চাকরি হারানো হরেনকে ২০ লাখ টাকা দিতে সোনালী ব্যাংককে নির্দেশ

প্রকাশ | ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
৪০ বছর ধরে সোনালী ব্যাংকের ভুয়া মামলায় আইনি লড়াই করে অবশেষে জয়ী হয়েছেন বৃদ্ধ হরেন চন্দ্র নাথ। ফলে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ আপিল বিভাগে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। তাই আদালত হরেনকে মামলা পরিচালনার খরচ হিসাবে ২০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিন মাসের মধ্যে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে এই টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। সোমবার আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ এই রায় দেন। আদালতে হরেনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার ওমর ফারুক। মামলার নথি থেকে জানা যায়, কুষ্টিয়ার খোকসার হেলালপুর গ্রামের বাসিন্দা হরেন চন্দ্র নাথ। জীবনের অর্ধেক সময় ৪০ বছর কাটিয়েছেন আদালতের বারান্দায়। ৪০ বছর আগে ব্যাংকের ১৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে হরেনসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে। তবে মামলায় খালাস পেলেও সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপিল করে মামলাটি জিইয়ে রাখে। এভাবে চার দশক কেটে গেলেও আদালতে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি। বিএ পাস করে ১৯৭৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর ক্যাশিয়ার-কাম ক্লার্ক পদে সোনালী ব্যাংকে ঢাকার একটি শাখায় যোগদান করেন। তিন বছর পর পদোন্নতি পেয়ে সিনিয়র ক্যাশিয়ার-কাম ক্লার্ক হন। এরপর তাকে যাত্রাবাড়ী শাখায় বদলি করা হয়। চাকরিরত অবস্থায় রেমিট্যান্স-সংক্রান্ত ১৬ লাখ ১৬ হাজার ১০০ টাকা যাত্রাবাড়ী শাখা থেকে লোকাল অফিসে স্থানান্তর করা হয়। সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তা সিল-স্বাক্ষরসহ লিখিতভাবে সমুদয় অর্থ বুঝে নেন। এর কিছুদিন পর ১৯৮৫ সালে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ তদন্তে ওই টাকা পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। তহবিল তছরুপের অভিযোগে ১৯৮৫ সালের শেষের দিকে হরেন চন্দ্রসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। পরে ১৯৮৬ সালের মার্চ মাসে তাদের সবাইকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এরপর গ্রাহকের টাকা জমা না দেওয়ায় অপর একটি মামলায় ১৯৮৬ সালের ফেব্রম্নয়ারিতে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে স্থাপিত ওই কর্মকর্তাকে সাত বছর কারাদন্ড দেন আদালত। পাশাপাশি অন্যদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেওয়া হয়। ১৯৯০ সালে হরেন জেল খেটে বের হন। এর আগে ১৯৮৫ সালের ২৯ জুলাই হরেন চন্দ্র নাথসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ঢাকার বিশেষ আদালতে ফৌজদারি মামলা করে তৎকালীন দুর্নীতি দমন বু্যরো। বিচারে ১৯৮৬ সালের ১৫ নভেম্বর বেকসুর খালাস পান হরেন চন্দ্র নাথসহ সবাই। মামলায় পরাজিত হয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গোপনে ১৯৮৮ সালে হরেনসহ সবার বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে মামলা করে। সেই মামলায় একতরফা রায়ে তাদের দোষী সাব্যস্ত করে সমুদয় অর্থ ফেরত দেওয়ার আদেশ দেন আদালত।