মেহেরপুরে আগাম পেঁয়াজ উত্তোলনে ব্যস্ত চাষিরা -যাযাদি
পেঁয়াজের ঘাটতি কমাতে মেহেরপুর জেলায় চলতি বছর তিন হাজার জন কৃষককে গ্রীষ্মকালীন (নাসিক জাতের) পেঁয়াজ চাষের জন্য সরকারিভাবে বিনামূল্যে বীজসহ নানা উপকরণ প্রণোদনা দেওয়া হয়। এছাড়া কৃষকরা নিজ উদ্যোগেও ৪ হাজার ৫শ' বিঘা জমিতে এই পেঁয়াজের চাষ করেছেন। সব মিলিয়ে জেলায় প্রায় আড়াই হাজার একর জমিতে চলতি বছর নাসিক জাতের পেঁয়াজ হয়েছে। এই পেঁয়াজ গত ২৫ নভেম্বর থেকে উত্তোলন শুরু করেছেন কৃষক। আগাম পেঁয়াজ উঠানোয় ফলন কম পেলেও দামে পুষিয়ে নিতে পারছেন চাষিরা। পরে উঠালে ফলন বেশি হতো। তবে দাম কমে যাওয়ার শঙ্কায় এখনই উঠিয়ে বাজারজাত করছেন চাষিরা।
বর্তমানে পেঁয়াজ পরিপুষ্ট না হওয়ায় বিঘাপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ মণ ফলন হচ্ছে। এই পেঁয়াজ আর ২০ থেকে ২৫ দিন পরে উঠালে ১শ' থেকে ১শ' ২০ মণ ফলন পাওয়া যাবে বলে জানায় কৃষি বিভাগ।
তবে কৃষকরা জানান, পরে উঠালে বর্তমানের এই দাম আর পাওয়া যাবে না। তাই আগেই পেঁয়াজ উঠানো শুরু করেছেন তারা। পরে উঠালে ওই সময় পেঁয়াজের দাম কমে যাবে। ফলে লাভ সেই একই সমান হবে। তাই ঝুঁকি না নিয়ে এখনই পেঁয়াজ উত্তোলন শুরু করেছেন মেহেরপুরের কৃষকরা। তার ওপরে এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ খুবই বেশি। বেশি ফলন পাওয়ার আশায় ঝুঁকি নিয়ে জমিতে পেঁয়াজ রাখতে চাইছেন না তারা। বর্তমানে উৎপাদিত কাঁচা পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে।
সদর উপজেলার কুলবাড়িয়া গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, 'আমার দুই বিঘা জমিতে সরকারের দেওয়া সহযোগিতায় সার, বীজ, নগদ টাকা দিয়ে পেঁয়াজ চাষ করেছি। গত বৃহস্পতিবার ১০ কাঠা জমির পেঁয়াজ উঠিয়েছি। ৩৮ মণ পেঁয়াজ হয়েছে।'
একই গ্রামের সামছুল গাইন বলেন, 'আমি এ বছর ৪ বিঘা জমিতে সরকারের দেওয়া প্রণোদনার বীজে পেঁয়াজ চাষ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এক বিঘা জমির বীজ পেয়েছি। আরও ১ বিঘা জমির বীজ ক্রয় করে চাষ করেছি। ফলন খুব ভালো হয়েছে।'
গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের কৃষক রানা হামিদ বলেন, 'মেহেরপুরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ কম, আবহাওয়া পেঁয়াজ চাষের উপযোগী হওয়ায় গ্রীষ্মকালীন এই পেঁয়াজ চাষ সম্ভব হচ্ছে।'
মেহেরপুর কাঁচা বাজারের আড়তদার মিজানুর রহমান বলেন, 'কয়েকদিন ধরে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ কৃষকরা আড়তে নিয়ে আসছেন। কাঁচা পেঁয়াজ ৬৫-৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে দিচ্ছি। বর্তমানের দাম থাকলে কৃষকের খুব ভালো লাভ হবে।'
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মেহেরপুরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, 'মেহেরপুরে কৃষি বিভাগ ৩ হাজার কৃষককে ৩ হাজার বিঘা জমির জন্য পেঁয়াজের বীজ, সার ও নগদ টাকা প্রণোদনা দিয়েছে। এছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগে প্রায় সাড়ে চার হাজার বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন (নাসিক জাতের) পেঁয়াজ চাষ করেছে। এখন পেঁয়াজের দাম ভালো। তাই কৃষকরা পেঁয়াজ পাকার আগেই উঠিয়ে বিক্রি করা শুরু করেছে।'