপাতার এমন প্রতিটি আঁটি ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি করা হয়। তিনি সাধারণত কোচাশহর ও মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম থেকে ছোট ছোট কাঁঠালপাতার শাখা সংগ্রহ করেন। নিজেই গাছে উঠে ডালসহ পাতা কেটে নিচে নামিয়ে আঁটি বেঁধে বিক্রির পর ভ্যান প্রতি দেড়-দুইশ' টাকা মুনাফা থাকে। এ ছাড়া আসবাবপত্রের কাঠ বা জ্বালানির জন্য গাছ কিনে নেওয়া বেপারিরা তার কাছে পাতা বিক্রি করেন নিয়মিত। প্রতিদিন এভাবে তিন থেকে ছয় ভ্যান কাঁঠালপাতা বিক্রি করা যায়। কোচাশহর ইউনিয়নের বনগ্রাম এলাকার গৃহস্থ আবুল হোসেন জানালেন, প্রতি বছর আমার বাড়িতে তিন-চারটি খাসি পালন করা হয়। খাসির জন্য উপাদেয় খাদ্য এই কাঁঠালপাতা। আর সাহেব মিয়া আমার এবং অনেকেরই নির্ভরযোগ্য কাঁঠালপাতা সরবরাহকারী। আমরা প্রতিদিনই তার কাঁঠালপাতার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকি। উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের জগদীশপুর গ্রামের কাঁঠালগাছ মালিক আব্দুল মালেক জানান, গাছের কোনো ক্ষতি না করে খুব যত্নসহকারে পাতা কেটে নেন সাহেব মিয়া। এতে কিছু টাকা বাড়তি আয়ের পাশাপাশি গাছেরও উপকার হয়। একই এলাকার কাঠ ব্যবসায়ী আফজাল ও মতিন মিয়া বলেন, আমাদের কেনা কাঁঠালগাছ কাটার আগেই সাহেব মিয়াকে খবর দিই। সে উপযুক্ত মূল্যে পাতাগুলো কেটে নেয়। এতে আমাদের গাছের কাঠের দাম কিছুটা কমে যায়। স্ত্রী ও পুত্র নিয়ে ছোট্ট সংসারের মালিক সাহেব মিয়া বলেন, যেকোনো ব্যবসা সৎভাবে ও নিষ্ঠার সঙ্গে করলে তাতে উন্নতি আসবেই। অন্য ব্যবসার মৌসুম থাকলেও কাঁঠাল পাতার ব্যবসার কোনো মৌসুম নেই। সারা বছর সমান চাহিদা থাকায় কাঁঠালপাতার ব্যবসা আমাকে নিয়মিত দু'মুঠো ভাতের সংস্থান দিয়েছে।